-->
শিরোনাম

দুটি হাউজিং কোম্পানিকে সুবিধা দেয়ার জন্য প্রকল্পের নকশা বদলের অভিযোগ

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
দুটি হাউজিং কোম্পানিকে সুবিধা দেয়ার জন্য প্রকল্পের নকশা বদলের অভিযোগ

প্রকল্প অনুমোদনের পরেও দুটি হাউজিং কোম্পানিকে সুবিধা দেওয়ার জন্য নকশা বদলের অভিযোগ উঠেছে স্টিলআর্চ সেতুর সংযোগ সড়ক প্রকল্পের বিরুদ্ধে। শনিবার ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর পক্ষে মো. মোশাররফ হোসেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ জানান।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ৩ হাজার ২৬৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ময়মনসিংহের কেওয়াটখালি সেতু নির্মাণ প্রকল্পের সংযোগ সড়কের নকশা পরিকল্পনায় ত্রুটি বিচ্যুতি ও স্থানীয় ভুক্তভোগীদের সঙ্গে সমঝোতা অমীমাংসীত রেখেই তড়িঘড়ি করে ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্নের মাধ্যমে প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা লুটপাট নিশ্চিত করতে যাচ্ছে জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ কেন্দ্রিক সংঘবদ্ধ একটি চক্র।

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, ময়মনসিংহ হাউজিং এবং ব্রহ্মপুত্র হাউজিং এই দুটি প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দিতে অনুমোদিত প্রকল্পের নকশা নিজেদের মতো করে পরিবর্তন করে ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া চালু রেখেছে। গত আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে রাজনীতিতে জড়িত ব্যক্তিদের সুবিধা দিতেই মূলত এই অপপ্রয়াস চালানো হচ্ছে।

এতে একদিকে সেতুর সংযোগ সড়কের দূরত্ব বাড়ছে, অন্যদিকে সরকারি খাস জমির পরিবর্তে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির ওপর দিয়ে রাস্তা তৈরির অপচেষ্টা করা হচ্ছে। ময়মনসিংহ ব্রহ্মপুত্র নদীর ওপর অস্ট্রেলিয়ার সিডনি হারবার ব্রিজের আদলে কেওয়াটখালি সেতু নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর সঙ্গে রাজধানী ঢাকার নিরাপদ, উন্নত ও ব্যয় সাশ্রয়ী যোগাযোগ স্থাপনের জন্য সরকার ময়মনসিংহে এই সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ইতোমধ্যে সড়ক অধিদপ্তর প্রকল্প কাজের ব্যাপারে যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন ও বাংলাদেশের স্প্রেক্টা ইঞ্জিনিয়ার্সের মধ্যে চুক্তিসই সম্পাদন করেছে। দেশে নতুন প্রযুক্তির এই স্টিল আর্চ (ধনুক) ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ৩৩ দশমিক ২ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত রয়েছে। মূলত এই অধিগ্রহণ খাতে মাত্রাতিরিক্ত টাকা ব্যয়ের অপকৌশলেই সেতু প্রকল্পের সংযোগ সড়কগুলো ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকা দিয়ে নির্মাণের ত্রুটিপূর্ণ নকশা করার অভিযোগ উঠেছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, অভিজ্ঞ প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, সেতুর সংযোগ সড়কটি ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাইপাস মোড় থেকে শুরু হয়ে কেওয়াটখালি এসে সেতুর পশ্চিম প্রান্তে যুক্ত হয়েছে। কিন্তু সেতুর পূর্ব প্রান্তের সংযোগ সড়কটি উত্তর-পূর্ব দিকে কিছুটা অগ্রসর হয়ে আবার পেছন ফিরে পশ্চিম দিকে দুটি রেলওয়ে ওভারপাস ফ্লাইওভার আকারে পেরিয়ে টোল প্লাজা পর্যন্ত পৌঁছে আবারও উত্তর দিকে চায়না মোড়ের দিকে অগ্রসর হয়েছে। অথচ সেখানেও সংযোগ সড়কটি যুক্ত না করে দুটি র‌্যামে বিভক্ত করা হয়।

বিভক্ত একটি র‌্যামকে পূর্ব দিকে চলমান চার লেন মহাসড়কে একশ’ মিটার ওভারপাস দ্বারা ক্রস করে উত্তর পাশ দিয়ে রংধনুর আকৃতিতে যাওগরা স্কুলের সামনে মূল সড়কে সংযুক্তি দেখানো হয়। আরেকটি র‌্যাম চারলেন মহাসড়কের দক্ষিণ পাশ যাওগরা স্কুলের বিপরীত পাশে মূল রাস্তায় মিলিত হয়েছে। কিন্তু ফ্লাইওভারটি পেছন দিকে না ঘুরিয়ে সরাসরি নেয়া হলে অন্তত এক হাজার মিটার সংযোগ সড়ক কমে যেত।

এক্ষেত্রে এক হাজার কোটি টাকা নির্মাণ ব্যয় যেমন কমত, তেমনি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ভূমি অধিগ্রহণেরও প্রয়োজন হতো না। কারণ সংযোগ সড়কটি সরাসরি নেওয়া হলে সেখানে বেশিরভাগই ছিল সরকারি খাস ভূমি। ফলে ভূমি অধিগ্রহণ খাতে মাত্র এক তৃতীয়াংশ খরচ হতো বলেও সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা মন্তব্য করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, স্থানীয় ভুক্তভোগীদের পক্ষে ও নিজ উদ্যোগে মো. মোশারফ হোসেন এ ব্যাপারে বিস্তারিত উল্লেখ করে সরাসরি সাবেক প্রধানমন্ত্রী, ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক ও সচিব, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ সহ কেওয়াটখালি সেতু নির্মাণ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রায় সকলকেই লিখিতভাবে অবগত করেছেন। কিন্তু এখনো কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি।

ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, ত্রুটিপূর্ণ নকশায় ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে সংযোগ সড়কটি ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকা ও শতাধিক মিল-কারখানা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নেওয়া হয়েছে। এই বিষয়টি ঘিরেই শুরু হয়েছে ভূমি অধিগ্রহণ কেন্দ্রিক লুটপাটের কার্যক্রম।

জমির শ্রেণির পরিবর্তন করাসহ কারও নিচু নামা চাষাবাদের ভূমিকে ভিটে বাড়ি দেখানো, টিনের বস্তি সাদৃশ্য ঘরকে বিরাট আয়তনের কারখানা হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে। লাখ টাকার সম্পদ-স্থাপনাকে কয়েক কোটি টাকা মূল্য নির্ধারণের নকশা আঁকাআঁকির অপকর্ম চলছে প্রকাশ্যেই। এসব কারণে কেওয়াটখালি সেতু নির্মাণ প্রকল্পের বিপুল পরিমাণ টাকা যেমন অপচয় হচ্ছে, অপরদিকে প্রকল্পটি কাক্সিক্ষত জনকল্যাণ নিশ্চিতকরণে ব্যর্থ হওয়ারও আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।

মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, সামগ্রিক বিষয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় আছে পুরো জেলাবাসী। বিষয়টি সুষ্ঠ তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং তদন্তের স্বার্থে চলমান ভূমি অধিগ্রহণ সহ যাবতীয় কার্যক্রম স্থগিত করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় আদেশদানে সবিনয় অনুরোধ করে।

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version