-->
শিরোনাম

কুমিল্লায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে

বহুস্থানে গোমতীর বাধ ভাঙ্গার শঙ্কা

মো. শাহিদুল ইসলাম, কুমিল্লা 
কুমিল্লায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে

কুমিল্লার গোমতী নদীতে পানি বেড়ে টানা বৃষ্টি ও ঢলের পানিতে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। আশঙ্কা দেখা দিয়েছে গোমতী বেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার।

ইতিমধ্যে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আলেখারচর ব্রীজের উত্তর অংশে কামাড়খারা। এ অংশের বাঁধে পানি উত্তোলন লাইন ফেটে পানি বের হচ্ছে। এ সময় স্থানীয়রা বস্তায় মাটি ভরে বাঁধ শক্ত করে। প্রায় চার হাজার হেক্টর এলাকার ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। গতকাল রাত থেকে বৃষ্টি ও ঢলের পানি ক্রমাগতভাবে বাড়ছে।

গোমতীপাড়ের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, গত ১০ বছরের মধ্যে নদীটিতে এত পানি দেখেননি তাঁরা। পানি বাড়ায় চরাঞ্চলের সহস্রাধিক পরিবার বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে।

এদিকে আজ সকাল সাড়ে ১০টায় গোমতী নদীর পানি বিপদসীমার ৭০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান। তিনি জানান, কর্মকর্তারা ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো পরিদর্শন করছেন।

আজ সকালে কুমিল্লা গোমতী নদীর আদর্শ সদর উপজেলার বানাশুয়া, পালপাড়া, রত্নবতী, টিক্কারচর, জালুয়াপাড়া, বুড়িচং উপজেলার ভান্তি, শিমাইলখাড়া, পূর্বহুড়া, নানুয়ার বাজার, মিথলাপুর, গোবিন্দপুর, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মালাপাড়া, দেবিদ্বার উপজেলার জাফরগঞ্জ, ভিরাল্লা,বালিবাড়ি, সদর এবং ভিংলাবাড়ি ও মুরাদনগরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, গোমতীর দুই তীর ঘেঁষে আছড়ে পড়ছে ঢেউ। চরাঞ্চলের কয়েক হাজার একর সবজিখেত পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেক বাসিন্দা বাড়িঘর ছেড়ে বাঁধে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নিয়েছেন।

দেবিদ্বার সদর এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, তিনি পরিবার নিয়ে চরের ভেতর বসবাস করেন। গত ১০ বছর গোমতী নদীতে এত পানি দেখেননি। তাঁর স্ত্রী, সন্তান নিয়ে গোমতীর বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন।

টিক্কারচর এলাকায় শহর রক্ষা বাঁধে শতাধিক পরিবারকে আশ্রয় নিতে দেখা গেছে। চরের ভেতর কিছু কিছু জায়গায় পানি গলাসমান হয়ে গেছে। সেখানকার বাসিন্দারা বলেন, হুট করে পানি বাড়ায় ঘর থেকে প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই বের করতে পারেননি।

কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার কামারখাড়া অংশে গোমতী নদীর আইলে ফাটল ধরেছে। ফাটল অংশ দিয়ে পানি বের হচ্ছে। এতে আতংকিত হয়ে বেড়িবাঁধে আশ্রয় নিয়েছে পাঁচ শতাধিক পরিবারের সদস্যরা।

স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ এনামুল হক সোহেল জানান, গত দুই দিন ধরে বেড়িবাঁধের অবস্থা খারাপ। সকালে বিপৎসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিলো। এ সময় কামাড়খাড়া অংশে ফাটল দেখা দেয়।

অব্যাহত বৃষ্টি ও ভারত থেকে ধেয়ে আসা পানিতে ক্রমেই ফুঁসে উঠেছে কুমিল্লার গোমতী। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় পানি বিপদসীমার ৭০ সে:মি: ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি আরও বাড়তে পারে। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান।

তিনি বলেন, বাঁধ রক্ষায় সেনাবাহিনী, জেলা প্রশাসন, পাউবো, উপজেলা প্রশাসন, সংশ্লিষ্ট এলাকার পুলিশ, জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংগঠন, শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দরা কাজ করছেন। ওই কর্মকর্তার ভাষ্য, বাঁধের বেশ কিছু ঝুকিপূর্ণ অংশ দিয়ে গতকাল থেকে লোকালয়ে কিছু পানি বের হচ্ছে। যেখানেই আমরা খবর পাচ্ছি স্থানীয় জনগণের সহায়তায় পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা চলছে।

কুমিল্লা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবেদ আলী ভোরের আকাশকে জানান, জেলায় বুধবার পর্যন্ত ১৪টি আশ্রয় কেন্দ্র খুলা হয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আজ (বৃহস্পতিবার) আরও কয়েকটি বাড়তে পারে। বন্যা দুর্গতদের চাল ও শুকনো খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version