সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনিকে ২০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে ময়মনসিংহ নগরীর ঐতিহ্যবাহী আনন্দ মোহন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ পদ বাগিয়ে নিয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মো. আমান উল্লাহ। আর এই ঘুষকাণ্ডের মধ্যস্থতা করেছিলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী এনামুল হক শামীম। এমন ঘটনাসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে এই অধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে কলেজের ভেতরে-বাইরে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।সরেজমিনে আনন্দ মোহন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।
তারা জানান, অধ্যক্ষ আমান উল্লাহ বঙ্গবন্ধু পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কামাল উদ্দিন হল শাখা ছাত্রলীগের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন। আর দলীয় পরিচয়ে ২০২১ সালের ৮ আগস্ট বিতর্কিত শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনির সময়ে সাবেক প্রতিমন্ত্রী এনামুল হক শামীমের মধ্যস্থতায় ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে সিনিয়রদের ডিঙ্গিয়ে দলীয় প্রভাবে আনন্দ মোহন কলেজে অধ্যক্ষ পদ লাভ করেন আমান উল্লাহ।
আজিজুল হায়দার নামের এক শিক্ষার্থী তার ফেসবুক পোস্টে এসব তথ্য নিশ্চিত করে লিখেছেন, অধ্যক্ষ আমান উল্লাহ ক্ষমতার পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটেও নিজের পদ ধরে রাখতে নানা কারসাজি করছেন। ১৩ আগস্ট কলেজ হোস্টেলে থাকা শিক্ষার্থীদের একটি অংশকে হাতে নিয়ে তার পদত্যাগ দাবি করা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করানো হয়। এজন্য তিনি টাকা খরচ করে ওই শিক্ষার্থীদের হাত করেছেন। দলীয় প্রভাব বিস্তার করে নির্বাচন ছাড়াই শিক্ষক পরিষদের কমিটি গঠন করেছেন তিনি। বিধি লঙ্ঘন করে নিজের অনুগত সাদি হাসান খানকে বানিয়েছেন সাধারণ সম্পাদক। এমনকি কলেজের অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক কমিটিগুলোতেও তিনি সিনিয়রদের বাদ দিয়ে তার অনুগত প্রভাষকদের দিয়ে করেছেন নানা কমিটি। সেই সঙ্গে কলেজ ফান্ডের টাকা ছাত্রলীগের সাথে তার ভাগাভাগির অভিযোগ অহরহ।
অপর একটি সূত্র জানান, অধ্যক্ষ আমান উল্লাহ পদে থেকেই স্থানীয় আওয়ামী রাজনীতিতে সক্রিয়। তিনি ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়ীয়া) আসনে নৌকার মাঝি হয়ে সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য এলাকায় নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করতেন। কিন্তু ক্ষমতার পরিবর্তনে এখন তিনি ভোল পাল্টিয়ে বিএনপি নেতাদের আনুকূল্য পেতে লবিং- তদবির করছেন। এছাড়াও এই কলেজ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী জানান, করোনাকালীন সময়ে ফরম পূরণে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া বিপুল অঙ্কের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি হয়। কিন্তু অধ্যক্ষ আমান উল্লাহ শিক্ষার্থীদের টাকা ফেরত না দিয়ে ছাত্রলীগের সাথে ওই টাকা ভাগাভাগি করে আত্মসাৎ করেছেন। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণসহ নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তার বিরুদ্ধে রয়েছে আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ।
একই ধরনের মন্তব্য করে প্রতিষ্ঠানের উপাধাক্ষ্য প্রফেসর মো. নূরুল আফসার বলেন, অধ্যক্ষ নিয়োগে টাকা লেনদেনের বিষয়ে ক্যাম্পাসে প্রকাশ্য জনশ্রুতি রয়েছে। তিনি (অধ্যক্ষ আমান উল্লাহ) একটি দলের কট্টরপন্থি হওয়ার কারণেই তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এটাই ছিল শিক্ষামন্ত্রীর সিস্টেম। একটি বিশেষ শ্রেণির সাথে (ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগ) সখ্য গড়ে তিনি ক্যাম্পাসে অনেক কিছুই করেছেন। পরিবহনেও অনেক টাকা অনৈতিক লেনদেন হয়েছে। এসব কিছুই আমাকে জানানো হয়নি। আপনারা তদন্ত করলে আরও অনেক কিছু পাবেন।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ মো. আমান উল্লাহ এসব অভিযোগ সঠিক নয় দাবি করেছেন।
তিনি বলেন, যেকোনো সরকারের সময়ে নিয়োগ পেতে হলে মন্ত্রী-এমপিদের সহযোগিতা লাগবে, আমারও সেটা ছিল। তবে আমি কোনো টাকা দিইনি, টাকা ছাড়াই সাবেক প্রতিমন্ত্রী শামীম আমার জন্য সুপারিশ করেছেন। এরপর গোয়েন্দা রিপোর্টে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তরা আমাকে নিয়োগ দিয়েছেন। ছাত্র জীবনে আমি ছাত্র সংগঠন করেছি, এটা সবাই করে। তবে আমি কোনো শিক্ষার্থীদের হলে রেখে লালন করছি না, মূলত কলেজ ক্যাম্পাসে গ্রাফিতির কাজ করা শিক্ষার্থীদের আমি দুইদিন বিরিয়ানি খাইয়েছি।
ভোরের আকাশ/ সু
মন্তব্য