-->
শিরোনাম

সাভার এনাম মেডিকেলে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত শিক্ষার্থীর অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ

কামরুল হাসান রুবেল, সাভার (ঢাকা)
সাভার এনাম মেডিকেলে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত শিক্ষার্থীর অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ

ঢাকার সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকদের অবহেলা ও কর্মচারীদের অসহযোগিতায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার রাতে রাকিব হোসেন (২০) নামের এক শিক্ষার্থী ওই হাসপাতালে মারা যান। এ ঘটনায় শনিবার সকালে চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ তুলে তাঁর বন্ধুসহ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। এ সময় তাঁরা জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তিমূলক ব্যবস্থাসহ ৯ দফা দাবি জানান। শিক্ষার্থীরা হাসপাতালের সামনে অবস্থান নিয়ে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বিক্ষোভ করেন। পরে কর্তৃপক্ষ তাঁদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে বিক্ষোভকারীরা লাশ নিয়ে চলে যান।

দুর্ঘটনায় আহত শিক্ষার্থীর নাম রাকিব হোসেন (২০) আশুলিয়ার পল্লী বিদ্যুৎ এলাকার হারুন অর রশীদের ছেলে। তিনি আশুলিয়ার বোরাক পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের চতুর্থ সেমিস্টারের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিনি শুক্রবার রাতে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন।

রাকিবের বন্ধু আশুলিয়ার এআরআই স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মো. আলিফ বলেন, ‘শুকবার তিনটি মোটরসাইকেল নিয়ে রাকিবসহ আমরা ছয় বন্ধু ঢাকায় বেড়াতে গিয়েছিলাম। ওই দিন দিবাগত রাতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক হয়ে আমরা ঢাকা থেকে আশুলিয়ার বাসায় ফিরছিলাম। রাকিব হোসেন ও আমাদের আরেক বন্ধু ওবায়েদ মারুফ এক মোটরসাইকেলে ছিল। ওরা আগে ছিল আর আমরা কয়েক কিলোমিটার পেছনে ছিলাম। শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে সাভার রেডিও কলোনি বাসস্ট্যান্ডে কাছে গিয়ে দেখি রাকিব ও মারুফ সড়কের ওপর শুয়ে কাতরাচ্ছে। আর ওদের মোটরসাইকেল পড়ে রয়েছে আরও দূরে। আমরা রাকিবকে উদ্ধার করে রাত ২টার দিকে এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যাই। সে মাথা, হাত ও পায়ে আঘাত পেয়েছিল। অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ায় মারুফকে পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।’

রাকিবের আরেক বন্ধু আশুলিয়ার টাঙ্গাইল রেসিডেনসিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান পাভেল বলেন, ‘রাকিবকে হাসপাতালের (এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল) জরুরি বিভাগে নেওয়ার পর সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা আমাদের ওষুধ কিনে দিতে বলেন। আমরা হাসপাতালের ডিস্পেন্সারিতে গিয়ে ওষুধ চাইলে সেখানকার দায়িত্বে থাকা কর্মচারীরা টাকা ছাড়া ওষুধ দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। নিরুপায় হয়ে আমরা জামানত হিসেবে মোটরসাইকেল ও চাবি রেখে ওষুধ চাইলে তাঁরা তাতেও রাজি হন না। পরে আমাদের পরিচিত ওই হাসপাতালের এক কর্মকর্তাকে জানালে তিনি ওষুধের ব্যবস্থা করে দেন। ততক্ষণে রাত ৪টা বেজে যায়। এরপর প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রাকিবকে আইসিইউতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সকাল ১০টার দিকে রাকিব মারা যায়।’

এদিকে রাকিবের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শতাধিক শিক্ষার্থী হাসপাতালে ছুটে আসেন। যাদের অনেকেই রাকিবের বন্ধু। তারা হাসপাতালে লাশ রেখে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ৯ দফা দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকেন। দাবিসমূহের মধ্যে রাকিব হত্যার বিচার, হত্যার সঙ্গে জড়িত সব চিকিৎসক ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া, চিকিৎসাসেবার নামে ব্যবসা বন্ধ করা, আগে টাকা পরে সেবা এই নিয়ম বাতিল করা, রোগী ভর্তি ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করা ও অতিরিক্ত ফি আদায় বন্ধ করার দাবি ছিল উল্লেখযোগ্য।

শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক রওশন আক্তার চৌধুরী শিক্ষার্থী ও নিহত রাকিবের স্বজনদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। বৈঠকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সমন্বয়ক নাজমুল ইসলাম ওই পরিচালককে তাঁদের দাবির কথা জানান। পরিচালক রওশন আক্তার চৌধুরী পর্যায়ক্রমে শিক্ষার্থীদের দাবি মানার আশ্বাস দিলে তাঁরা বিক্ষোভ বন্ধ করেন। এরপর রাকিবের স্বজনেরা তাঁর লাশ নিয়ে যান।

রাকিবের বড় ভাই হাবিবুর রহমান বলেন, ‘চিকিৎসকদের অবহেলার আমার ভাই মারা গেছে। আইসিইউতে ভর্তির পর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত একজন চিকিৎসকও আমার ভাইকে দেখতে যাননি। আর কর্মচারীরা তাঁদের দায়িত্ব পালনে বাড়াবাড়ি করেছেন এবং অসহযোগিতা করেছেন। যা মেনে নেওয়ার মতো নয়।’

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক রওশন আক্তার চৌধুরী বলেন, ‘রাকিবের চিকিৎসার ক্ষেত্রে কোনো অবহেলা হয়ে থাকলে তদন্ত করে আমরা দায়ী প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। শিক্ষার্থীদের অন্যান্য দাবিও পর্যায়ক্রমে পূরণ করব।’

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version