-->
শিরোনাম

সাগরের বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে গেল

জহুরুল ইসলাম হালিম, রাজবাড়ী
সাগরের বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে গেল
ক্যাপশন: কোটা আন্দোলনে গুলিতে নিহত সাগর হোসেন

কত স্বপ্ন ছিল; সব শেষ হয়ে গেল এক নিমিষেই। ছোট বোন এইচএসসি পাস করার পর তাকে ঢাকা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য কোচিং করাবে বলেছিল বৈষম্য বিরোধী কোটা আন্দোলনে রাজধানীর ঢাকা মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরে গুলিতে নিহত রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার সাগর হোসেন (২১)। তার স্বপ্ন ছিল বিসিএস ক্যাডার হওয়ার। বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন এখন তার ও পরিবারের স্বপ্নই থেকে গেল।

‘লেখাপড়ায় সাগর ছিল খুবই মনোযোগেী। বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন বুনতে ৬ বছর যাবৎ পড়ালেখার জন্য বাড়ি ছাড়া। ঈদ কিংবা বিশেষ অনুষ্ঠান ছাড়া তিনি বাড়ি আসতেন না। তিনি কখনো কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তার বাবা একজন কৃষক, মাঠে কাজ করেন। কৃষক বাবার ছেলে সব সময়ই ভাবতো পরিবারের কথা।’ এভাবেই আর্তনাদ করে বলছিলেন, ঢাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে গুলিতে নিহত কলেজ ছাত্র সাগরের বাবা মো. তোফাজ্জল হোসেন।

জানা গেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্ব সংঘটিত সংঘর্ষে ১৯ জুলাই মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে সাগর হোসেনের মৃত্যু হয়। নিহত সাগর রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া ইউনিয়নের টাকাপোড়া গ্রামের কৃষক তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে। তিনি মিরপুর সরকারি বাংলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। দুই ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়। ছোট বোন নারুয়া লিয়াকত আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজে এবার এইচএসসি পরিক্ষার্থী।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, নারুয়ার স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিকের গন্ডি পেরিয়ে লিয়াকত আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ২০১৯ সালে মানবিকে এসএসসি পাস করে। পরে রাজবাড়ী সরকারি কলেজ থেকে ২০২১ সালে এইচএসসি পাস করে উচ্চ শিক্ষার জন্য রাজধানীতে চলে যায়। সেখানে তিনি মিরপুর বাংলা কলেজে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে অনার্সে রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়। পরিবারের অভাব অনটনের জন্য পড়ালেখার পাশাপাশি তিনি পার্ট-টাইম চাকরি করতেন।

নিহত সাগরের বাবা মো. তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, সাগর রাজবাড়ী সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চেয়েছিল। কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ মিরপুর বাংলা কলেজে ভর্তি হয়। পরিবারের অভাব অনটনের কারণে আমি তার পড়ার খরচ ঠিকমতো দিতে পারতাম না বলে সে টিউশনি করে নিজের খরচ নিজেই চালাতো। সাগরের স্বপ্ন ছিল বিসিএস ক্যাডার হবে, সরকারি চাকরি করবে। সেই স্বপ্ন নিয়েই চাকরির জন্য কোটা আন্দোলনে গিয়েছিল, ফিরল লাশ হয়ে। আমি কাউকে দোষ দেব না।

তিনি আরও বলেন, ‘মৃত্যুর আগে বিকাশে টাকা চেয়েছিল। তাকে টাকাও পাঠানো হয়। আল্লাহ যা ভালো মনে করছে তাই করেছে। আল্লাহর কাছে শুধু একটা কথাই বলব, আল্লাহ তুমি আমার ধৈর্য দাও।’

নিহতের চাচাতো ভাই মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি আর সাগর এক সাথেই থাকতাম। আমি তাকে অনেকবার নিষেধ করার পরেও ১৯ জুলাই সকালে বন্ধুবান্ধবের সাথে মিরপুর-১০ এ কোটা সংস্কার আন্দোলনে চলে যায়। তার যাওয়ার পর থেকে আমি অনেক বার তাকে কল দিয়েছি। ১ ঘণ্টা পর ওর ফোন থেকে কল আসে। কেউ একজন জানায়, সাগরের মাথায় গুলি লেগেছে। সাগর এখন মিরপুর আজমল মেডিকেল হাসপাতালে আছে। আমি সেখানে গিয়ে জানতে পারি সাগর মারা গেছে। পরে তাকে গ্রামের বাড়ি নিয়ে আসি। ওইদিনই বিকেল ৪টার সময় গ্রামের বাড়ীতে নামাজে জানাযা শেষে তাকে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version