-->
শিরোনাম

সেতু ভেঙে ১০ গ্রামের মানুষের ভোগান্তি

মীর বাবুল, ময়মনসিংহ
সেতু ভেঙে ১০ গ্রামের মানুষের ভোগান্তি
ঝুঁকি নিয়ে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের ভেলায় চড়ে নদী পার

কলাগাছের ভেলায় চড়ে নদীর পাড়ে এসে ওঠে খাদিজাতুল কুবরা ইলামণি। কাঁধে স্কুলব্যাগ। হাঁসফাঁস করতে করতে বলে, ‘খুব ভয় হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল এই বুঝি নদীতে পড়ে গেলাম! আমি সাঁতারও জানি না। নদীতে অনেক পানি এবং স্রোত, এ জন্য আরও বেশি ভয় হচ্ছিল’। সোহাগী ইউনিয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ইলামণি।

একই বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস উপমা বলে, ‘সেতুটি ভেঙে পড়ায় আমাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আসার সময় ১০ টাকা ভাড়া দিয়ে কলাগাছের ভেলায় চড়ে নদী পার হয়েছি। মাঝ নদীতে এসে কলাগাছের ভেলা যেভাবে দোল খাচ্ছিল, মনে হচ্ছিল এই বুঝি পড়ে গেলাম। পড়ে গেলে কাপড়চোপড়, বইপত্রসহ সবকিছুই তো নষ্ট হতো। সরকারের কাছে আমাদের আবেদন, ব্রিজটি যেন দ্রুত মেরামত করে দেয়।’

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে কাঁচামাটিয়া নদীর ওপর নির্মিত একটি ফুট ব্রিজের কিছু অংশ ভেঙে পড়েছে নদীতে। এতে দুর্ভোগে পড়েছে সেতু দিয়ে চলাচল করা চারটি ইউনিয়নের ১০ গ্রামের বাসিন্দাসহ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার বিকেলে সেতুটি ভেঙে পড়ে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেতুটির একাংশ ভেঙে নদীতে পড়ে আছে। তাই বাধ্য হয়েই নদীর ওপারের বাসিন্দাসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা কলাগাছের ভেলা দিয়ে নদী পারাপার হচ্ছে।

স্থানীয়দের দাবি, ব্রিজ ভেঙে পড়ায় চলাচলের বিকল্প উপায় নেই, যে কারণে ভেলা দিয়ে নদী পারাপার হচ্ছে তাঁরা। এতে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কাও আছে।

ঢট্টি গ্রামের ষাটোর্ধ্ব আবুল ফজল বলেন, ‘ঘরে বাজার-সদাই নাই, সোহাগী বাজারো যাইতাছি দুইলা মাছ-তরহারি নিতাম। আমি বুড়া মানুষ, কলাগাছের বোরহা (ভেলা) থাইক্ক্যা একবার পড়লে মরণ ছাড়া গতি নাই’।

সাহেবনগর এলাকার বাসিন্দা মো. আব্দুল হামিদ বলেন, ‘আমি সোহাগী বাজারে পান বিক্রি করি। দিনের বেলায় তো ভেলা দিয়ে আইসা পড়ছি। রাইতে তো পানিতে ভিজে পার হওয়া ছাড়া উপায় নাই।’

স্থানীয় বাসিন্দা ও ভি সাইন মডেল স্কুলের পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জনগুরুত্বপূর্ণ এই সেতু দিয়ে সোহাগী, সরিষা, জাটিয়া, ঈশ্বরগঞ্জ সদর ইউনিয়নসহ অন্তত ১০ হাজার মানুষ চলাচল করে। তাঁদের মধ্যে স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীও রয়েছে। ব্রিজটি মেরামত না হলে সবাইকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হবে।’

উপজেলা এলজিইডি ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোহাগী ইউনিয়নের মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে কাঁচামাটিয়া নদী। নদীর এক পাশের অংশে সোহাগী বাজারসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। নদীর অন্য পাশের অংশে চারটি ইউনিয়নের ১০ গ্রামের মানুষের বসবাস। তাই নদীর ওপারের বাসিন্দাদের জীবনমান উন্নয়নসহ পারাপারের জন্য ১৯৯৯ সালে ৭৫.১ মিটার দীর্ঘ ফুট ব্রিজ নির্মাণ করে দেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী (এলজিইডি)।

অবশ্য স্থানীয়রা জানান, নামে ফুট ব্রিজ হলেও এর ওপর দিয়ে অটোরিকশা, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন ছোট যানবাহন চলাচল করত। তবে গত বছর খানিক ধরে এটি দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. শাহীন মিয়া বলেন, ‘ব্রিজটি ভেঙে যাওয়ার খবর পেয়েই আমি সঙ্গে সঙ্গে সেখানে যাই। এরপর ইউপি চেয়ারম্যানসহ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানাই’। সোহাগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কাদির আহম্মেদ ভূঁইয়া বলেন, ‘আমি ইতিমধ্যে ইউএনও স্যারকে বিষয়টি জানিয়েছি। ব্যক্তিগত কাজে ঢাকায় আছি। এসে দেখব এটা নিয়ে কী করা যায়।’

উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) আয়শা আক্তার বলেন, ‘বিষয়টি সম্বন্ধে অবগত আছি। সেতুটি মেরামতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ইউএনও সারমিনা সাত্তার বলেন, ‘ব্রিজটি ভেঙে পড়ার বিষয়টি আমি অবগত হয়েছি। এরপর সঙ্গে সঙ্গে আমি এলজিইডির ইঞ্জিনিয়ারকে জানিয়েছি। ব্রিজটি মেরামতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ এবং জনগণের দুর্ভোগে লাঘবে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

 

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version