-->
শিরোনাম

কক্সবাজারের সাবেক এমপি কমলের ১০০ কোটি টাকার সরকারি জমি দখল 

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার
কক্সবাজারের সাবেক এমপি কমলের ১০০ কোটি টাকার সরকারি জমি দখল 
কক্সবাজার-৩ আসনের সাবেক এমপি ও হুইপ সাইমুম সরওয়ার কমলের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকা মূল্যের সরকারি জমি আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। রামু-কক্সবাজার মহাসড়কের জোয়ারিয়ানালায় কক্সবাজার ক্রীড়া ও কারিগরি কলেজ নাম সম্বলিত সাইনবোর্ড টাঙিয়ে মহামূল্যবান সরকারি জায়গা দখল করা হয়েছে। 
 
জানা যায়, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে অনেকটা ফিল্মি স্টাইলে সশরীরে শতাধিক মোটরসাইকেল বহর নিয়ে জোয়ারিয়ানালা মহাসড়কের পাশে বর্তমানে স্বপ্নতরী পার্কের দক্ষিণ পাশের ধলিরছড়া মৌজার প্রায় ৩০ একরের অধিক জায়গাটি দখলে নেন সাবেক এমপি কমল। দখলকৃত জায়গায় ক্রীড়া ও কারিগরি কলেজের সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছেন। এদিকে দখলের ১৫ বছর অতিবাহিত হলেও অদ্যাবধি ওই জায়গায় কোনো ক্রীড়া কলেজের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
 
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, দখলকৃত বিশাল জায়গার একপাশে চার কক্ষবিশিষ্ট টিনশেডের একটি ভবন রয়েছে। যেটি এমপির প্রাপ্ত সরকারি বরাদ্দ দিয়ে নির্মিত। এছাড়া জায়গার চারপাশে নিয়ম বহির্ভূতভাবে স্থাপন করা হয়েছে সরকারি সোলার লাইট। নির্মিত ভবনের একটি কক্ষে আদর্শগ্রাম এলাকার এনামুল নামে এক ব্যক্তি পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। দখলে রাখা জায়গা দেখভালের জন্য হুইপ কমল তাদের পাহারাদার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন বলে জানান এনামুল।  
 
জানা যায়, রামু-কক্সবাজার মহাসড়কের জোয়ারিয়ানালা ধলিরছড়া মৌজার ১নং খাস খতিয়ানের ১০৩২৪নং দাগের প্রায় ২৯ একর জমিটি দখলের আগে সেখানে বনায়নের হাজার হাজার গাছে পরিপূর্ণ সবুজের সমারোহ ছিল। মাঝখানে বিশাল খোলা মাঠ এবং মাঠের চারপাশে ছিল বড় ছোট বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষে পরিপূর্ণ যেন অনবদ্য একটি দর্শনীয় স্পট। রশিদ নগর-জোয়ারিয়ানালা তথা রামুর মানুষজন কোলাহলমুক্ত একটু সতেজ ও প্রশান্তির আবহ অবলোকনের জন্য ছুটে যেত এই স্থানে।
 
এছাড়া স্থানীয়দের খেলাধুলা বিভিন্ন সংগঠনের মিলন মেলাসহ বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে মানুষের সরব পদচারণা ছিল এ জায়গায়। পরবর্তীতে অপূর্ব ছায়াঘেরা ও সবুজবেষ্টিত মহামূল্যবান সমতল পাহাড় শ্রেণির এই জায়গার ওপর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে স্থানীয় এমপির। তিনি উক্ত জায়গায় নামসর্বস্ব ক্রীড়া ও কারিগরি কলেজের সাইনবোর্ড টাঙিয়ে প্রায় চার হাজারের অধিক বৃক্ষ কেটে প্রায় ১৫ একর মতো জায়গা খোলা মাঠ ও সমতল ভূমিতে রূপান্তর করেন।
পরে দখল পাকাপোক্ত করতে ওই জায়গায় একটি ৪ কক্ষের টিনশেড ভবন নির্মাণ করেন।
 
এদিকে দখলকৃত জায়গার পূর্ব ও দক্ষিণ পার্শ্বে প্রায় ২০ একরের মতো জায়গা এমপির নিজস্ব লোক দিয়ে খণ্ড খণ্ড করে প্লট আকারে দখল বিক্রি করে কয়েক কোটি টাকা বাণিজ্য করেছেন বলেও স্থানীয়দের অভিযোগ।
 
