-->

কেন্দ্রীয় বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিসের বিরুদ্ধে এবার বাড়ি দখলের অভিযোগ

বরিশাল প্রতিনিধি
কেন্দ্রীয় বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিসের বিরুদ্ধে এবার বাড়ি দখলের অভিযোগ

সরকারি পুকুর দখলের ঘটনায় দলের পদ হারানোর পর এবার বিএনপির কেন্দ্রীয় বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিনের বিরুদ্ধে তিনতলা বাড়ি দখলের অভিযোগ উঠেছে। প্রায় দুই কোটি টাকা মূল্যমানের বাড়িটির মালিক এবিএম সালাউদ্দিন খান মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে পথে পথে ঘুরছেন। শিরিনের হুমকির ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন সালাউদ্দিন। সরকারের নানা দপ্তরে অভিযোগ করেও তিনি প্রতিকার পাননি।

সালাউদ্দিন জানান, বরিশাল সিটি করপোরেশনের ১৬নং ওয়ার্ডের ব্রাউন কম্পাউন্ড রোডের বগুড়া আলেকান্দা মৌজার জেএল ৫০, এসএ ৮৬৫১ খতিয়ানের ৩ শতাংশ জমির মালিক ছিলেন তার মা হাসিয়ারা বেগম। তার মৃত্যুর পরে ওয়ারিশ অনুসারে তিন ছেলে ও তিন মেয়ের সম্পত্তি পাওয়ার কথা। তবে সম্পত্তি ভাগের আগেই বড় ভাই মহিউদ্দিন খান ও বোন ডালিয়া আক্তার ১ শতাংশ জমি বিক্রি করেন প্রতিবেশী বিএনপি নেত্রী বিলকিস জাহান শিরিনের ছোট ভাই শহিদুল ইসলাম শামীমের স্ত্রী মারিয়া আক্তার মুন্নির কাছে।

এক্ষেত্রে শর্ত থাকে, জমিতে যতদিন পুরোনো ভবন থাকবে, মারিয়া আক্তার মুন্নি নিচতলা ভোগদখল করবেন। বড় ভবন নির্মাণ করার পর অংশীদারিত্ব অনুসারে সম্পত্তি ভাগের সিদ্ধান্ত ও বন্টন হবে।

সালাউদ্দিনের একাংশ দোতলায় ভাড়াটিয়া এবং বাকি অংশে আরেক ভাই মৃত মনিরুজ্জামান কামালের পরিবারের সদস্যরা থাকতেন। ২০১৯ সালে বাড়ির ১ শতাংশ জমি কিনে নিচতলা দখলে নেয়ার কিছুদিন পরে ভাড়াটিয়াকে নামিয়ে বাড়ি দখলে নেন মুন্নি। এ ঘটনায় বাধা দিতে গেলে সালাউদ্দিনকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়। এ ঘটনার পর তিনি ওই বছরের ১১ নভেম্বর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।

সালাউদ্দিন বলেন, এরপরে বাড়ির তিনতলা নির্মাণ শুরু করেন শিরিনের ভাই। সেই ঘটনায়ও আমি থানায় অভিযোগ দায়ের করি। এ নিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর ও গণমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে শালিসে প্রমানিত হয় তারা পুরো বাড়ি দখলে নিতে পারেন না। এর পর থেকে তারা কারও কথা শোনেন না। ১ শতাংশ কিনে পুরো ভবন দখলে নিয়ে আমাকে বাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়া হয়। এখন তিনতলা তৈরি করে সেখানে বসবাস করে নিচতলা ভাড়া দিয়েছেন। বরিশালে আসলে এখানেই ওঠেন বিলকিস জাহান শিরিন।

সালাউদ্দিন বলেন, সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহর শ্বশুরের বাড়ি আর শিরিনের বাসা পাশাপাশি। শিরিনের সঙ্গে তাদের ভালো সর্ম্পক। শুধু তা-ই নয় আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, সাদিক আবদুল্লাহর সঙ্গে গভীর সখ্যতা রেখে চলেন তিনি। এ কারণে আওয়ামী লীগের আমলে তিনি প্রকাশ্যে আমার বাড়ি দখল শুরু করেন। তখন আমি সিটি করপোরেশনসহ সব দপ্তরে অভিযোগ করি। সিটি করপোরেশন থেকে আমাকে শিরিনের সঙ্গে আপস করার কথা বলা হতো। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরে বরিশালে একক আধিপত্য বিস্তার করেছেন শিরিন। এজন্য আমি বরিশালেও থাকতে পারছি না।

