রংপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত শিক্ষার্থী আবু সাঈদসহ সকল হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার, আন্দোলনে গ্রেপ্তার হওয়া সকল শিক্ষার্থীর মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও পদযাত্রা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে রংপুর মহানগরীর পার্ক মোড়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও পদযাত্রার ব্যানার নিয়ে একত্রিত হন। এ কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষকরা।
এ সময় সেখানে প্রতিবাদ সমাবেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কীভাবে সহিংস হলো? আমরা তো শুরু থেকেই শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের দাবি তুলে ধরেছিলাম। সরকারে থাকা দায়িত্বশীলদের মদদে আমাদের ওপর ছাত্রলীগ-যুবলীগ-পুলিশ সদস্যরা হামলা করে, মারধর করে, ভয়ভীতি সৃষ্টি করে। তারাই আমাদের ওপর গুলি চালায়। আমাদের ভাইকে কেন হত্যা করা হয়েছে, কী কারণে ছাত্রদের হত্যা করা হলো? এখন আমাদের কেন নিরাপত্তা নেই? আমরা সকল শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা চাই। আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়বো না। এ সময় আবু সাঈদসহ সারা দেশে চলমান এই ছাত্র আন্দোলন ঘিরে বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তির দাবি জানান তারা।
অভিভাবকরা বলেন, আমাদের ছেলেমেয়েরা তাদের ন্যায্য দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছে। অনেকে হত্যার শিকার হয়েছে। অনেকে আহত হয়ে হাসপাতালে-বাড়িতে কাতরাচ্ছে। অনেকে আতঙ্কে দিনানিপাত করছে। আমরা অভিভাবক হয়ে বাড়িতে বসে থাকতে পারি না। তাই শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে আমরাও তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছি।
সমাবেশ শেষে পার্ক মোড় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় তারা বৃষ্টিতে ভিজে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের শেখ রাসেল মিডিয়া চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষকরা। এ কর্মসূচি থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নিহত আবু সাঈদসহ সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশের দাবি জানানো হয়।
অবস্থান কর্মসূচির আগে শিক্ষকরা একটি মৌন মিছিল বের করেন। মিছিলটি ক্যাম্পাসের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পুনরায় শেখ রাসেল মিডিয়া চত্বরে এসে শেষ হয়। অবস্থান কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের অন্তত ৪৫ জন শিক্ষক অংশ নেন।
সেখানে অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. তুহিন ওয়াদুদ, ব্যবস্থাপনা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মতিউর রহমান, মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শেখ মাজেদুল হক, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও লোকপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক মাহবুবুর রহমান, একই বিভাগের শিক্ষক ফারজানা জান্নাত তুশি প্রমুখ।
এ সময় শিক্ষকরা বলেন, আমরা দেখলাম আবু সাঈদকে হত্যার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসায় কী নৃশংসভাবে হামলা করল, আর পুলিশ চেয়ে চেয়ে দেখল। এই হলো পুলিশ ও তাদের অবদান। মুক্তিযুদ্ধের সময় দেখেছিলাম রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে এদেশের পুলিশ কী অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছে। মুক্তিযুদ্ধের পুলিশ আর এখানকার সময়ের পুলিশের কত পার্থক্য।
প্রসঙ্গত, কোটা সংস্কার আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন আবু সাঈদ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। মা-বাবার ৯ সন্তানের মধ্যে একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া সন্তান ছিল আবু সাঈদ। ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পার্ক মোড়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় মিছিলের সম্মুখে থেকে বুক পেতে দেওয়া আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হন। এ ঘটনার পর আন্দোলনের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে রংপুরসহ পুরো দেশজুড়ে।
ভোরের আকাশ/ সু
মন্তব্য