দরিদ্র পরিবারের সন্তান সনজু মিয়া(২৬) মারাত্মক সঙ্কটের মধ্যে দিন পার করছেন। অভাব অনটন পরিবারের উপার্জনক্ষম ছিলেন একমাত্র সনজুই। সংসার চালাতে কাজ করতেন শহরের একটি ওয়ার্কশপে। সেই কাজের টাকায় চলতো সনজুর দরিদ্র পরিবার। কে জানে ভয়াবহ বিপর্যয় আসবে সনজুর জীবনে।
বলছিলাম গাইবান্ধা সদর উপজেলার খোলাহাটী ইউনিয়নের মিয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. ইয়াসিন মিয়ার বড় সন্তান সনজু মিয়া কথা। বৃদ্ধ বাবার তিন সন্তানের মধ্যে সনজু সবার বড়।
গত ৪ আগস্ট, গাইবান্ধায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সংঘটিত একটি মিছিলে অংশ নিয়ে সনজু আহত হন। আন্দোলন চলাকালে পুলিশের অতর্কিত হামলায় তার বাম চোখে তিনটি এবং হাতে একটি রাবার বুলেট লাগে। গুরুতর আহত হয়ে সনজু মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। আন্দোলনে অংশ নেওয়া সহপাঠীরা তাকে তৎক্ষণাৎ গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে দ্রুত রংপুরের গ্লোবাল আই এন্ড হেল্থ কেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে দুই দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর সনজুকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার বাংলাদেশ আই হসপিটালে পাঠানো হয়।
বাংলাদেশ আই হসপিটালে সনজুর চোখ থেকে একটি রাবার বুলেট সফলভাবে অপসারণ করা সম্ভব হলেও, বাকি দুটি বুলেট এখনও চোখের ভেতরে রয়ে গেছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। তবে সনজুর উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে, যা দরিদ্র এই পরিবারের পক্ষে বহন করা অসম্ভব।
আহত সনজু বলেন, দেখলাম যে আশেপাশে সবাই মিছিলে যাচ্ছে। সেজন্য আমিও আর থাকতে পারিনি। মিছিলটি গাইবান্ধা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে গেলে পুলিশ অতর্কিতভাবে গুলি শুরু করে। গুলি লাগার পর বুঝতে পারি চোখে কিছু একটা লেগেছে এরপর আর আমি কিছু বলতে পারি না। পরে ছাত্র-ছাত্রীরা উদ্ধার করে আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে। আমার বাম চোখের তিনটি রাবার বুলেট লাগে। ঢাকার একটি হাসপাতাল থেকে একটি রাবার বুলেট অপসারণ করা হলেও বাকি দুটি এখনো রয়ে গেছে। আমি বাম চোখ দিয়ে কিছু দেখতে পাচ্ছি না এবং প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করছি। এই চোখ দিয়ে আদৌ দেখতে পারব কিনা জানিনা।
সঞ্জুর বাবা ইয়াসিন মিয়া বলেন, ওর আয় দিয়েই আমাদের পরিবারটা চলতো বাবা। এখন আমরা কেমনে চলবো বুঝতে পারছি না। ডাক্তারের যেভাবে বলেছে তাতে ওর চোখটা ভালো হওয়া সম্ভবনা খুবই কম। উন্নত চিকিৎসা করালে ভালো হওয়ার কিছুটা সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু আমাদের এই দরিদ্র পরিবারের পক্ষে উন্নত চিকিৎসা করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আমরা এত টাকা কোথায় পাব।
সনজুর বৃদ্ধ বাবা সমাজের বিত্তবান ও সহানুভূতিশীল ব্যক্তিদের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, এই বিপদে এগিয়ে এসে সনজুর চিকিৎসায় সহায়তা করেন। সনজুর দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনা না গেলে, তার এবং আমার পরিবারের জন্য ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে থাকবে।
ভোরের আকাশ/মি
মন্তব্য