গাজীপুরে ময়লা বাণিজ্য ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে একজন নিহত হয়েছে। এছাড়া জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে যমুনা সার কারখানায় চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষে সংঘর্ষে অন্তত ৭জন আহত হয়েছে। শুক্রবার রাত ও বিকালে এ ঘটনা ঘটে।
গাজীপুরে নিহত যুবকের নাম ফাহিম। এলাকাবাসী জানায়, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শুক্রবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে গাজীপুর শহরের সাহাপাড়া এলাকার সৌরভ গ্রুপের সাথে একই থানার বরুদা এলাকার হিমেল-সাগর গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এসময় হিমেল গ্রুপের ২/৩ জন দেশীয় অস্ত্র দিয়ে সৌরভ গ্রুপের ফাহিম নামক এক যুবককে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে। আহত ফাহিমকে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। ঘটনায় আনুমানিক ৪/৫ জন আহত হয়েছে। উভয় পক্ষই স্থানীয় বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের সদর জোনের সহকারী কমিশনার মো. মাকসুদুর রহমান জানান, শুক্রবার রাতে এলাকার আধিপত্য নিয়ে দুই গ্রুপে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বলে জানতে পেরেছি। একজন আহত হওয়ার খবর পেয়েছি। তাকে উদ্ধার করে এলাকাবাসী শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক মোস্তাক আহমেদ জানান, ফাহিমকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পরে চিকিৎসার জন্য তাকে হাসপাতালের সার্জারি বিভাগ ভর্তি করা হয়। এমতাবস্থায় ১০টার দিকে ফাহিম মারা যায়।
কালিয়াকৈরে সংঘর্ষ: কালিয়াকৈরের মৌচাক বাজার সমিতির সভাপতি মাসুদ পারভেজ কয়েক বছর ধরে মৌচাক শিল্পাঞ্চলের প্রতিটি বাসাবাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন। তিনি জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোহসিন সরকারের ভাই। মাসুদ পারভেজ তার কর্মচারী খাইরুল ইসলামকে দিয়ে ময়লা-বাণিজ্য সামলাতেন। প্রতি বাড়ি থেকে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা আদায় করতেন খাইরুল। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ওই ময়লা-বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করেন মৌচাক ইউনয়ন শ্রমিক দলের সভাপতি উমর আলী ফারুক। উমর আলী ফারুকের পক্ষের লোকজন খাইরুলের কাজে বাধা দিলে মাসুদ পারভেজ ও তার ভাই মোহসিন সরকার এগিয়ে আসেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সন্ধ্যায় মৌচাক বাজার এলাকায় মাসুদ পারভেজের লোকজন এবং উমর আলীর লোকজনের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে উভয়ের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এতে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ১০ জন আহত হন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় মাসুদ পারভেজ (৪০) ও তার ছেলে নুর আলম সিদ্দিকী (১৮) এবং মৌচাক এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম (৩৮) ও হুমায়ূন আহমেদকে (৪০) স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং আরও সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
আহত মাসুদ পারভেজ বলেন, তিন দিন ধরে আমাদের সঙ্গে ময়লা ব্যবসাকে কেন্দ্র করে উমর আলীদের সঙ্গে ঝামেলা হচ্ছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় হঠাৎ করেই উমর আলীর লোকজন আমাদের ওপর হামলা চালায়।
কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ এফ এম নাসিম বলেন, মৌচাক বাজারে সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। এ বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জামালপুরে প্রতিদিন চাঁদা ওঠে ৬৫ হাজার টাকা: জামালপুরের সরিষাবাড়ীর তারাকান্দিতে যমুনা সার কারখানায় আওয়ামী লীগ সরকার শাসনামলে চাঁদাবাজি হয়ে আসছিল। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ৮ আগস্ট থেকে সরিষাবাড়ী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির ৩নং সদস্য চান মিয়া চানুর নির্দেশে লিটন মিয়ার নেতৃত্বে অংকন ও উজ্জ্বলের মাধ্যমে গাড়িপ্রতি ৬৫০ টাকা হারে চাঁদাবাজি হয়ে আসছিল। তার প্রতিবাদে উপজেলা বিএনপির সদস্য বিশিষ্ট সার ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান তোতার নেতৃত্বে একদল বিএনপিকর্মী প্রতিবাদ করলে চাঁদাবাজ চক্র তাদের উপর হামলা করে। এতে বজলু, খোকন, মুকুল, জুলহাস, মুসা, শাহিন ও ফারুক আহত হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লেবারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, লেবার বকশিসের নামে গাড়িপ্রতি ৬৫০ টাকা চাঁদার ভাগ আমরা লেবাররা কোন টাকা পাই না। এই টাকা অংকন ও উজ্জ্বল বিএনপির দাপট দেখিয়ে আত্মসাৎ করে আসছে। এক প্রশ্নের জবাবে তারা আরো বলেন, প্রতিদিন গড়ে ১শ গাড়ি আনলোড হচ্ছে। সে হিসেবে প্রতিদিন প্রায় ৬৫ হাজার টাকা চাঁদাবাজি হচ্ছে।
এ ব্যাপারে যমুনা সার কারখানার প্রশাসন জিএম দেলোয়ার হোসেন জানান, চাঁদাবাজির বিষয়টি কারখানা কর্তৃপক্ষ অবগত নয়। বিষয়টি বাহিরের ব্যাপার। এ ব্যাপারে আমাদের কিছু করার নেই।
এলাকাবাসী জানায়, বিদেশ ও ঘোড়াশাল সার কারখানা থেকে আমদানি করা সার যমুনা সার কারখানায় আনলোড ও লোডিং কাজে দখলদারত্ব ও চাঁদাবাজি নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে।
ভোরের আকাশ/ সু
মন্তব্য