-->

ইলিশে সয়লাব কক্সবাজার, তবুও সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে

এইচ এম ফরিদুল আলম শাহীন, কক্সবাজার
ইলিশে সয়লাব কক্সবাজার, তবুও সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে

ঝাঁকে ঝাঁকে ট্রলার ভর্তি ইলিশ মাছ নিয়ে সাগর থেকে ফিরছেন কক্সবাজার উপকূলের জেলেরা। বিশেষ করে কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে জমজমাট ইলিশের বাজার। কিন্তু দাম চড়া। ব্যাপক হারে ইলিশের দেখা মিললেও সাধারণের নাগালের বাইরে ইলিশ মাছ। শহরের ফিশারিঘাটের পাইকারি মাছের বাজার মৎস্য অবতরণকেন্দ্র চড়া দামে বেচাবিক্রি হচ্ছে ইলিশ। সেখান থেকে কিনে ট্রাকবোঝাই করে রুপালি ইলিশ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার হাটবাজারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুধু যে দেশের বিভিন্ন শহরে ইলিশ ঢুকছে তাই নয়, কক্সবাজারের ইলিশ যাচ্ছে যাচ্ছে ভারতেও। আসন্ন দুর্গা পূজাকে সামনে রেখে ভারতে বৈধ-অবৈধ পথে ঢুকছে বাংলাদেশের ইলিশ।

জেলেরা জানান, বিরুপ প্রকৃতির কারণে সাগর উত্তাল রয়েছে। যে কারণে ছোট আকৃতির নৌ-যানগুলো সাগরের ৭০-৯০ কিলোমিটার গভীরে পৌঁছে ইলিশ ধরতে পারছে না।

কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুল হান্নান বলেন, ঘনঘন লঘুচাপের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর এলাকায় দমকা ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। সাগর উত্তাল রয়েছে। এ কারণে কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে অবশ্য কোনো সতর্ক সংকেত নেই। মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার ঝাঁকে ঝাঁকে আসছে আর যাচ্ছে। কারণ ইলিশ ধরার নেশা যে মাথায় রয়েছে জেলেদের।

শহরের বাঁকখালী নদীর নুনিয়াছটা ফিশারিঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছ নিয়ে ঘাটে ভিড়েছে ১৩৫টির বেশি ট্রলার। প্রতিটি ট্রলারে ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ ইলিশ। জেলেরা ট্রলারের ইলিশ ডিঙিনৌকায় তুলে বাজারে নিয়ে আসছেন।

মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কয়েকটি স্তূপে অন্তত ১০ হাজার ইলিশ দেখা যায়। বেশির ভাগ ইলিশের ওজন ৭০০-৯০০ গ্রাম। বাজারে ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ (পাইকারি) বিক্রি হয়েছে ৮৫০ টাকা কেজিতে। অন্যদিকে ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১ হাজার ১০০ টাকা, ১ কেজি ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৪০০ টাকা এবং ১ কেজির বড় ইলিশ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ১ হাজার ৭০০ টাকায়।

সকালে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ১ হাজার ২০০টি ইলিশ বিক্রি করে প্রায় ১১ লাখ টাকা পেয়েছেন এফবি খাজা নামে একটি ট্রলারের জেলেরা। ট্রলারটির মালিক শহরের উত্তর নুনিয়াছটার ব্যবসায়ী নুরুল হক কোম্পানি। তিনি বলেন, ২১ জন জেলে নিয়ে ১০ দিন আগে ট্রলারটি ৬০ কিলোমিটার দূরে জাল ফেলে। প্রথম দুই দিন ইলিশ ধরা পড়েছে খুবই কম। এরপর আরও ১০-১৫ কিলোমিটার গভীরে গিয়ে জাল ফেললে ৭০০ ইলিশ ধরা পড়ে। আরও গভীর সাগরে জাল ফেলা গেলে ইলিশ আরও বেশি ধরা পড়ত।

সম্প্রতি বৈরী আবহাওয়া, ৬৫ দিন বন্ধ থাকার পর জেলেরা সাগরে মৎস্য আহরণে নামতে পারেনি। তাই দীর্ঘদিন কোলাহল মুক্ত ছিল কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। গত একদেড় মাস ধরে জেলেরা বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে সাগর থেকে জাল ফেলে আহরণ করছেন রূপালী ইলিশ।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন তবু ও গত বছরের তুলনায় রূপালী ইলিশের আহরণ বেড়েছে অনেক বেশী কক্সবাজারে।

জেলার ডিজিটাল আইল্যান্ড মহেশখালী, সাগরদ্বীপ কুতুবদিয়া, সোনাদিয়া, টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন দ্বীপের জেলেদের জালে ধরা পড়ছে রূপালী ইলিশ। বিশেষ করে ভাদ্র মাসের শুরু থেকে ঝাঁকেঝাঁকে ধরা পড়ছে রূপালী ইলিশ। জেলেরা শুধু যে ইলিশ ধরছে তা না রূপচাঁদা সামুদ্রিক কোরালসহ নানা প্রজাতির মাছ ধরছে।

জেলা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের তথ্যমতে ২০২৩ সালের আগষ্ট থেকে সেপ্টেম্বরের ২৬ তারিখ পর্যন্ত ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আহরণ হয়েছিল ৮৮১ টন। আর চলতি বছর আগষ্ট থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯৬৮টন।

মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে দৃশ্যমান বেশী মাছ দেখা গেলে ও বাড়তি দাম নিয়ে হতাশ ক্রেতারা। ব্যবসায়ীদের দাবী চলতি বছর যেকোন সময়ের ছেয়ে মাছের দাম চড়া।যেকারণে বেশী দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে মাছ।

কক্সবাজার ফিশিং বোট মালিক সমিতির সভাপতি নজির আহমদ কোম্পানি বলেন,জালানী তেল,পরিবহন, শ্রমিক খরচসহ নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় মাছের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।

কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক জিএম রব্বানী বলেন, মাছের বাজার চড়া থাকলে ও চাহিদা ও বিক্রি বেড়েছে। তবে সাধারণের নাগালের বাইরে। তবে তিনি এটাও বলেছেন মানুষের জীবনযাত্রায় দৈনন্দিন ব্যয় বেড়েছে, সেই তুলনায় ইলিশসহ বিভিন্ন মাছের দামবাড়া ও অস্বাভাবিক কিছু নয়।

এদিকে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদরুদ্দোজা বলেন, সাধারণ ক্রেতা পর্যন্ত যেতে ৪/৫ বার হাত পরিবর্তন হয় ইলিশসহ অন্যান্য মাছের। ফলে প্রতি কেজি মাছ সাধারণ ক্রেতা পর্যন্ত পৌঁছতে ১৫০/২০০ টাকা বাড়তি গুনতে হয়। এক কথায় সিন্ডিকেটের হাতে সবাই জিম্মি। শহরের বড় মাছ বাজার বাহারছড়া গিয়ে দেখা যায় সেখানে ও ২/৩ দফা হাত বদল হয়ে মাছ যাচ্ছে সাধারণ ক্রেতার হাতে।

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version