বরিশাল নগরীর কলেজ রোড এলাকার বাসিন্দা তরিকুল ইসলামের সংসার চলে ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে। ১৮ জুলাই দুপুরে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে ২৮৭ ডলার ব্যয় করে একটি ক্যাম্পেইন চালু করেছিলেন। সন্ধ্যায় ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনলাইন দুনিয়া থেকে তিনি বিচ্ছিন্ন হয়ে পরেন।
তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘ক্যাম্পেইনের অর্ডারটি বিদেশী ক্লায়েন্টের ছিল। আমার ডলার কেটে নিলেও কাম্পেইন সম্পন্ন হয়নি। আরও কয়েকটি অর্ডার হারিয়েছি। ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যে ক্ষতি হয়েছে তা চাইলেও আগামী চার বছরেও পূরণ করতে পারবো না।’
শুধু তরিকুল ইসলামই নন; তার মতো প্রায় ১০ হাজার ফ্রিল্যান্সার অনলাইনে খুঁজে নিয়েছেন কর্মসংস্থান। এরা সকলেই ক্ষতির মুখে হারিয়েছেন পুঁজি।
শুক্রবার সকালে ইন্টারনেট সংশ্লিষ্ট কর্মজীবীদের সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করে জানা গেছে, গত সাতদিনে বরিশাল বিভাগে ন্যূনতম এক হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে-ইন্টারনেট নির্ভর ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, ফ্রিল্যান্সার, ক্যাবল অপারেটর ও পরিবহন কাউন্টার। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইন্টারনেট সরবারহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
বরিশাল ফ্রিল্যান্সার ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক জিহাদ রানা বলেন, আমার সংগঠনের অন্তর্ভূক্ত দুই হাজার সদস্য রয়েছেন। সরকার অনুমোদিত আরেকটি সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটিতে ৫০ জন আছেন। সংগঠনের বাইরে ফ্রিল্যান্সার রয়েছে আরও প্রায় সাত হাজার। তারা সকলেই ক্ষতির মুখে পরেছেন।
তিনি আরও বলেন, আমার প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ার বিডি নেটওয়ার্ক ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন ছয়দিনে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকার নিট মুনাফা হারিয়েছে।
এরমধ্যে দেখা গেছে, অনেক অর্ডার সময় মতো ডেলিভারি দিতে ও অর্ডার নিতে পারিনি। সবচেয়ে বড় ক্ষতি হচ্ছে বহির্বিশ্বে আমাদের নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে। কারণ টানা ছয়দিন কোনো ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগ হয়নি। তারা আমাদেরকে প্রতারক ভাবলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। সুতরাং নেতিবাচক মনোভাব তৈরির ক্ষতি আর কখনো পুষিয়ে উঠতে পারবো বলে মনে হয় না।
জিহাদ রানা বলেন, ইন্টারনেট সংশ্লিষ্ট সবগুলো খাত অপূরণীয় ক্ষতির মুখে পরেছে। অর্থের হিসেবে বিভাগে আনুমানিক এক হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু মার্কেটিং পলিসিতে খ্যাতির যে ক্ষতি হয়েছে তা টাকায় পরিমাণযোগ্য নয়।
দক্ষিণাঞ্চলে ইন্টারনেট সরবারহকারী সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান ইউরোটেল বিডি অনলাইন লিমিডেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বরিশাল চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক এসএম জাকির হোসেন বলেন, হঠাৎ করে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় ইন্টারনেট সংশ্লিষ্ট কর্মজীবীদের পাশাপাশি ইন্টারনেট সরবারহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও ব্যাপক ক্ষতির মুখে পরেছে। কারণ ব্যান্ডউইথ কিনে ব্যবহারকারী পর্যায়ে দিতে না পারায় আমরা নিট মুনাফা হারিয়েছি।
উল্লেখ্য, ২৪ জুলাই মাঝরাতে বরিশাল বিভাগের জেলা শহরগুলোতে ব্রডব্যান্ড সার্ভিস পাওয়া শুরু হলেও ২৬ জুলাই দুপুর পর্যন্ত সীমাবদ্ধ গতি পাচ্ছেনা ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা।
ভোরের আকাশ/ সু
মন্তব্য