-->

পাট চাষে লোকসান গুনছে গাইবান্ধার কৃষকরা

রিফাতুন্নবী রিফাত,গাইবান্ধা
পাট চাষে লোকসান গুনছে গাইবান্ধার কৃষকরা

উত্তরের জনপদ কৃষি নির্ভর জেলা গাইবান্ধা। এ জেলায় ধান, গম, ভুট্টা,আখ, সবজি চাষের পাশাপাশি প্রতি বছরেই পাট চাষ করেন প্রান্তিক কৃষকরা। কিন্তু হঠাৎ করেই উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর বৃষ্টির কারণে জেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলে বন্যায় অনেক কৃষকের পাট নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তার কিছু পরে আবার পানি নেমে যাওয়ায় যখন পাট কেটে জাগ দেওয়ার সময়, তখন আবার পর্যাপ্ত পানি না থাকায় মাটি খুঁড়ে পাট জাগ দিতে হয়েছে। এতে নষ্ট হয়েছে পাটের গুণগত মান। ফলে দামও তুলনামূলক কম পাচ্ছেন কৃষকরা।

গাইবান্ধা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার ৭টি উপজেলায় এ বছর ১৬ হাজার ২৫৪ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে উৎপাদন হয়েছে ১৩ হাজার ৭৯০ হেক্টর। আর বন্যায় নষ্ট হয়ে গিয়েছে ১৪শত ৩ হেক্টর।

সরেজমিনে জেলার সদর উপজেলার কামারজানি,ঘাঘোয়া, গিদারী, মালিবাড়ী, কুপতলা সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর,কঞ্চিবাড়ি, শ্রীপুর, বাবুর বাজার, ছকের বাজার, উত্তর ধুমাইতাড়ি, বেলকা, হরিপুর,কাঁপাশিয়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায় পাট ধোঁয়ার পর পাটকাঠি শুকাতে দিচ্ছেন কৃষকরা।

সদর উপজেলার খামার কামারজানি এলাকার পাট চাষি রফিকুল ইসলাম (৬০) বলেন, বাবা দুঃখের কথা কি কমো এবার কতো কষ্টে টাকা জোগার করি ৪বিঘা মাটিতে ৪০ হাজার টাকা খরচ করি পাট লাগাছিলাম। এবারের বন্যায় ১১২ শতক জমি'র পাট একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে। মাত্র ২০ শতক জমির কিছু পাট হয়েছে, তাও তেমন একটা ভালো হয়নি। বর্তমানে বাজারে পাট মণ প্রতি বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২০০ টাকা। যে টুকু পাট পাইছি সেগুলো বিক্রি করলে সর্বোচ্চ ৬-৭ হাজার টাকা হবে।

আরেক চাষি রানা মিয়া (৩৫) বলেন, এবার ২ বিঘা জমিতে পাট লাগাছিলাম কিন্তু সর্বনাশি বন্যার কারণে অনেক পাট গাছ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তাই এবার পাট চাষে যে ২৯ হাজার টাকা খরচ করেছি তার অর্ধেক টাকাও উঠবে না। এভাবে লোকসান হলে আর কেমনে আমরা পাট চাষে করবো।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার উত্তর ধুমাইতাড়ি এলাকার কৃষক জাহিদুল ইসলাম বলেন, বাড়ির পাশে ২০ শতক জমিতে পাট লাগাছিলাম কিন্তু বন্যায় নষ্ট হওয়ার পরেও কিছু পাট ছিল, সে পাট গুলাই জাক দিয়ে আঁশ ছড়ানোর কাজ শেষ করে এখন মাঠে রোদে শুকাতে দিচ্ছে পাটকাঠি।

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম ভোরের আকাশকে বলেন, অতি বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে দ্বিতীয় দফায় যে বন্যা হয় সে বন্যায় প্রায় ১৪শত ৩ হেক্টর জমির পাট নষ্ট হয়েছে। এতে প্রায় ৩৮,০০০ হাজার কৃষক এই পাট চাষে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ৩৮ কোটি টাকার মতো ক্ষতি সাধন হয়েছে এই পাট চাষে। এই ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের আমরা প্রয়োজনীয় পরামর্শ,বিশেষ করে যাদের পাট নিমজ্জিত হয়েছিল সে সময় তাদের আমরা দ্রুত কর্তনের পরামর্শ দিয়েছি।

তিনি আরো বলেন, যে সকল কৃষকের পাট পুরোটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে তাদের আমরা তালিকা করেছি। পরবর্তীতে আগাম রবি ফসল কিংবা ভুট্টা অথবা বোরো ইত্যাদি ফসলে তাদেরকে আমরা প্রানোদনা আওতায় নিয়ে আসবো। বীজ এবং সার তাদেরকে আমরা যেন বিনামূল্যে বিতরণ করতে পারি। সেজন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা প্রেরণ করেছি। অনুমোদন পেলেই কৃষকদের সহযোগিতা করতে পারবো। ইতি মধ্যেই মাসকালাই এবং পিঁয়াজের প্রানোদনা পেয়েছি। আমরা এই ক্ষতিগ্রস্ত পাট চাষিকে গ্রীষ্মকালীন মাসকালাই এবং পিঁয়াজ ফসলে তাদেরকে আওতায় আনতে পারবো।

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version