-->
শিরোনাম

গাইবান্ধায় ভাঙন আতঙ্কে নদীপাড়ের বাসিন্দারা

রিফাতুন্নবী রিফাত,গাইবান্ধা
গাইবান্ধায় ভাঙন আতঙ্কে নদীপাড়ের বাসিন্দারা

কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ আর উজানের ঢলে দফায় দফায় গাইবান্ধার তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট ও করতোয়া পানি বাড়তে শুরু করেছিল। তবে গত ৩-৪ দিন থেকে সবগুলো নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। পানি কমতে থাকায় করতোয়া, তিস্তা নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ফলে হুমকির মধ্যে রয়েছে ফসলি জমি। ইতিমধ্যে বিলীন হয়েছে শতাধিক ঘরবাড়ি। ঝুঁকিতে রয়েছে দুই হাজারও বেশি পরিবার।

বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) দুপুর ৩টায় গাইবান্ধা পাউবোর নিয়ন্ত্রণকক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘন্টায় ২ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়েছে।

এদিকে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৪০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘন্টায় ৪ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়েছে। ঘাঘট নদীর পানি জেলা শহরের নতুন ব্রিজ পয়েন্টে বিপদসীমার ৩২৫ সেন্টিমিটার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘন্টায় ১১ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়েছে। করতোয়ার পানি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার চকরহিমাপুর পয়েন্টে বিপদসীমার ১৩৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘন্টায় ৫২ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়েছে।

করতোয়া নদীর অববাহিকার পলাশবাড়ী ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার অন্তত চারটি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। গত এক সপ্তাহে পলাশবাড়ী উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের কিশোরগাড়ী এলাকার অন্তত ৬০ টি ঘর-বাড়ি নদীতে ভেঙে গেছে। এলাকায় ঝুকিতে রয়েছে অন্তত সাত শতাধিক পরিবার। নদী ভাঙন তীব্র হওয়ায় ঘর বাড়ি অন্য এলাকায় নিয়ে যাচ্ছেন নদী পাড়ের বাসিন্দারা।

সদর উপজেলার কামারজানি,মোল্লারচর,খাটিয়ামারি, ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ও উরিয়া ইউনিয়নের কয়েকটি চরে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্রের ডান তীরে এই ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর, কাপাসিয়া, শ্রীপুর, চন্ডিপুর ইউনিয়নের পাঁচ শতাধিক বিঘা ফসলি জমি ও অন্তত শতাধিক বসতবাড়ি তিস্তায় বিলীন হয়েছে।

খাটিয়ামারি চরের বাসিন্দা শাহ্ কামাল মিয়া বলেন, বন্যায় ফসলের তেমন কোনো ক্ষতি না হলেও নদীভাঙন অব্যাহত রয়েছে। আবার নদীর পাড় ভাঙতে ভাঙতে কখন যেন ফসলি মাঠ ও ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাই। নদীভাঙন প্রতিরোধে কোনো ব্যবস্থাও নিচ্ছেন না কেউ।

পলাশবাড়ী উপজেলার কিশোরগাড়ী এলাকার শামছুল হক (৪৫) বলেন, গত এক সপ্তাহে আমাদের এলাকার প্রায় ৬ একর জমি করতোয়া নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। এলাকায় সাত শতাধিক পরিবার ঝুকিতে রয়েছে। অনেকেই ঘরবাড়ী সরিয়ে নিয়েছে। আমার প্রায় ৩ বিঘা জমি হারিয়েছি। ফসলি জমিসহ বাকি জমিগুলো হুমকির মধ্যে রয়েছে। করতোয়ার পানি বৃদ্ধি ও কমলে এলাকায় ভাঙন শুরু হয়। এই পর্যন্ত দুইবার ভাঙনের শিকার হয়েছি। এখনই ব্যবস্থা না নিলে বসতভিটাসহ আবাদি জমি নদী গর্ভে যাবে।

কৃষক শাহজাহান মিয়া (৩৫) বলেন, সরদারপাড়ার মসজিদ ও মাদ্রাসা দুটিই বেশি ঝুকিতে রয়েছে। যে কোনো সময় নদীতে ভেঙে যেতে পারে। আমন ধানের জমি নদীতে ভেঙে যাচ্ছে। এ এলাকাটি এখন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কেউ এখানে ভাঙন প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া নেয়নি। জরুরি ভিত্তিত্বে নদী ভাঙন রোধ না করলে, পুড়া গ্রাম নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক ভোরের আকাশকে জানান, গত এক সপ্তাহে আগে সব জেলার নদ-নদীর পানি বেড়েছিল। তবে এখন কমছে। ভাঙন এলাকাগুলো চিহ্নিত করা হচ্ছে। ভাঙন রোধে একটি সমীক্ষা কমিটি গঠন করা হয়েছে, কমিটির প্রতিবেদন পেলেই কার্যক্রম প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে। তবে ভাঙন প্রতিরোধে জরুরী ভাবে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধে করা হবে।

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version