-->
শিরোনাম

সেনা টহলে শান্ত সাভার-আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের পরিবেশ

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি
সেনা টহলে শান্ত সাভার-আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের পরিবেশ

সাভারের আশুলিয়ার শিমুলতলায় বন্ধ থাকা দি ড্রেস এন্ড দি আইডিয়াস পোশাক কারখানার শ্রমিকরা আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে কারখানার সামনে অবস্থান নিয়েছিল। কারখানা খুলে দেয়ার দাবিতে অর্ধশতাধিক শ্রমিক কারখানার মূল ফটক ও কারখানা উল্টোপাশে একটি বিপনি-বিতানের সামনে অবস্থান করেছিলেন। একই এলাকায় অবস্থিত নাবা নীট কম্পোজিট লিমিটেড কারখানাটিও বন্ধ রয়েছে।

দি ড্রেস এন্ড দি আইডিয়াস কারখানার একাধিক শ্রমিক জানান, মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে সড়কে টহলরত সেনাবাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে তাঁরা কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে শ্রমিকদের সড়কে অবস্থান না করা এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয় এমন কোনো কাজ না করতে অনুরোধ করেন।

শ্রমিকরা জানান, দি ড্রেস এন্ড দি আইডিয়াস কারখানা কর্তৃপক্ষ শনিবার চারজন মহিলা সুপারভাইজার ও একজন লাইনম্যানকে চাকরিচ্যুত করেন। পরদিন রোববার থেকে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সোমবার রাত দেড়টার দিকে শ্রমিকরা জানতে পারেন ট্রাকে করে কারখানা থেকে যন্ত্রপাতিসহ মালামাল সরিয়ে ফেলছেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। পরে ভোরে তারা কারখানার সামনে অবস্থান নেন। মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে সড়কে টহলরত সেনাবাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং বিষয়টি নিয়ে কারখানা মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানান।

এছাড়া সেনাবাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের সড়ক অবরোধসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয় এমন কোন কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানান।

আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে কারখানার সামনে গিয়ে দেখা যায়, কারখানার মূল ফটকের সামনে বেশ কয়েকজন শ্রমিক অবস্থান করছেন। কারখানার অপর পাশের একটি বিপনি-বিতানের সামনে অর্ধশতাধিক শ্রমিক অবস্থান নিয়ে আছেন। কারখানার ফটকে টাঙানো রয়েছে বন্ধের নোটিশ।

আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১ এর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অধিকাংশ কারখানায় কাজ শুরু করছেন শ্রমিকরা। কয়েকটি কারখানা বন্ধ রয়েছে। গত কয়েকদিনের বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ করে চলা বিক্ষোভের চিত্র দেখা যায়নি কোথাও। শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন সড়কে টহল দিচ্ছেন সেনাবাহিনী, শিল্পপুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা।

পলাশবাড়ী এলাকার গিল্ডান বাংলাদেশ নামের পোশাক কারখানা বন্ধ অবস্থায় দেখা যায়। সকালে নাসা গ্রুপের কারখানায় শ্রমিকরা কারখানায় উপস্থিত হলে কাজ না করায় কারখানা ছুটি ঘোষণা করে কারখানা কর্তৃপক্ষ।

গিল্ডান বাংলাদেশ কারখানার নিরাপত্তা রক্ষী মো. মিন্টু বলেন, আমাদের সব কারখানা অনর্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ। গত কয়েকদিন শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করে। মঙ্গলবার কেউ আসেনি। এদিকে সোমবার ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরন অঞ্চলের (ডিইপিজেড) মূল ফটকে নবীনগর থেকে চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করে চাকরিপ্রার্থীদের দিনভর বিক্ষোভ থাকলেও মঙ্গলবার ওই এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। ডিইপিজেডের ভেতরের কারখানাগুলোতে কার্যক্রম চলছে নির্বিঘ্নে।

বেপজার নির্বাহী পরিচালক (জনসংযোগ) আনোয়ার পারভেজ বলেন, ডিইপিজেডের পুরাতন এবং সম্প্রসারিত জোনে মোট ৮৬ টি শিল্পকারখানা রয়েছে। সবগুলো কারখানায় শান্তিপূর্ণভাবে কাজ চলছে।

আজ বেলা সাড়ে ১২টার দিকে আশুলিয়ায় শিল্পাঞ্চল পুলিশ- ১ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, সাভার ও আশুলিয়ায় আজকের পরিস্থিতি স্বাভাবিক। শ্রমিকরা নির্দিষ্ট সময়ে কাজে যোগ দিয়েছেন। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। কয়েকটি কারখানায় শ্রমিকরা কাজ না করায় ছুটি দিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। বন্ধ থাকা এবং ছুটি দেয়া কারখানার সংখ্যা নির্ণয়ে তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তবে সংখ্যাটি খুব বেশি নয়। দি ড্রেস এন্ড দি আইডিয়াস পোশাক কারখানার মালিকপক্ষের সঙ্গে বিকেলে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করা হবে।

প্রসঙ্গত, মজুরি, হাজিরা বোনাস, শ্রমিক ছাটাই বন্ধ, নিয়োগসহ নানা দাবিতে সাভার- আশুলিয়া ও গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে গত কয়েকদিনের শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে। এ পরিস্থিতিতে সোমবার শিল্পকারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি অস্থিরতায় ইন্ধনদাতাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও শিল্প পুলিশের যৌথ অভিযান শুরু করার নির্দেশনা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর নেতারা সোমবার বিকেলে উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে শিল্পের নিরাপত্তায় শক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান। এরপরই যৌথ অভিযানের নির্দেশনা আসে। এরপর থেকেই আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চলের পরিস্থিতি শান্ত হয়।

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version