-->
শিরোনাম

শেরপুর ডায়াবেটিক হাসপাতালের প্রতিষ্ঠা মহিয়সী নারী " রাজিয়া সামাদ ডালিয়া "

আমিরুজ্জামান লেবু, স্টাফ রিপোর্টার
শেরপুর ডায়াবেটিক হাসপাতালের প্রতিষ্ঠা মহিয়সী নারী
মহিয়সী নারী শেরপুরের মাদার তেরেসা খ্যাত রাজিয়া সামাদ ডালিয়া ঢাকার সোবহানবাগের নিজস্ব বাসায় আয়েশী জীবন ছেড়ে শেকড়ের টানে নিজ জন্মস্থান শেরপুরে এসে উদ্দ্যোগ নিলেন ডায়াবেটিক রোগীদের সেবা দিতে। যেই কথা সেই কাজ সবার সহযোগিতায় ১৯৯৭ সালে খরমপুর মহল্লার নিজ বাড়ীতে গড়ে তুললেন প্রথমে ডায়াবেটিক সেন্টার। বর্তমানে  মাধবপুর এলাকায় তা শেরপুর ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালে উন্নীত হয়েছে।
 
ডায়াবেটিক সেন্টার প্রতিষ্ঠার ইতিহাস স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ডালিয়া আপা জানান, ঢাকার লালমাটিয়ার নিজস্ব বাসায় থাকতেন তিনি। ১৯৮৮ সালের দিকে একদিন বাসায় ক'জন লোক এলেন। তাদের এক জনের কোলে এক কন্যাশিশু। তারা জানালেন, এ শিশুটিকে তারা পেয়েছেন। শিশুটির মা-বাবাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কি আর করা, শিশুটিকে নিজের কাছে রেখে দিলেন তিনি। রেডিও ও টেলিভিশনে হারানো বিজ্ঞপ্তি দিলেন। কিন্তু মেয়েটির কেউ খোঁজ করল না। শিশুটিকে তিনি লালন-পালন করতে লাগলেন। পরের বছর এক ব্যক্তি মৌচাক মার্কেটের পিছন থেকে পরিত্যক্ত একটি মেয়ে শিশু পেলেন। মাস দুয়েক লালন-পালন করলেন কবি গোলাম মোস্তফার বড় মেয়ে ফিরোজা বেগম। তখন তাঁর বেশ বয়স হয়েছে। তিনি খালা আম্মা বলে ডাকতেন তাকে।
 
তিনি বললেন, ডালিয়া শিশুটাকে নিয়ে কি যে করি। তিনি উত্তরে বললেন, শিশুটিকে আমাকে দিয়ে দেন। এরপর থেকে শিশুটির ঠাঁই হলো তাঁর ঘরে। নিজের দু' সন্তানের সাথে আরো ২ মেয়ে মিলে চার সন্তানের মা হলেন তিনি। এই দু' মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করতে গিয়ে মায়ের নাম লিখলেন ডালিয়া সামাদ আর পিতার নামের জায়গায় নিজের স্বামীর নাম আব্দুস সামাদ লিখে দিলেন। এভাবে এই বাড়ীতেই বড় হতে লাগল মেয়ে দু'জন।
 
একদিন এক খালা বললেন, ডালিয়া অসহায় মানুষের জন্য কাজ করতে চাস। তাহলে নিজের এলাকা শেরপুরে চলে যা।তিনি বললেন,আমিতো কাউকে চিনি না।
 
খালা বললেন, তুই যা, তোকে চিনতে হবে না।তোর কাজই মানুষ তোকে চিনে নিবে।
 
১৯৯০ সালে তিনি শেরপুরে চলে আসেন। কার ওষুধ লাগবে,কার সেবা লাগবে,কার রক্ত লাগবে এসব নিয়ে শুরু হলো তাঁর নতুন জীবন।
 
