ধীরগতিতে চলছে চুয়াডাঙ্গা রেলবাজার রেলগেটে ওভারপাস নির্মাণকাজ। ৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে পৌনে এক কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভার (ওভারপাস) নির্মানাধীন রেলওয়ে ওভারপাসের নকশায় ত্রুটি সংশোধনে ব্যয় বেড়েছে আরও ১১ কোটি টাকা। নতুন নকশায় বেড়েছে ওভারপাসের র্যাম্পের আয়তন। সেই সাথে সময় বেড়েছে আরও এক বছর। প্রায় বছর খানেক ধরে চলা নির্মাণকাজে এখন অনেকটাই দৃশ্যমান দৃষ্টিনন্দন ওভারপাস। একের পর এক বসছে স্প্যান। ওভারপাসে মোট ১৩টি স্প্যান থাকবে।
অপরদিকে, প্রধান সড়কের দুই সাইডে (পাশে) রাস্তা তৈরি করে ওভারপাসের কাজ না করায় হাজারো মানুষের জনদুর্ভোগ চরমে উঠেছে। উঁচু-নিচু রাস্তায় যান চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। সেই সাথে বৃষ্টি হলে রাস্তাটি কাদা পানিতে একাকার হয়ে যায়। আবার রোদ পড়লে ধুলা বালিতে সয়লাব হয়ে পড়ে। এর বাইরে লোহার রডসহ বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী রাস্তার মাঝে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখে কাজ করায় যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন অনেকে। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন ও সওজকে একাধিকবার জানালে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে হাজার হাজার যানবাহনে ২৫/৩০ হাজার মানুষ চলাচল করে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।
এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, কাজ শেষ হয়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। নির্ধারিত সময়ের আগেই বাকি কাজ শেষ হবে। ৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে পৌনে এক কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভার (ওভারপাস) নির্মাণ কাজ গত বছরের (২০২৩ সালের) ১২ আগস্ট শহরের একাডেমি মোড়ে উদ্বোধন করেন চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের এমপি সোলায়মান হক জোয়াদ্দার ছেলুন। এরপর শহরের প্রবেশদার বাসটার্মিনাল থেকে একাডেমি মোড় পর্যন্ত ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ শুরু হয়। পৌনে এক কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভার নির্মাণ করতে মূল সড়কের বেশির অংশ ঠিকাদাররা ঘিরে রেখেছে। এতে রাস্তাটি এতোটাই সরু হয়ে গেছে, যান চলাচল করা দুরূহ হয়ে পড়েছে। দুই পাশে রাস্তা না বাড়ানোর কারণে মাটির রাস্তায় ছোট বড় অনেক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে সড়কে চলাচলরত বাস, ট্রাক, প্রাইভেটকার, ইজিবাইক, মোটরসাইকেলসহ পথচারী চলাচল দুরূহ হয়ে পড়েছে। একটু বৃষ্টি হলে রাস্তাটি কাঁদা পানিতে সয়লাব হয়ে যায়। আবার শুকনো মৌসুমে পুরো রাস্তা ধুলোবালুতে একাকার হয়ে যায়।
অপরদিকে, ট্রেন আসা যাওয়ার সময় দীর্ঘক্ষণ এসড়কের রেলগেট বন্ধ রাখায় ভোগান্তির মাত্রা আরো একধাপ বেড়ে যায়। এ সময় রাস্তার দুধারে রোদ গরম ও বৃষ্টিতে ১৫/২০ মিনিট যানবাহন আটকা পড়ে।জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার প্রধান সড়কটি রাত ও দিনের অধিকাংশ সময় রেল লাইনের গেট পড়ে থাকায় নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ বিঘ্ন ঘটে। জনসাধারণকে পড়তে হয় দীর্ঘ যানজটের কবলে। যানজট কমানো ও নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ স্থাপনসহ নানা সমস্যার সমাধানে চুয়াডাঙ্গা শহরের রেলবাজার এলাকায় রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ করা চলছে। ২০২২ সালের ২৮ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেকের বৈঠকে ওভারপাস নির্মাণ প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ দরপত্র আহ্বান করে। ঢাকা বনানীর ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড (এনডিই) নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি পায়। ৭৪৮ দশমিক ৬৯৬ মিটার আয়তনের এ অবকাঠামো নির্মানে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭৫ কোটি ১১ লাখ ৭ হাজার টাকা। প্রথম কার্যাদাশে সময় ছিল চলতি বছরের গেল জুন মাস পর্যন্ত। আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের ১২ আগস্ট। কাজ শুরুর পর প্রথম দিকে বেশ দ্রুত গতিতেই চলছিল নির্মান কাজ। ধীরে ধীরে অজ্ঞাত কারণ ঝিমিয়ে পড়ে এই নির্মাণ কাজ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্মান কাজ চলাকালেই বিপত্তি দেখা দেয় ওভারপাসের নকশার র্যাম্পের আয়তন নিয়ে। দু প্রান্তের র্যাম্পের নকশায় প্রথমে আয়তন ধরা হয়েছিল ৩৩০ মিটার। এতে ওভারপাসে উঠতে সংযোগ পথ অনেকটা খাড়াখাড়ি হচ্ছিল। এজন্য সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (আরডিপিপি) পাঠানো হয়। সংশোধিত নকশায় ওভারপাসে উঠতে সংযোগ সড়ক অর্থাৎ র্যাম্পের আয়তন বাড়ানো হয়েছে। দু প্রান্তে র্যাম্পের আয়তন বেড়েছে আরও ১১২ মিটার। এতে নতুন করে আরও ব্যয় বেড়েছে ১০ কোটি ৯৮ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। এ অবকাঠামো নির্মানে এখন মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৮৬ কোটি ১০ লাখ ১ হাজার টাকায়। সেই সাথে সময়ও বেড়েছে আগামী ২০২৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত।
ব্যয় ও সময়ের সাথে বাড়ছে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি। অভিযোগ, ধীরগতির কাজে চলাচল করতে গিয়ে দুর্ভোগে পড়ছেন তারা। দ্রুতই উন্নয়নের ভোগান্তি লাঘবের দাবি তাদের।
গণমাধ্যমকর্মী চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বিপুল আশরাফ জানান, চুয়াডাঙ্গা শহরের প্রবেশদার এটি। সদর উপজেলার বেশিরভাগ ইউনিয়ন এই এলাকায়। প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে। কিছুদিন আগে পথচারীদের মন বোঝানোর জন্য দুই সাইডে মাটি ও ইট দিয়ে রোলার করা হয়। পরে বৃষ্টিতে সড়কটি কাঁদা পানিতে আরো ভয়াবহ আকার ধারন করে। এখন রাস্তাটিতে আরো বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত সাইড রাস্তা নির্মাণ করে জনগণের ভোগান্তি কমানোর দাবি জানিয়েছেন তিনি।
ইজিবাইক চালক আলমগীর হোসেন বলেন, এই রাস্তায় সহজে চলাচল করা যাচ্ছে না। আবার যদি কাজ শেষ হতে আরও ১ বছর লেগে যায় তাহলে যাতায়াত করতে গিয়ে অনেক সমস্যায় পড়তে হবে। দ্রুত কাজ শেষ হলে চলাচলে গতি ফিরবে।
তবুও রেলওয়ে ওভারপাসের জন্য দিন গুনছে জেলাবাসী। ভোগান্তি পেরিয়ে স্বস্তির অপেক্ষায় রয়েছেন তারা।
চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামরুজ্জামান চাঁদ বলেন, এখন চলাচল করতে কিছুটা কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। কিন্তু ওভারপাসের কাজ শেষ হলে সে সমস্যা আর থাকবে না। তখন মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারবে। তখন মানুষের কর্মঘণ্টাও বাঁচবে।
এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এবং প্রকল্প পরিচালক খন্দকার গোলাম মোস্তফা মানুষের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে বলেন, জমি অধিগ্রহণসহ কিছু জটিলতার কারণে নির্মাণ কাজের মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়েছে। দুই সাইডে রাস্তার কাজ অল্প দিনের মধ্যে শুরু হবে। ওভারপাসের কাজ ইতিমধ্যে ৪০ শতাংশ শেষ হয়েছে। বাকি কাজের জন্য সময় রয়েছে আগামী বছরের (২০২৫) জুন মাস পর্যন্ত। আমাদের আশা, এর আগেই কাজ সম্পন্ন হবে।
ভোরের আকাশ/ সু
মন্তব্য