-->

শেরপুরে ভারী বর্ষন ও পাহাড়ি ঢলে কমপক্ষে ৫০টি গ্রাম প্লাবিত, নিহত-৪

মেহেদী হাসান শামীম, শেরপুর
শেরপুরে ভারী বর্ষন ও পাহাড়ি ঢলে কমপক্ষে ৫০টি গ্রাম প্লাবিত, নিহত-৪

শেরপুরে টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে পানিবন্দী হয়ে আছে ২০টি ইউনিউনের প্রায় দেড়লাখ মানুষ। এছাড়া নতুন করে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে আরও দুটি উপজেলায়। আকস্মিক ভয়াবহ এ বন্যায় এখন পর্যন্ত চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

নালিতাবাড়ী থানার ওসি ছানোয়ার হোসেন মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ভারী বর্ষণে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় শেরপুরের নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতীতে বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছেন ইদ্রিস আলী, খলিলুর রহমান ও বাঘবেড় বালুরচর গ্রামের ওমিজা বেগমসহ চার জন। একজন নিখোঁজ রয়েছেন। ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছেন। তবে আটকে বন্যার পানির প্রবল স্রোত আর পর্যাপ্ত নৌযানের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধার কাজ।

শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জেলার ভোগাই নদীর নাকুগাঁও পয়েন্টে পানি ১ সেন্টিমিটার এবং নালিতাবাড়ী পয়েন্টে ৫৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানির তীব্র স্রোতে চেল্লাখালীর ওয়াটার গেজ উঠে যাওয়ায় এখানকার পরিমাপ জানা সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়াও অপর দুটি পাহাড়ি নদী মহারশি ও সোমেশ্বরীর পানি এখনও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃদ্ধি পেয়েছে ব্রহ্মপুত্র, মৃগী ও দশানী নদীর পানি। তবে পাহাড়ি নদীগুলোর উজানে নদীর পানি কিছুটা কমলেও থেমে থেমে ভারী বর্ষণের ফলে তেমন উন্নতি হচ্ছে না। বরং ভাটি এলাকায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। শুক্রবার রাত থেকে প্লাবিত হয়েছে নতুন নতুন এলাকা। এসব এলাকার অধিকাংশ মানুষ ঘরের চালে, সিলিংয়ে ও মাচায় আশ্রয় নিয়েছে।

নালিতাবাড়ীর ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর ও ঝিনাইগাতীর মহারশির বিভিন্ন স্থানের বাঁধে ব্যাপক ভাঙন হয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে শেরপুর-নালিতাবাড়ী ভায়া গাজিরখামার সড়ক, শেরপুর-নালিতাবাড়ী ভায়া তিনআনী সড়ক, নালিতাবাড়ী-নাকুগাঁও স্থলবন্দর সড়কসহ জেলার প্রধান গুরুত্বপূর্ণ অন্তত ১০টি সড়ক। বিধ্বস্ত হয়েছে অসংখ্য গ্রামীণ পাকা ও কাঁচা সড়ক। ভেসে গেছে এসব এলাকার সব পুকুরের মাছ। সেইসঙ্গে কারও কারও গবাদি পশু ভেসে গেছে, নষ্ট হয়ে গেছে উঠতি আমনের জমি। বিভিন্ন স্থানে বন্যার পানিতে ধসে ও ভেসে গেছে কাঁচা ঘর-বাড়ি। পানিতে ভাসছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি চিকিৎসাকেন্দ্র। এসব এলাকায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কিছু আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হলেও তা অপর্যাপ্ত এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় অনেকে আসতে পারছেন না।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত ৪ হাজার ২শ হেক্টর জমির আমন আবাদ ঢলের পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এছাড়া ১হাজার হেক্টর সবজি আবাদ পুরোপুরি পানিতে তলিয়ে গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আজ শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টির পরিমাণ রেকর্ড করা হয়েছে শেরপুরে ৩৭ মিলিমিটার এবং নালিতাবাড়ীর দুটি পয়েন্টে ১৭০ ও ১০০ মিলিমিটার।

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version