বিক্রীত এসব জায়গায় ইতোমধ্যে গড়ে উঠেছে শত শত ঘরবাড়ি। এতে করে উক্ত স্থানের সৌন্দর্য যেমন নষ্ট হচ্ছে ঠিক তেমনি করে উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চল। পাশাপাশি সরকারের কোটি টাকার মূল্যবান সম্পদ বেহাত হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারদলীয় এমপি হওয়ার সুবাদে সাইমুম সরওয়ার কমলের দখলযজ্ঞ ও নানান অসঙ্গতির বিরুদ্ধে প্রশাসন ও এলাকায় মানুষ প্রতিবাদ করতেও সাহস করেনি। 
 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা জানান, সাবেক হুইপ কমলের অন্যায়-অনিয়ম, দুর্নীতি ও ভূমিদস্যুতাসহ নানান বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে দলের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে। তিনি প্রতিনিয়ত দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে লিপ্ত। ক্ষমতার অপব্যবহার করে নামে-বেনামে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন।
 
তিনি বলেন, দলবল সহকারে প্রকাশ্যে রশিদনগরে দখল করে নিয়েছে সরকারি শত কোটি টাকার জায়গা। পাশাপাশি তার সাঙ্গপাঙ্গদেরকেও ভূমিদস্যুতায় পৃষ্ঠপোষকতা করছেন। এমনকি রামুতে একটি জমি দখলকে কেন্দ্র করে বিচারককে ভাত খেতে দেবেন না, চাকরি করতে দেবেন না বলে প্রকাশ্যে হুমকি প্রদর্শন করে সংবাদের শিরোনামও হয়েছেন। তিনি আরও জানান, টানা ক্ষমতায় থাকার সুবাদে এমপি কমল অনেকটা দানবে পরিণত হয়েছিলেন। 
 
জোয়ারিয়ানালা ঘোনারপাড়া এলাকার মোস্তাক আহমদ ও আদর্শগ্রাম এলাকার কলিমুল্লাহ জানান, ২০০৯ সালের শুরুর দিকে দলবল সহকারে এসে সাবেক এমপি কমল জায়গাটি দখলে নেন। পরবর্তীতে ছোট বড় কয়েক হাজার গাছ কেটে ১৫ একর নিজের জন্য রেখে বাকি ১৫ একর জায়গা তার নিজস্ব লোকজনের মাধ্যমে খণ্ড খণ্ড করে প্লট আকারে দখল বিক্রি করেন। 
 
রামুর সুশীল সমাজের নেতারা জানান, রামুতে চিত্তবিনোদনের উল্লেখযোগ্য কোনো মাধ্যম এখনো হয়ে উঠেনি। তবে সম্প্রতি স্বপ্নতরী পার্ক স্থাপনের মাধ্যমে রামুর জনসাধারণের জন্য আনন্দ উদযাপনের একটি খোরাক সৃষ্টি হয়েছে।
 
তারা আরও জানান, সাবেক সাংসদ কমল কর্তৃক দখলকৃত সরকারি মহামূল্যবান জায়গাটি উদ্ধার করে স্বপ্নতরী পার্ককে সম্প্রসারণ করা হলে রামুর পর্যটনে একটি নতুন মাত্রা যোগ হবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।
 
জোয়ারিয়ানালা ইউপি জেয়ারম্যান কামাল শামশুদ্দিন প্রিন্স জানান, সাবেক এমপি ও হুইপ সাইমুম সরওয়ার কমল ক্রীড়া ও কারিগরি কলেজ নাম সম্বলিত সাইনবোর্ড টাঙিয়ে মহামূল্যবান সরকারি জায়গা দখল করার ১৫ বছরেও এখানে কোনো কলেজের অস্তিত্ব নাই। তিনি সরকারি সম্পদ উদ্ধারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
 
জানতে চাইলে রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাশেদুল ইসলাম জানান, ক্রীড়া ও কারিগরি কলেজ নাম সম্বলিত সাইনবোর্ড টাঙিয়ে সাবেক এমপি হুইপ সাইমুম সরওয়ার কমলের দখলে রাখা জমি সরকারি সম্পদ। জায়গাটি উদ্ধারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
 
ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version