তিনি বলেন, বিগত পাঁচটি বছর ধরে আমি পথে পথে ঘুরছি। ঘরে ফিরতে পারছি না। বরিশালেও থাকতে দিচ্ছে না। লুকিয়ে আসি আবার লুকিয়ে চলে যাই। বিলকিস জাহান শিরিনের লোকজন দেখলে আমাকে মেরে ফেলবে। সরকারের কোনো দপ্তর থেকে বিচার পাচ্ছি না। এখন অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায়, তাই বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক, সেনাবাহিনীর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।

ব্রাউন কম্পাউন্ড এলাকায় গিয়ে শিরিনের বাড়ির খোঁজ করলে স্থানীয়রা তার ছোট ভাই শামীমের স্ত্রীর নামে ১ শতাংশ কিনে দখল করা ভবনটিকে দেখিয়ে দেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুজন ভবন মালিক জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দিন ব্রাউন কম্পাউ‌ন্ডের সরকারি পুকুরটি বালু দিয়ে ভরাট করেন শিরিন। এই তথ্য সেনাবাহিনীকে জানালে শিরিন তার সহযোগীদের নিয়ে এলাকার মানুষকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। শিরিনের ভয়ে কেউ কথা বলতে পারেন না। যে বাড়িটিতে থাকেন সেটিও দখলের। মূলত শিরিন নিজেকে নিরাপদ রাজনীতিবিদ দেখাতে তার সব সম্পত্তি ভাইয়ের স্ত্রীর নামে কেনেন। এই বাড়িটির ১ শতাংশ ভাইয়ের স্ত্রীর নামে কিনে পুরো বাড়িটি দখলে নেন।

তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে বিলকিস জাহান শিরিন বলেন, আমি কোনো ভবন দখল করিনি। প্রায় ৮০ বছরের পুরোনো আমার পিতার বাড়ি ব্রাউন কম্পাউন্ডের আরশাদ মঞ্জিল। আমি এ ভবনে থাকি। আমিও শুনেছি, একজন অভিযোগ করে বেড়াচ্ছেন। সেই অভিযোগে আমার নাম লেখেনি। আমার কোনো এক আত্মীয়ের নাম লিখেছে। এগুলো আমি জানি না।

তিনি আরও বলেন, কয়েকদিন পরে কত মানুষ আরও কত কি লিখবে! এগুলো কি চলতেই থাকবে এরকম প্রশ্ন রেখে বলেন, যারা দলের হয়ে কাজ করেন না, বিভিন্ন সময়ে সুবিধা নিয়েছেন, আওয়ামী প্রশাসনের সঙ্গে সর্ম্পক আছে—তারা এগুলো করছে। দেখবেন মাছ বাজার, ঘাট, বাস টার্মিনাল দখল করে ফেলেছে। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে আমি দলের পাশে ছিলাম। অথচ ওই সময়ে যারা দলের পাশে ছিল না তারা আমাকে সমস্যা মনে করবেই। আমার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য এসব অভিযোগ একটি অপচেষ্টা।

এদিকে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় ও বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে এবিএম সালাউদ্দিনের অভিযোগ দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে কোনো কর্মকর্তা কথা বলেননি। অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে বলে তাদের তরফে জানানো হয়েছে।

গত ১১ আগস্ট বিলকিস জাহান শিরিনের দলীয় পদ-পদবি স্থগিত করা হয়। স্থানীয় বিএনপি নেতারা বলেছেন, ব্রাউন কম্পাউন্ডে ১০ কোটি টাকার সরকারি পুকুর ভরাট করে দখল এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকে সুবিধা নেয়ার ঘটনায় শিরিনের পদ স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র। যদিও কি কারণে শিরিনের পদ স্থগিত করা হয়েছে তা এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট করেনি দলটি।

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version