-->
শিরোনাম

চট্টগ্রামে ৮ দফা দাবিতে সনাতনীদের সমাবেশ

জেলা প্রতিনিধি (চট্টগ্রাম)
চট্টগ্রামে ৮ দফা দাবিতে সনাতনীদের সমাবেশ

চট্টগ্রামে দেশব্যাপী হিন্দুদের ওপর নির্যাতন, ঘর-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মঠ-মন্দিরে হামলা ও উৎসব মণ্ডলের ওপর হামলার প্রতিবাদ এবং ৮ দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টায় নগরীর জামালখান মোড়ে সড়ক সম্মিলিত সনাতনী সমাজের ব্যানারে এ মানবন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন পুন্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী। এছাড়া বিভিন্ন মঠ-মন্দিরের পুরোহিত ও বিভিন্ন হিন্দু সংগঠনের নেতারা অংশ নেয়।

সমাবেশ শুরুর আগে থেকে বৃষ্টি উপেক্ষা করে সমাবেশ স্থলে দলে দলে আসতে থাকে বিভিন্ন হিন্দু সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সমাবেশে আসা নারী-পুরুষের হাতে হাতে ছিল বিভিন্ন দাবি সম্বলিত প্লে-কার্ড। সমাবেশের শুরুতে সমবেত কন্ঠে পরিবেশন করা হয় জাতীয় সংগীত।

তুমি কে আমি কে সনাতনী সনাতনী, আমার মাটি আমার মা বাংলাদেশ ছাড়ব না, মঠ-মন্দিরে হামলা কেন জবাব চাই, দিতে হবে, আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না, একাত্তরের হাতিয়ার গর্জে ওঠ আরেকবার, সন্ত্রাসীদের কালো হাত জ্বালিয়ে দাও, গুঁড়িয়ে দাও, তোমার দেশ, আমাদের দেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ-এমন নানা স্লোগান দিতে থাকে আন্দোলনকারীরা।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, গত ৫ আগস্ট পরবর্তী দেশের ৪৯টি জেলায় সনাতনীদের বাড়ি, মন্দির ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছে। গণমাধ্যমের প্রকাশিত সংবাদে ৫ থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত ১ হাজার ৬৮টি সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছে। আসন্ন দুর্গাপূজা নিয়ে আমরা সনাতনীরা শঙ্কিত । এছাড়া দুর্গাপূজায় ছুটি বাড়ানোর বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেয়নি সরকার। সেই বিষয়ে আমরা জানতে চাই।

বক্তারা আরো বলেন, সরকার আসে সরকার যায় কিন্তু সনাতনীদের ভাগ্য কখনো বদল হয় না। কিছু হলেই সনাতনীদের ওপর হামলা করা হয়। মঠ-মন্দিরসহ বাড়িঘরে ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করা হয়। কিন্তু ৫৩ বছরে এদেশে কোনো সরকার সনাতনীদের হামলার বিচার করেনি। সনাতনীদের ওপর হামলার যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে তার কারণে হামলকারীরা বারবার উৎসাহিত হয়।

এদিকে সমাবেশে আসা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি আফসার আহমেদ সমাবেশে বক্তব্য রাখার সময় উত্তেজনা তৈরি হয়। এসময় তাকে ভুয়া ভুয়া বলে ডাকতে থাকে আন্দোলনকারীরা। পরে তিনি বক্তব্য শেষ করে দ্রুত মঞ্চ ত্যাগ করেন।

৮ দফা দাবিসমূহ হলো-সংখ্যালঘুদের নির্যাতনে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি প্রদান, সাম্প্রদায়িক হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা, অনতিবিলম্বে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন বাস্তবায়ন করতে হবে, সংখ্যালঘু বিশেষ মন্ত্রণালয় গঠন করতে হবে এবং হিন্দুদের জন্য সংখ্যানুপাতিক হারে সংসদীয় আসন বরাদ্দ করতে হবে, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে ফাউন্ডেশনে উন্নীত ও পাশাপাশি বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান কল্যাণ ট্রাস্টকে ফাউন্ডশনে রূপান্তর করতে হবে, দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন বাস্তবায়ন করতে হবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রার্থনালয় ও মন্দির প্রতিষ্ঠা করতে হবে, সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ডের আধুনিকায়নসহ শিক্ষার্থীদের গবেষণাক্ষেত্র ও চাকরী নিশ্চিত করতে হবে , যে সমস্ত সনাতন ধর্মের বিভিন্ন ইতিহাস ও দর্শন বিকৃত করে ইতিহাসে যুক্ত করা হয়েছে তা অবশ্যই অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে এবং শারদীয় দুর্গাপূজায় ৫ দিনের ছুটি নিশ্চিত করতে হবে।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের অধ্যক্ষ লীলারাজ গৌর দাস ব্রহ্মচারী, নন্দনকানন মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক তারণনিত্যানন্দ দাস ব্রহ্মচারী, তপোবন আশ্রমের অধ্যক্ষ প্রাঞ্জলানন্দ পুরী মহারাজ, পটিয়া পাচুরিয়া তপোবন আশ্রমের অধ্যক্ষ রবীশ্বরানন্দ পুরী মহারাজ, বাঁশখালী ঋষিধামের মোহন্ত সচিদাননন্দ পুরী মহারাজ, শ্রীমৎ মুরারী দাস বাবাজী, শ্রীমৎ কৃষ্ণ দাস, শ্রীমৎ স্বরূপ দাস, উজ্জ্বলানন্দ ব্রহ্মচারী, সম্মিলিত সনাতনী সমাজ বাংলাদেশের সমন্বয়ক স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাস ব্রহ্মচারী, কাঞ্চন আচার্য্য, ডা. যীশুময় দেব, সুব্রত দাশ আকাশ, টিটু শীল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি আফসার আহমেদ।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version