শেরপুর ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে  অসহায় রোগী ভর্তি,ওষুধ কিনে দেওয়া,গরীব কোন রুগী মারা গেলে তার লাশ বাড়ী পৌছে দেওয়া, কাফনের কাপড় কেনার টাকা পরিশোধ,জটিল বা মুমূর্ষু রোী ময়মনসিংহ বা ঢাকা নিয়ে যাওয়া সবি তিনি নিজের অর্থে করতেন।এভাবে শেরপুর থেকে এক ডায়াবেটিক রোগীকে বার বার ঢাকা বারডেম হাসপাতালে আনা-নেওয়া থেকে মাথায় আসে শেরপুরে বারডেমের একটি শাখা খোলা যায় কি না। যেই ভাবনা সেই কাজ। তাঁর চিন্তা থেকে ১৯৯৭ সালে ১০ অক্টোবর  নিজের খরমপুরের নিজ বাসায় চালু করা হলো ডায়াবেটিক সেন্টার। পরে এটি মাধবপুরে স্থানান্তর করা হয়। এখানে আধুনিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এ ডায়াবেটিক হাসপাতালের পরিচালনা পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি। বর্তমানে সম্প্রসারিত শেরপুর ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালে নিবন্ধিত রুগীর সংখ্যা প্রায় ৩২ হাজার। এখানে ৫ তলা ভবন হচ্ছে। প্রতিদিন  প্রায় ২০০ রোগী আউট ডোরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কিডনী রোগীদের জন্য ডায়ালাইসিস মেশিন বসানোর উদ্দ্যোগ নেওয়া হয়েছে।তবে এ মেশিন বসাতে ৪,৫০০ স্কয়ার ফুট জায়গার প্রয়োজন তিনি জানান।
 
হাসপাতালে দরিদ্র রোগীদের সহায়তার জন্য ডালিয়া আপা সুদমুক্ত ঋণ ও আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা চালু করেছেন। প্রতি বছর ৫ লাখ টাকার তহবিল থেকে একেক জনকে ১০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত সুদমুক্ত ঋন দেওয়া হয়। ইনসুলিন কিনতে দরিদ্র রোগীদের সহায়তার ব্যবস্থা রয়েছে। ঝিনাইগাতী উপজেলার ভালুকা গ্রামের খোদেজা বেগম জানান,১৪/১৫ বছর আগে তার ডায়াবেটিস ধরা পড়ে। এরপর থেকে ডায়াবেটিস হাসপাতালের চিকিৎসা নিয়ে আসছেন। ডালিয়া আপা বিনা সুদে ঋন পেয়েছেন ১৫ হাজার টাকা। ওই টাকা তুলে তার স্বামী কাঠ ব্যবসা করছেন। ওই ব্যবসা থেকে যে লাভ হয় তা দিয়ে ওষুধ কেনাসহ সংসার চালান তিনি।
 
প্রায় যুগ আগে একবার শ্রীবরদী উপজেলার বালিজুরী পাহাড়ী গ্রামের " ফাই মনি" মারাক নামের আদিবাসী গারো সম্প্রদায়ের মেয়ের কুষ্ঠ রোগ হয়। পরিবারের সদস্যরা এ রোগকে মরণব্যাধী আখ্যায়িত করে তাকে একটি টং বানিয়ে পাহাড়ের ঢালে বন্য প্রাণীর খাবারের জন্য রেখে দেয়। এ সংবাদ পেয়ে ডালিয়া আপা ওই গ্রামে গিয়ে ওই মেয়েকে নিজের বাসায় এনে চিকিৎসা করে সুস্থ করে তোলেন এবং মেয়েটিকে তার পরিবারের কাছে পছে দিয়ে আসেন। সেই মেয়েটি এখন সুস্ৎ জীবন যাপন করছেন।
 
ডালিয়া আপা প্রতিদিন সকালে রুটিন মাফিক হাসপাতালে যান এবং ডায়াবেটিস রোগীদের সাথে কথা বলে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের উদ্দ্যোগ নেন। পরে যান আনন্দধামে বাগানের পরিচর্যা করেন। 
 
ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version