-->
শিরোনাম

ডাকসু ভিত্তিক রাজনীতি চায় সকলেই তবে শিবিরকে নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক
ডাকসু ভিত্তিক রাজনীতি চায় সকলেই তবে শিবিরকে নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

জুলাই-আগস্ট গণ অভ্যূত্থানে স্বৈরাচার খ্যাত হাসিনা সরকারের পতনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিয়ে চলছে নানা তর্ক-বিতর্ক, আলোচনা-সমালোচনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদের জড়িপে দেখা গিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৮৪ শতাংশ শিক্ষার্থীই চায়না যে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ছাত্র রাজনীতি থাকুক অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্র সংগঠন চায় বিশ্ববিদ্যালয় দলীয় দখলদারিত্ব বিহীন রাজনীতি এবং ডাকসু ভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি চলমান থাকুক।

শনিবার (৫ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে আয়োজিত ❝ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির ভবিষৎ: সংস্কারের রূপরেখা❞ শীর্ষক অনুষ্ঠানটি তেবিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের মুখপাত্ররা রাজনীতির বিষয়ে নিজ দলের বিভিন্ন মতামত তুলে ধরেন। এসময় প্রায় সকল সংগঠন কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদভিত্তিক ছাত্র সংসদের প্রস্তাব করেছেন। এতে মডারেটর হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ ও সহকারী প্রক্টর প্রভাষক শেহরীন আমিন ভূঁইয়া।

এতে রাজনৈতিক দলের ৯ জন এবং দলনিরপেক্ষ হিসেবে ৩ জন শিক্ষার্থী বক্তব্য দেন। প্রত্যেকেই ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি অব্যাহত রাখার দাবি জানান এবং ডাকসুর ক্ষমতা বাড়িয়ে ডাকসু ভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি চালুর প্রস্তাব দেন। তবে ডাকসু নির্বাচনে দলীয় প্যানেল দেওয়ার কথাও বলেছেন কেউ কেউ।

এর আগে শিক্ষার্থীদের একাংশের চাপের মুখে একটি জরুরী সিন্ডিকেট ডেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের ব্যাপারে আলোচনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান। সেখানে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেলেও সিদ্ধান্তটি বাইরে প্রকাশ করতে রাজি হননি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরবর্তী সকল ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর সাথে বসে রাজনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতি চালু রাখার ব্যাপারে আলোচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়। তবে এখনও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে পরিষ্কার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

ছাত্র রাজনীতি নিয়ে চলমান এই আলোচনা-সমালোচনার মাঝেই সম্প্রতি আত্মপ্রকাশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামি ছাত্র শিবিরের কমিটি। দীর্ঘ দিন গোপনে ছাত্র রাজনীতি করা এ সংগঠনটির অনেকেই আবার ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সংযুক্ত আছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকা এবং অন্য দলের মধ্যে ঢুকে গোপনে রাজনীতি করার অভিযোগ তুলে ডানপন্থী এই ছাত্র সংগঠনটি নিয়ে বামপন্থী ও অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাঈন আহমেদ বলেন, যেকোনো কার্যকর সংগঠনের ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক পরিসরে গুপ্তাবস্থা থেকে প্রকাশ্য অবস্থা বেশি প্রত্যাশিত। কিন্তু নব্বই পরবর্তী সময়ে হওয়া পরিবেশ পরিষদ বলে পরিচিত ক্যাম্পাসের একটা রাজনৈতিক, সামাজিক চুক্তি আছে। এই চুক্তির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে স্পষ্ট অবস্থান জানাতে হবে। এইটা কি সংস্কার হবে, হলে কোন প্রক্রিয়ায় হবে, আদৌ এইটা থাকবে কিনা- এই বিষয়গুলো প্রত্যেক অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে সুরাহা করা প্রয়োজন। ঐতিহাসিক নানান প্রেক্ষাপটে ছাত্র শিবিরের ভূমিকা বিষয়ে তাদের বর্তমান অবস্থান স্পষ্টিকরণের উপর নতুন বাস্তবতায় পরিবেশ পরিষদে ছাত্র ইউনিয়নের এই প্রসঙ্গে অবস্থান নির্ভর করবে।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ ইসলামী ছাত্র শিবিরের বিষয়ে ছাত্র সমাজের প্রশ্ন মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের ভূমিকা প্রসঙ্গে। তাছাড়া তারা যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সন্ত্রাস দখলদারিত্বের সাথে যুক্ত ছিলেন। এমনকি ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের সময়ে যারা ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সাথে যুক্ত ছিলেন তাদের অনেকেই শিবির হিসেবে আত্নপ্রকাশ ঘটতে দেখা যাচ্ছে। এ সমস্ত বিষয়ে শিবির এখনও নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে পারেনি। আমরা মনে করি শিক্ষার্থীরাই নির্ধারণ করবে শিবিরের রাজনীতির বিষয়ে তারা কী সিদ্ধান্ত নেবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় বলেন, ছাত্র শিবির গত ১৫ বছর স্বাভাবিক ভাবে নিজেদের কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেনি বা করেনি কিন্তু তারা অন্য সংগঠনের ভেতর ঢুকে তাদের কার্যক্রম গোপনে করেছে। তারা এখনও গোপন ওপেন খেলা খেলছে এবং সেটি সম্পর্কে আমরা সোচ্চার রয়েছি। তারা হাসিনা সরকারের আমলে ছাত্রলীগের সব ধরনের সুযোগ সুবিধা নিয়ে হলে থেকেছে। এজন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি ধারণা তৈরি হয়েছে যে শিবির হল দখল করেছে। এ ব্যাপারে আমরা সোচ্চার আছি।

গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি নিশান আহমেদ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘ গণতান্ত্রিক লড়াই সংগ্রামের ঐতিহ্য বহন করছে। ৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ, ৮৩ শিক্ষা আন্দোলন, ৯০ এর স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী গণঅভ্যূত্থান ঢাবির ভূমিকা দেশবাসী জানে। চব্বিশের গণহত্যাকারীকে হটিয়ে একাত্তরের গণহত্যার সহযোগীদের পুনর্বাসন করা কোন শুভচিন্তার প্রকাশ হবে বলে মনে করিনা৷ বিগত ফ্যাসিস্ট রেজিমের রিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ ছাত্র শিবির ছাত্রলীগের সুবিধা নিয়ে ফ্যাসিস্ট রেজিমের অংশীদার ছিল।সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতির বাইরে আসার সক্ষমতা যে রাজনৈতিক শক্তির থাকবে না তার রাজনৈতিক চর্চা দিনশেষে ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থানই করবে৷

তিনি বলেন, ছাত্রদের অধিকার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণতান্ত্রিক পরিবেশ নির্মাণে আজ পর্যন্ত যাদের ন্যূনতম ভূমিকা নেই, তাদের কমিটি দেয়া না দেয়ার মধ্যে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোন স্বার্থ নেই। অন্যদিকে ৯০ দশকে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশ পরিষদে ঢাবি ক্যাম্পাসে শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ হয়। আজ যদি ক্যাম্পাসে শিবিরের রাজনীতি করার বৈধতা দেয়া হয় তা হবে গণহত্যা ও স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের চেতনার পরিপন্থী।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version