-->

কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে ভেঙেছে সেতু, ক্ষুব্ধ মানুষ

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে ভেঙেছে সেতু, ক্ষুব্ধ মানুষ

‘বড় একটা শক্ত সেতু নির্মাণের লাইগ্যা (জন্য) আমরা দীর্ঘদিন দাবি জানাইছি (জানিয়েছি)। সেতু দিছে (দিয়েছে) ঠিকই। কিন্তু দুর্বল। সেতুর দুই গুঁড়ার অনেকটা জায়গাজুড়ে ঢালাই দিছে না। তারাহুরো কইরা (করে) সেতু নির্মাণ কইরা কর্মকর্তারা দ্বায়িত্ব শেষ করছে। এখন অল্প সময়ে সেতু ধসে পড়ছে, এতে আমরা আবারও দুর্ভোগে পড়ছি (পড়েছি)কথাগুলো বলছিলেন ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার উচাখিলা ইউনিয়নের মরিচারচর গ্রামের দিনমজুর আফজাল মিয়া।

গত ২১ আগস্ট ভোরে একই গ্রামে অবস্থিত স্টিলের সেতু ভেঙে পড়ে যায়। এতে সড়কের দুই পাশে থাকা লোকজন চরম দুর্ভোগে পড়ে। কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণেই সেতুটি ভেঙে পড়ে গেছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

দিনমজুর দেলোয়ার হোসেন জানান, পৌর শহর, ত্রিশাল ও ময়মনসিংহ শহরে দ্রুত পৌছানোর এটিই একমাত্র সড়ক। হঠাৎ সড়কের মাটি সড়ে গিয়ে সেতুটি ভেঙে পড়ে যায়। এখন এই সড়কে সিএনজি, অটোরিকশা, রিকশা ও মোটরসাইকেল নিয়ে চলাচল করা যাচ্ছে না। ফলে সবাই সীমাহীন ভোগান্তি পোহাচ্ছে।

স্থানীয় সুলতান আহমেদ মাসুম বলেন, স্টিলের সেতু নির্মাণের আগে একই জায়গায় একটি কালভার্ট ছিল। গত বছর বৃষ্টির কারণে কালভার্টের দুই পাশের মাটি সরে যাওয়ায় কালভার্টটি ভেঙে পড়ে যায়। ওই বছর একই জায়গায় স্টিলের সেতু নির্মাণ করা হয়। আগের কালভার্ট মাটি সরে যাওয়ার কারণে ভেঙে পড়লেও শিক্ষা নেয়নি সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা। স্টিলের সেতুর দুই পাশের অনেকটা অংশ ঢালাই না করে নির্মাণ করা হয়। ২০ আগস্ট রাতে ভারী বৃষ্টিপাত হয়। এতে বুধবার ভোরে আবারও সেতুর নিচ থেকে মাটি সরে গিয়ে সেতুটি ভেঙে পড়ে যায়।

কৃষক জফলুল হক বলেন, এই উপজেলায় প্রচুর পরিমাণে সবজিসহ নানা ধরনের ফসল উৎপাদন হয়। এসব ফসল তিন চাকার বিভিন্ন যানবাহনে করে এই সড়কের সেতুটি পার হয়ে স্থানীয় উচাখিলা বাজারে নিয়ে বিক্রি করা হয়। কিন্তু সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় এই সড়ক দিয়ে সবজি বাজারে নেয়া যাচ্ছে না। বিভিন্ন সড়ক ঘুরে সবজি নিতে খরচ দিতে হয় কয়েকগুণ বেশি। ফলে সবজি বিক্রি করে লাভ করা যাচ্ছে না।

অটোরিকশাচালক রুবেল মিয়া বলেন, আগে প্রতিদিন ৮০০-৯০০ টাকা ভাড়া মারতে পারলেও এখন সেতু ভাঙা অংশের পর থেকে সারাদিনে মাত্র ২০০-৩০০ টাকা ভাড়া মারা যায়। এতে সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছি।

৬০ বছর বয়সী সাবেক শিক্ষক আব্দুল কাদির বলেন, উপজেলার উচাখিলা ও রাজিবপুর ইউনিয়নের ১৪টি গ্রামের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ এই সড়ক দিয়ে চলাচল করে। এই দুই ইউনিয়নে বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। হঠাৎ সেতুটি ভেঙে পড়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়েছে। উপজেলা প্রশাসন থেকে সেতুর পাশে একটি বাশের সাঁকো তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এটি ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা হেঁটে হেঁটে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে স্কুলে যাচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে একই জায়গায় আগের চেয়ে আরও বড় একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।

ইউএনও সারমিনা সাত্তার বলেন, দুর্ভোগ কিছুটা নিরসনের জন্য বাশের সাঁকো তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। তবে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ ময়মনসিংহের নির্বাহী প্রকৌশলী কে বি এম সাদ্দাম হোসেন বলেন, আগের নির্মিত কালভার্ট স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর করেছে। পরে এই সড়কটি সড়ক ও জননপথ বিভাগের আওতাধীন চলে আসে। গত বছর স্টিলের সেতুটি নির্মাণের সময় আমাদের গাফিলতি ছিল না। প্রবল বৃষ্টিপাতে হঠাৎ সেতুর দুই পাশের মাটি সরে যাওয়ার কারণে ভেঙে পড়ে যায়। দ্রুত সময়ের মধ্যে আবারো সেতু নির্মাণ করা প্রয়োজন উল্লেখ করে অধিদফতরে জানানো হয়েছে। অনুমতি পেলে নির্মাণকাজ শুরু হবে।

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version