-->
শিরোনাম

অতিরিক্ত লবণাক্ততায় হাঁস প্রজনন খামারের যন্ত্রাংশে মরিচা

মো. কামরুজ্জামান, বাগেরহাট
অতিরিক্ত লবণাক্ততায় হাঁস প্রজনন খামারের যন্ত্রাংশে মরিচা
লবণাক্ত পানি ব্যবহারে দ্রুত নষ্ট হচ্ছে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ

বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ইউনিয়নের কাঁঠাল তলা এলাকায় অবস্থিত ‘আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামার’। খামারটির মূল উদ্দেশ্য ছিল হাঁসের বাচ্চা উৎপাদন। কিন্তু খামারটি চালুর কয়েক বছর পরই নানা সংকটের মধ্যে পড়ে। এতে ব্যাহত হয় বাচ্চা উৎপাদন। নষ্ট হতে থাকে খামারের কোটি কোটি টাকার বিভিন্ন যন্ত্রাংশ।

খামার সংশ্লিষ্টরা জানান, এর প্রধান কারণ হচ্ছে লবণাক্ত পানি। ফলে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ও হাঁস পালনের শেড নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বাচ্চা উৎপাদন অব্যাহত রাখতে দ্রুত সুপেয় পানির ব্যবস্থার দাবি জানান তারা।

আমিষের ঘাটতি পূরণের সঙ্গে সঙ্গে হাঁস পালনে গ্রামের মানুষকে স্বাবলম্বী করার প্রত্যাশা নিয়ে আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামার গড়ে তোলা হয়। এরপর থেকে গত চার বছর ধরে ডিম থেকে একদিনের বাচ্চা উৎপাদন করে খামারটি। এরপর সেই বাচ্চা বাগেরহাটসহ আশপাশের জেলাগুলোতে কমদামে সরবরাহ করা হয়।

এই খামারে আধুনিক ব্যবস্থা থাকলেও সুপেয় পানির ব্যবস্থা নেই। ফলে হাঁসের বাচ্চা পালন ইনকিউবেটরে লবণাক্ত পানি ব্যবহার করতে হয়। এতে করে পানির কুলিং প্লান ও বিভিন্ন যন্ত্রাংশ মরিচা পড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

বাগেরহাট কাঁঠাল এলাকার খামারি শেখ ওয়াহেদুল বলেন, আমরা এখান থেকে ২৫ টাকা করে হাঁসের বাচ্চা কিনি। এরপর সেই বাচ্চা লালন-পালন করে প্রতি জোড়া ৪০০-৫০০ টাকায় বিক্রি করি। এতে ভালো লাভ হয়।

একই এলাকার আরিফা খাতুন নামের আরেক গৃহিণী বলেন, আগে প্রয়োজন অনুযায়ী ডিম ও বাচ্চা পেতাম। কিন্তু এখন আর আগের মতো বাচ্চা ও ডিম পাই না। খামারটির উন্নয়ন হলে প্রান্তিক খামারিরা উপকৃত হবেন।

খামারের পোল্ট্রি টেকনিশিয়ান উজ্জ্বল রায় বলেন, এই হাঁস প্রজনন খামারে একদিন বয়সের বাচ্চা বিক্রি হয় ২৫ টাকায়। একই হাঁসের বাচ্চা বাজারে বিক্রি হয় ৪০-৫০ টাকায়। খামারে উৎপাদিত হাঁস অন্য হাঁসের তুলনায় আলাদা। দৈহিক গঠন অন্য হাঁসের চেয়ে বেশ বড় হয় এরা। বছরের ১০ মাস ডিম দেয়।

তিনি আরও জানান, চীন থেকে আনা ইনকিউবেটরের মাধ্যমে এখানে ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানো হয়। খামারে উৎপাদিত হাঁসের জাতের মধ্যে রয়েছে চায়না বেইজিং, জিংডিং হাঁস। এছাড়া হাঁস পালনের জন্য নির্মাণ করা হয় ছয়টি লেয়ার শেড, একটি হ্যাচারি, একটি গোডাউন, একটি ডরমিটরি ভবন, একটি জেনারেটর ভবন, একটি অফিস কাম ট্রেনিং সেন্টার, একটি গার্ডরুম ও সেলস সেন্টার, একটি ব্রন্ডার শেড। খামারে ডিম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা বছরে এক লাখ ৮০ হাজারটি। তবে উৎপাদন হয়েছে এক লাখ ৫৭ হাজার ২৯০টি।

আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামারের হ্যাচারি অ্যাটেনডেন্ট মোহাম্মদ শামিম বলেন, আমাদের হ্যাচারি থেকে যেসব বাচ্চা উৎপাদন হয় সেগুলো খুলনা বিভাগসহ বাগেরহাটের দক্ষিণাঞ্চল- যেমন মোড়েলগঞ্জ, শরণখোলা, চিতলমারী, বরিশাল, পটুয়াখালীসহ বিভিন্ন জেলায় সরকারি দামে বিক্রি করা হয়।

আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এ.এফ.এম ফয়জুল ইসলাম বলেন, খামারে স্থাপিত গভীর নলকূপের লবণাক্ত পানি ও আয়রনের কারণে ইনকিউবেটর এবং বিভিন্ন যন্ত্রাংশ মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে বাচ্চা উৎপাদনে ব্যাহত হচ্ছে। সুপেয় পানির নলকূপ স্থাপন হলে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। আমরা পৌরসভার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আশা করি তাড়াতাড়ি সমাধান হবে।

বাগেরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ছাহেব আলী বলেন, লবণাক্ততার কারণে ডিম ফুটানোর ইনকিউবেটর, পাম্প মেশিন, ফ্লোরসহ বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রাংশ দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করি সমাধান হবে।

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version