১১ দফা দাবিতে পঞ্চম দিনের কর্মবিরতিতে পুলিশ সদস্যদের বিক্ষোভ কর্মসূচি বহাল রয়েছে। আজ শুক্রবার ময়মনসিংহের জেলা পুলিশ লাইনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে জেলা পুলিশ ময়মনসিংহ। এসময় বিক্ষোভকারী পুলিশ সদস্যরা ১১ দফা দাবীসহ তুলে ধরেন চাকরী জীবনে তাদের নানান প্রতিকূলতা ও অব্যক্ত ক্ষোভগুলো।
এসময় বিক্ষোভকারীদের পক্ষ থেকে এক পুলিশ সদস্য জানান, ছাত্রদের উপর গুলি চালানোর পক্ষে তারা কখনই ছিলেন না। দুই একজন বিসিএস কর্মকর্তার পক্ষপাতিত্বের কারণে তাদের নির্দেশে তারা এই জঘন্য কাজ করতে বাধ্য হন। যদি তারা সেইসময় তাদের আদেশ অমান্য করতেন তবে আদেশ অমান্যকারীদের চাকরি হারোনোর ভয় দেখানো হতো।
তারা আরও বলেন, ইতিপূর্বে এসব কারণে বহু অফিসার চাকরি হারোনো সহ নানান শাস্তি ভোগ করেছেন। সেই ভয়ে আমরাও ভিত ছিলাম। কিন্তু এখন আমরা আর ভয় করি না। আমরা সেইসব নির্যাতিত অফিসারদের বিচার চাই, তাদের অপসারণ চাই তবেই আমরা পূঁণরায় কর্মস্থলে ফিরে আসব। এই রাষ্ট্র জনগণের, এই রাষ্ট্রে যে যা খুশি করতে পারবে না।
এসময় তারা তাদের পেশকৃত ১১ দফা দাবী পাঠ করে দাবী না মানা পর্যন্ত কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ সমাপ্ত ঘোষণা করেন।
বাংলাদেশ পুলিশ সংস্কারের ১১ দফা দাবি সমূহ :
০১। ক) স্বাধীন কমিশন গঠন, পুলিশ বাহিনীকে সংস্কার করে দলীয় প্রভাব মুক্ত জনগনের কল্যাণে নিয়োজিত করতে হবে। আমরা যে রংয়ের ইউনিফর্ম পরিধান করে কলংকিত হলাম সেই পোষাকের রং পরিবর্তন করে কনস্টবল থেকে আইজি পর্যন্ত একই ড্রেসকোড হতে হবে।
খ) যে সকল সিনিয়ার অফিসাররা ক্ষমতা লোভি, দালাল পুলিশ অফিসারদের কারণে আমাদের শতশত পুলিশ সদস্য ও সাধারণ ছাত্র জনতা মৃত্যু বরণ করেছেন তাদেরকে গ্রেফতার করে অনতিবিলম্বে বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে বিচার করতে হবে ও তাদের অবৈধ সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে পুলিশের কল্যাণে ব্যবহার করতে হবে। সেই সাথে আমাদের সকল পুলিশ সদস্য ও তাদের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
০২। ক) চলমান সহিংসতায় যে সকল পুলিশ সদস্য আহত ও নিহত হয়েছেন তাদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে, যে সকল সদস্য দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জানমালের নিরাপত্তার জন্য আগ্নেযন্ত্র ব্যাবহার করেছেন তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রকারের বিভাগীয় ব্যবস্থা অথবা হয়রানি করা যাবেনা।
খ) সকল পুলিশ সদস্যদের অন্যান্য সংস্থার চাকুরীর মতো শ্রম আইন অনুযায়ী ৮ ঘন্টা কর্মঘন্টা নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্রের প্রয়োজনে যদি ৮ ঘন্টার বেশি দায়িত্ব পালন করতে হয় তাহলে ওভার টাইম হিসাবে গন্য করতে হবে।
০৩। ইন্সপেক্টর থেকে ৬০% এবং ৪০% এসপি পদে সরাসরি নিয়োগ দিতে হবে। পদোন্নতির জটিলতা নিরসনের জন্য সকল পদে পদোন্নতির জন্য সুপারনিউমারারি চালু করতে হবে এবং নুন্যতম পুলিশ সুপার পর্যন্ত পদোন্নতির ব্যবস্থা করতে হবে। অধনন্ত পুলিশ সদস্যদের টিএ/ডিএ বিল যথাসময়ে প্রদান করতে হবে ও সোর্সমানি প্রমান করতে হবে। ঝুঁকিভাতা বেসিকের ৭০% দিতে হবে এবং ফ্রেশম্যানি পুলিশ সদস্যের র্যাংক হিসাবে দিতে হবে।
০৪। আমাদের সকল পুলিশ সদস্য ও পরিবারের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে এবং তার পাশাপাশি ব্যাক্তিগত চিকিৎসা করা হলে তাহার ভাউচার অনুসারে কল্যাণ তহবিল থেকে সম্পূর্ণ ক্ষতিপুরণ দিতে হবে।
