-->
কোটা আন্দোলনের নামে দুষ্কৃতিকারীদের হামলায় পুড়ে ছাই সরকারি-বেসরকারি অফিস-স্থাপনা

ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়েছে মাদারীপুর শহর

নিত্যানন্দ হালদার, মাদারীপুর
ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়েছে মাদারীপুর শহর
ডিপোতে থাকা ৩২টি বাসে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা

সরকারি চাকুরীতে কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারী ছাত্রদের সাথে দুষ্কৃতিকারীরা যুক্ত হয়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে মাদারীপুর শহর জুড়ে। আন্দোলনে ত্রিমুখী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও আন্দোলনকারীরা। এ সময় সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৪১ কোটি টাকার সম্পদের। এসব ঘটনায় সদর থানায় ৯টি মামলায় ৯১ জন গ্রেপ্তার হলেও অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে এক হাজারেরও বেশি।

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সকালের দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশ ও ছাত্রলীগের ত্রিমুখী সংঘর্ষে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পুরো শহর। এক পর্যায়ে শহরের শকুনী লেকের পানি থেকে অনার্স পড়ুয়া দিপ্ত দে নামে এক শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। এরপর থেকে শিক্ষার্থীদের সাথে দুষ্কৃতিকারীরা যুক্ত হয়ে ধ্বংস যজ্ঞ চালিয়েছে মাদারীপুর শহর জুড়ে। বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর বাসভবনে হামলা চালায়, বিকেলে আন্দোলনকারী আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলে শহরের লঞ্চঘাট এলাকার ১নং পুলিশ ফাঁড়ি।

শুক্রবার (১৯ জুলাই) বিকেলে আন্দোলনকারী ছাত্রদের সাথে দুষ্কৃতিকারীরা যুক্ত হয়ে মস্তফাপুর বাসস্ট্যান্ডে হামলা শুরু করে একে একে শহরের দিকে অগ্রসর হয়ে পল¬ী বিদ্যুৎ অফিসের রেস্টহাউজ। এরপরে খাগদিতে ব্যক্তিগত হোটেলের গ¬াস ভাংচুর করে সামনে অগ্রসর হওয়ার সময় ছাত্রলীগ, পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়। পুলিশ, ছাত্রলীগ পিছু হটলে আন্দোলনকারীদের মধ্যে কিছু দুষ্কৃতিকারী যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ভাংচুর করে সার্বিক তেলের পাম্পে ও ভিতরে ডিপোতে থাকা ৩২টি বাস আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় ও আরো ছয়টি বাস ভাংচুর করে, নতুন বাসস্ট্যান্ডে হামলা চালিয়ে গ¬াস, লেকভিউ আবাসিক হোটেল ও রেস্টুরেন্টে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে।

এর একদিন পরে গভীর রাতে শহরের লেকের পাড়ে অবস্থিত মাদারীপুর পৌর মুক্তিযোদ্ধা অডিটোরিয়াম আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলে। আগুনে অডিটোরিয়ামের আধুনিক যন্ত্রপাতি, এসি, সুসজ্জিত অডিটোরিয়াম পুড়ে যায়। সব মিলে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৪১ কোটি টাকার সম্পদের। ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, পুলিশ, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী, দুষ্কৃতিকারীসহ আহত হয়েছে প্রায় দুই শতাধিক। জেলা জুড়ে চলছে গ্রেপ্তার আতঙ্ক।

মাদারীপুর পৌরসভার মেয়র মো. খালিদ হোসেন ইয়াদ বলেন, কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে হঠাৎ করে মাদারীপুরে একদল দুষ্কৃতিকারী যারা দেশ ও সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য লিপ্ত হয়ে পড়ে সরকারি, বেসরকারি স্থাপনায় হামলা, ভাংচুর ও আগুন ধরিয়ে দেয়। হামলাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে শাস্তির দাবি জানাই।

সার্বিক পরিবহনের শ্রমিকরা জানান, ছাত্রদের সাথে জামায়াত, শিবির, বিএনপি’র দুষ্কৃতিকারীরা যুক্ত হয়ে সার্বিক তেলের পাম্প, বাস ডিপো, পুলিশ ফাঁড়ি, পৌর অডিটোরিয়ামসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে ও আগুন ধরিয়ে দেয়। বাস আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলার কারনে সার্বিক পরিবহনের প্রায় পাঁচ শতাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।

মাদারীপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জেলা বিশেষ শাখা ভাস্কর সাহা বলেন, ছাত্র আন্দোলনের নামে দুষ্কৃতিকারী জেলার সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় হামলা চালিয়ে, আগুন দিয়ে যানমালের যে ক্ষয়ক্ষতি করেছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের আইনানুগ ব্যবস্থা চলমান রয়েছে। এ পর্যন্ত ৯টি মামলায় জামায়েত, বিএনপিসহ ৯১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version