-->
শিরোনাম
মধ্যপাড়া পাথর খনি

অবিক্রিত পাথরের মজুদ, ফের খনি বন্ধের আশঙ্কা

আব্দুল্লাহ আল মামুন, পার্বতীপুর (দিনাজপুর)
অবিক্রিত পাথরের মজুদ, ফের খনি বন্ধের আশঙ্কা
ছবি- খনির পাথর উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও বিক্রি কমায় প্রতিনিয়তই বাড়ছে এর মজুদ

দিনাজপুরের পার্বতীপুরে অবস্থিত দেশের একমাত্র ভূ-গর্ভস্থ মধ্যপাড়া খনির পাথর উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও বিক্রি কমে যাওয়ায় প্রতিনিয়তই বাড়ছে এর মজুদ। গত ৩ অক্টোবর পর্যন্ত মধ্যপাড়া পাথর খনির ৯টি ইয়ার্ডে ৫ আকারের প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন পাথর মজুদ হয়েছে। বিক্রিতে ভাটা পড়ায় খনিতে প্রতিনিয়তই পাথরের মজুদ বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছেন মধ্যপাড়া কঠিনশীলা খনি কর্তৃপক্ষ। দ্রুত পাথর বিক্রি স্বাভাবিক না হলে খনির উৎপাদন কার্যক্রম আবারও বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

জানা গেছে, মধ্যপাড়া খনি হতে প্রতিদিন তিন শিফটে ছোট, বড় মিলে বিভিন্ন সাইজের প্রায় ৫ হাজার মে.টন পাথর উৎপাদন করা হয়। এর মধ্যে ৫-২০ (৩-৪) মিমি, ২০-৪০ মি.মি, ৪০-৬০ মি.মি (ব্লাস্ট), ৬০-৮০ মি.মি ও বোল্ডার রয়েছে। উৎপাদিত পাথরের মধ্যে নদী শাসনের কাজে বোল্ডার, রেলপথের জন্য ব্লাস্ট এবং বিভিন্ন নির্মান কাজে অন্যান্য সাইজের এসব পাথর ব্যবহার করা হয়। ৯ ইয়ার্ডে মজুদ প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন পাথরের মধ্যে ২ লাখ ৮০ হাজার টন বোল্ডার ও ৫ লাখ ৭০ হাজার টন ব্লাস্ট এবং বাকি অন্যান্য সাইজের পাথর বিক্রির জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বিক্রি কমে যাওয়ায় চরম অর্থ সংকটে পড়েছেন মধ্যপাড়া খনি কর্তৃপক্ষ। ফলে ধারদেনা করে খনির উৎপাদন, রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া ট্রেষ্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি’র) বিলসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা পরিশোধ করতে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে যে কোন সময় আবারও খনির পাথর উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

দেশে পাথরের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ২ কোটি ১৬ লাখ মেট্রিক টন হলেও এর বেশির ভাগই পাশর্^বর্তী দেশ ভারত ও ভূটান থেকে আমদানী করা হয়। আন্তর্জাতিকভাবে গুনগত মান সম্পন্ন এবং দাম কম হওয়ার পরও পাথর ব্যবহারকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অজ্ঞাত কারণে মধ্যপাড়ার পাথর ব্যবহারে অনীহা প্রকাশ করছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের দরপত্রে মধ্যপাড়া পাথরের ব্যবহারের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও তা মানা হচ্ছে না। আমদানী পাথরের উপর শুল্ক বৃদ্ধিও পাশাপাশি মধ্যপাড়ার পাথরের ট্যারিফ ভ্যালু বৃদ্ধি প্রয়োজন বলে জানান খনির একাধিক কর্মকর্তা। তাদের মতে, এর মাধ্যমে পাথরের বিক্রিতে সুবিধা হবে এবং দেশের একমাত্র ভূগর্ভস্থ পাথর খনিটিকেও বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে।

মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ডিলার জানান, হিলিসহ বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পাথর আমদানি বন্ধ করা বা আমদানিকৃত পাথরের শুল্ক বৃদ্ধি না করা মধ্যপাড়ার পাথর বিক্রিতে আশঙ্কাজনক হারে ভাটা পড়েছে। দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে মজুদ বৃদ্ধির কারণে খনির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে বলে মনে করেন তারা।

২০০৭ সালের ২৫ মে দেশের একমাত্র পার্বতীপুরের মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু করে। উৎপাদন শুরুর পর থেকে নানা প্রতিকূলতার কারণে পেট্রোবাংলা প্রতিদিন তিন শিফটে ৫ হাজার মেট্রিক টন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে মাত্র এক শিফটে ৭-৮’শ মেট্রিক টনের বেশি পাথর উত্তোলন করতে পারেনি। এর ফলে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত ৬ বছরে খনিটি লোকসান দিয়েছে প্রায় শত কোটি টাকা। ২০১৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ৬ বছরের জন্য খনির উৎপাদন ও রক্ষনাবেক্ষণের দায়িত্ব দেয়া হয় বেলারুশের জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়ামকে (জিটিসি)। বর্তমানে খনি ভূ-গর্ভে বিশ্বমানের অত্যাধুনিক মাইনিং যন্ত্রপাতি বসানো হয়েছে। ইউরোপিয়ান সুদক্ষ প্রকৌশলী দল ও দক্ষ খনি শ্রমিক দিয়ে পাথর উত্তোলন কাজ চালানো হচ্ছে। পূর্ণমাত্রায় পাথর উৎপাদন করায় ২০১৮-২০১৯ অর্থবছর থেকে চার বার মুনাফা করে আসছে খনিটি। জিটিসির প্রথম দফা চুক্তির মেয়াদ শেষ হয় ২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর। দ্বিতীয় দফা চুক্তির আওতায় ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর থেকে পাথর উৎপাদন করছে তারা। সুষ্ঠুভাবে খনি পরিচালনা করতে পারলে একদিকে দেশের পাথরের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়সহ বেকার সমস্যারও কিছুটা সমাধান সম্ভব বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানী লিমিটেডের (এমজিএমসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. ফজলুর রহমান জানান, আমদানীকৃত পাথরের তুলনায় মধ্যপাড়া খনি থেকে উৎপাদিত পাথরের গুণগতমান অনেক উন্নত। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসির ব্যবস্থাপনায় পাথর উত্তোলন বাড়লেও দিন দিন আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাচ্ছে বিক্রি। যা গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ গত সেপ্টেম্বর মাসে শুধু পাথর বিক্রি হয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার ৪০৭ মেট্রিক টন।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version