লক্ষ্মীপুরের রামগতি-কমলনগর উপজেলার মেঘনা নদীতে ইলিশ ও পোয়া মাছের পরিবর্তে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে রুই, কাতল, তেলাপিয়া ও পাঙাশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এক সপ্তাহ ধরে মেঘনা উপকূলের অস্বাভাবিক জোয়ার ও চর পোড়াগাছা, চর বাদামসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হওয়ায় ভেসে গেছে পুকুর, মাছের ঘের, খাল-বিল ও জলাশয়। এর ফলে পুকুরে চাষের মাছ ছড়িয়ে পড়েছে খালে-বিলে। এসব দেশীয় মাছ খাল-বিল হয়ে জোয়ারের পানিতে মিশে চলে আসে মেঘনায়। মাছ ধরার এ উৎসবে নৌযান ও জেলেদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে সাধারণ মানুষ।
উপজেলার মেঘনার পাড় এবং সংলগ্ন বেশ কয়েকটি খালে সরেজমিন দেখা গেছে, শত শত মানুষ জাইজাল দিয়ে মাছ ধরছে। ভাটির সময় মেঘনায় জাল দিয়ে মাছ ধরছেন বড়খেরী এলাকার জমির উদ্দিন। তিনি জানান, তিন ঘণ্টায় প্রায় ১৫ কেজির মতো মাছ পেয়েছেন তিনি। এসবের মধ্যে রয়েছে তেলাপিয়া, রুই, কাতল, মৃগেল, পাঙাশসহ নানা প্রজাতির দেশীয় মাছ। এসব চাষের মাছ কীভাবে কোথা থেকে মেঘনা নদীতে আসছে, জানতে চাইলে তিনি জানান, জোয়ার ও বন্যার পানিতে পুকুর ও প্রজেক্ট ভেসে যাওয়ায় নদীতে এসেছে। অন্যরা ধরছে দেখে শখের বশে মেঘনায় জাইজাল দিয়ে মাছ ধরতে আসা বিবিরহাট চর গোঁসাই এলাকার নাজিম উদ্দীন জানান, ভাটার সময় খালে-নদীতে ভালো মাছই পাওয়া যায়।
রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার আসলপাড়া মাছঘাট এবং রামগতি বাজার মাছঘাটে গিয়ে দেখা যায়, নদী থেকে মাছ ধরে আসা তীরে অপেক্ষমাণ নৌকা থেকে জেলেরা জুড়িতে (ট্রে) করে দেশীয় মাছ আনছেন ক্লান্তিহীনভাবে। ঘাটে পর্যাপ্ত পাইকার এবং সাধারণ ক্রেতা থাকায় বিক্রিও জমে উঠেছে উপজেলার ৬টি মাছঘাটসহ সবগুলো মাছের বাজার। সকাল ৯টার দিকে আলেকজান্ডার এবং রামগতি বাজারের মাছের শেডে গিয়ে দেখা গেছে রীতিমতো দেশীয় মাছ কেনাবেচার ধুম চলছে। বাজারগুলো ঘুরে দেখা যায়, দুই-তিন কেজি ওজনের কাতল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩০০ টাকা। এক থেকে দেড় কেজি ওজনের কাতল ২০০ থেকে আড়াইশ টাকা, তেলাপিয়া ১৫০ থেকে ১৮০, মৃগেল ১৫০, পাঙাশ ১২০ থেকে ১৫০, রুই ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি। ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতিতে সরগরম বাজারগুলো। দামে সস্তা হওয়ায় ক্রেতারাও কিনছেন বেশি পরিমাণে। কথা হয় আলেকজান্ডার বাজারে মাছ কিনতে আসা মাসুদের সাথে। তিনি জানান, ছয় কেজি ওজনের দুটি কাতল মাছ কিনলাম ৬০০ টাকা দিয়ে। আলেকজান্ডার আসলপাড়া মাছঘাটে কথা হয় কয়েকজন জেলে ও আড়ত মালিকের সাথে। তারা জানান, মেঘনা নদীর খুব কাছের অগভীর উপকূলে ইলিশ ধরা জালেই এসব দেশীয় মাছ ধরা পড়ছে। বেশি পরিমাণে ধরা পড়ায় দামেও সস্তা। পাইকারদের পাশাপাশি সাধারণ ক্রেতাও ডাকে অংশ নিয়ে মাছ ক্রয় করছেন।
উপজেলা মৎস্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবারের বন্যা ও অস্বাভাবিক জোয়ারে উপজেলার ৭ হাজার ৫০০টি পুকুর, ঘের ও জলাশয় ভেসে গেছে। এতে প্রায় আড়াই কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। চাষ করা এসব মাছ জোয়ার ও বন্যায় ভেসে খাল-বিল হয়ে নদীতে আসছে। রামগতি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন জানান, প্রতিদিনই ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হচ্ছে। মৎস্য বিভাগ যে নির্দেশনা দেবে, সে অনুযায়ী কাজ করা হবে।
ভোরের আকাশ/ সু
মন্তব্য