০৫। (ক) বিভাগীয় পদোন্নতির ক্ষেত্রে একবার পরিক্ষায় পাশ করার পরে পর্যায়ক্রমে পদোন্নতির ব্যবস্থা করা এবং অধস্থনদের পদোন্নতির বৃদ্ধি করে প্রয়োজনে সুপার নিউমারী পদ সৃজন করতে হবে।
খ) ওসি হিসাবে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বিগত ১৫ বছরে যারা সুবিধা বঞ্চিত হয়েছেন তাদের দায়িত্ব দিতে হবে এবং ওসি হিসাবে ২ থানার বেশি দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না এবং ৫৪ বছরের বয়সের সীমাবদ্ধরা তুলে দিতে হবে।
০৬। অধস্থন পুলিশ সদস্যদের সাথে পিআরবি অনুসারে সৌহাদ্যপূর্ণ আচরন করতে হবে, এবং ব্যক্তিগত কাজে কোন সদস্যকে ব্যবহার করা যাবেনা ও কন্সটেবল থেকে সকল পর্যায়ের অফিসারদের পোস্টিং বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে।
০৭। নিয়োগ প্রশিক্ষণ ও পদোন্নতিতে বৈষম্য দূর করতে হবে। কনস্টেবল এবং এএসপি পদে দুই ধাপে নিয়োগ হবে। কনস্টেবলে যোগ্যতা হবে কমপক্ষে এইচএসসি পাশ। পদোন্নতির ক্ষেত্রে এএসপি পদে যোগ্যতার ভিত্তিতে ৫০% পদ সংরক্ষণ করতে হবে। বাকী ৫০% পদে সরাসরি নিয়োগ হবে। কনস্টেবলদের থেকে পরবর্তী পদসমূহে পদোন্নতির ক্ষেত্রে একবার পরীক্ষায় পাশ করলে শূন্য পদের বিপরীতে পদোন্নতি দিতে হবে। পদোন্নতির সাথে সাথে শিক্ষানবিশ ঘোষণা করতে হবে। ইন্সপেক্টর বা তদূর্ধ্ব পদে পদোন্নতির জন্য অবশ্যই মাস্টার ডিগ্রি থাকতে হবে এবং পুলিশের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় (স্টাফ কলেজে) পুলিশ সংশ্লিষ্ট ডিগ্রির ব্যবস্থা করতে হবে।
০৮। কমিউনিটি ব্যাংক এবং সকল কল্যাণ তহবিলের সু-স্পষ্ট হিসাব প্রতিবছর সকলকে প্রদান করতে হবে এবং লোনের ক্ষেত্রে সুদের হার ৬% এর নিচে নিয়ে আসতে হবে। প্রয়োজনে বাংলাদেশ পুলিশ কল্যান ট্রাস্ট থেকে সমন্বয় করতে হবে।
০৯। ক) নবম গ্রেড থেকে পদোন্নতি প্রাপ্ত হয়ে ৬ষ্ঠ গ্রেড নিশ্চিত করতে হবে এবং একই পদে সর্বোচ্চ ৬ বছরের মধ্যে পদোন্নতির ব্যবস্থা করতে হবে।
খ) ইন্সপেক্টর থেকে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ চাকুরি হারালে সকলেই পেনশনসহ সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা পায়। কিন্তু কনস্টবল থেকে এসআই পর্যন্ত এই সুবিধা দিতে হবে এবং সারা বাংলাদেশে যে সকল সদস্যদের বরখাস্ত করে রাখা হয়েছে তাদেরকে মানবিক কারনে বিবেচনা করতে হবে।
১০। ক) প্রত্যেক পুলিশ সদস্যরে প্রতি বছর ২০ দিন নৈমিত্তিক ছুটির পাশাপাশি ২ মাস অর্জিত ছুটি বাধ্যতামূলক ভোগ করার ব্যবস্থা করতে হবে।
খ) প্রত্যেক পুলিশ সদস্য নিজ রেঞ্জে পর্যায়ক্রমে পদায়নের ব্যবস্থা করতে হবে এবং অধস্থন পুলিশ সদস্যদের ১০০% আবাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
১১। পুলিশের সকল সদস্য সকল ইউনিটে চাকুরি করার সুযোগ রাখতে হবে (স্বায়ত্বশাসিত এবং টেকনিক্যাল) বলে কোন ইউনিট থাকবে না ও সবাইকে সব ইউনিটে বদলীর সুযোগ থাকতে হবে। পুলিশ সুপারের নিচে বডিগার্ড, অর্ডালি নিয়ম বন্ধ করতে হবে।
আমাদের দাবী সমূহ ৭ কার্য দিবসের মধ্যে গেজেট আকারে প্রকাশ করতে হবে। অন্যথায় সমগ্র বাংলাদেশ পুলিশের কর্মবিরতি চলমান থাকবে।
আমরা জেলা পুলিশ, ময়মনসিংহ হতে অধস্তন সকল পুলিশ সদস্য রাজারবাগ পুলিশ লাইন, ঢাকা'র কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির ১১ দফা দাবির সাথে ঐক্যমত পোষণ করিলাম।
ভোরের আকাশ/ সু
মন্তব্য