পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার মৌডুবী ইউনিয়নের খাসমহলের বাসিন্দা জামাল ভূইয়া। পরিবারের সবাই ডাকতেন শাহজামাল বলে। মৃত হারুল ভূইয়া ও মেহের জান দম্পতির ছয় ছেলে-মেয়ের মধ্যে জামাল ভূইয়া ছিলেন সবার ছোট। ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে পরিবার ছেড়ে ঢাকায় পাড়ি জমান বছর দুয়েক আগে। ভাগ্য বদলের চেষ্টায় বড় দুই ভাইয়ের সাথে নিজের সম্বলটুকুকে পুঁজি করে যোগ দেয় পোল্ট্রি মুরগির ব্যবসায়। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন ঠিকই কিন্তু নিজে ফিরলেন কফিন বন্দী হয়ে।
১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তথা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান চলাকালে বিজিবির গুলিতে নিহত হন ব্যবসায়ী জামাল। নারায়ণগঞ্জের জালকুড়ি বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ফরজ আলী চেয়ারম্যান মার্কেট এলাকায় তাদের পোল্ট্রি মুরগির দোকানে সেদিন বিকেলে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। নিজেদের পোল্ট্রি মুরগির দোকানে ক্যাশ কাউন্টারের পাশে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়েছিলেন জামাল। চিকিৎসার জন্য পার্শ্ববর্তী এক হাসপাতালে নেয়ার পথে মৃত্যু হয় তার।
নিহত জামাল দুইভাইয়ের সাথে দেখাশোনা করতেন পোল্ট্রি মুরগির ব্যবসা। এক ভাই গ্রামের বাড়িতে গেলে অপর দুইভাই সামলাতেন ব্যবসা। কখনোই বন্ধ হয়ে থাকতো না তাদের দোকান। যার কারনে তিন ভাইয়ের ব্যবসা চলছিলো বেশ ভালোভাবেই।
সাত মাসের অবুঝ শিশু আবদুল্লাহ যে পিতা হারিয়েছেন সে খবর হয়তো পৌঁছায়নি তার কাছে কিন্তু স্বামী হারানোর বেদনায় দিশেহারা জামালের স্ত্রী। অন্যদিকে পুত্র হারানোর শোকে মায়ের আহাজারি যেন থামছে না কোনোভাবেই। আদরের ছোটছেলে জামালের স্মৃতি চোখে ভাসছে; অনবরত চলছে মা মেহেরজানের আর্তনাদ।
নিহত জামালের বড়ভাই আলমাছ ভূইয়ার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘স্বৈরাচারী সরকার পতন হইছে, এ জাতি নতুন করে স্বাধীন দেশ পাইছে (পেয়েছে) কিন্তু আমি তো আমার ভাইরে আর পামুনা (পাবোনা)। আমি চিরদিনের জন্য আমার জোরের ভাই হারাইছি, কষ্টে আমার বুকটা হাইট্টা (ফেটে) যায়।’
কান্নাজরিত কন্ঠে আরো বলেন, ‘আমার ভাই যে চেয়ারটায় বইতো (বসতো) আমার পাশেই চেয়ারটা পড়ে আছে। কিন্তু আমার ভাই কবরে শুয়ে আছে। মনে হইতেছে আমার পাশে এখনো ভাই বইয়া (বসে) আছে। ও তো কোনো দোষ করে নাই ওরে ক্যান (কেনো) মারলো!’
ভোরের আকাশ/ সু
মন্তব্য