-->
শিরোনাম

মানিকগঞ্জের ছোট্ট গ্রাম্য বাজারে ঘন্টায় বিক্রি ৬০০ থেকে ৮০০ লিটার দুধ

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি
মানিকগঞ্জের ছোট্ট গ্রাম্য বাজারে ঘন্টায় বিক্রি ৬০০ থেকে ৮০০ লিটার দুধ

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার ধলেশ্বরী নদীর কোল ঘেঁষে গোপালপুর বাজারে প্রতিদিন কাকডাকা ভোরে আশেপাশের কয়েকটি গ্রামের কৃষক পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে লালন পালন করা দেশীয় প্রজাতির গাভির দুধ বিক্রি করতে ভীড় করেন। বিপুল সংখ্যক দুধ ক্রেতা বিক্রেতাদের ভিড়ে মিলন মেলায় পরিণত হয় দুধের বাজার।

কারো হাতে কলস, কারো হাতে জগ, কেউ আবার মাথায় নিয়েছে পাতিল। প্রতিদিন সকাল হলেই এমন দৃশ্য দেখা যায় সাটুরিয়া উপজেলার রাজৈরের খেয়াঘাটে। নদী পাড়ি দিয়ে যুবক বৃদ্ধ নারী এসে হাজির হন গোপালপুর বাজারে। সাটুরিয়ার বরাইদ ইউনিয়নের ক‌য়েকটি গ্রামের মানুষ প্রতিদিন এভাবে দল বেঁধে বিক্রি করতে আসেন তাদের গরুর দুধ।

জানা গেছে, উপজেলার বরাইদ, রাজৈর ও ছনকাসহ আ‌শে পা‌শের ১০‌টি গ্রামের কৃষকের প্রায় সবার বাড়িতেই রয়েছে একাধিক গাভি। প্রতিদিন সকালে গাভির দুধ দোহানোর পর তা বিক্রির জন্য নিয়ে আসে গোপালপুর বাজারে। দৈনিক এ বাজারে প্রায় ৬০০ থে‌কে ৮০০ লিটার দুধ বিক্রি হয়। ৪৫ থে‌কে ৬০ টাকা কেজি দরে এ বাজারে দুধ বিক্রি করেন তারা।

স‌রেজ‌মি‌নে গোপালপুর বাজা‌রে গি‌য়ে দেখা যায়, বাজারে কেউ আস‌ছে দুধ ভ‌র্তি কল‌সি মাথায় ক‌রে, হা‌তে বাল‌তি ঝু‌লি‌য়ে। বাজা‌রে পৌছাঁনোর সা‌থে সা‌থে দুধ কি‌নতে আসা পাইকা‌রেরা তাদের হাত থে‌কে দু‌ধের পাত্রটি নি‌য়ে ডি‌জিটাল মে‌শি‌নে দু‌ধের প‌রিমান মে‌পে দাম দি‌য়ে দি‌চ্ছে। বাজা‌রে দুধ কি‌নে শত শত ড্রা‌মে ভ‌রে দুধ নি‌য়ে যা‌য় ভ‌্যান গা‌ড়ি ও পিক আ‌পে ক‌রে। ১ ঘন্টার মধ্যে শেষ হ‌য়ে যায় দু‌ধের বাজার‌টি।

রা‌জৈর চ‌রের সা‌হেদা বেগম (৪৫) ব‌লেন, তার ৪‌টি গা‌ভি র‌য়ে‌ছে, গা‌ভি গু‌লো থে‌কে ২৫ কে‌জি দুধ হয়। সে ও তার দুই না‌তি মি‌লে দুধ বি‌ক্রি কর‌তে প্রতি‌দিন ধ‌লেশ্বরী নদীর খেয়া পার গোপালপুর বাজা‌রে যায়। তার ম‌তো রা‌জৈর চ‌রের প্রায় তিন শতা‌ধিক কৃষক গোপালপুর বাজা‌রে দুধ বি‌ক্রি ক‌রে।

বাজা‌রে দুধ বি‌ক্রেতা‌দের অ‌নে‌কের দা‌বি সিন্ডিকেটের কারণে গরু পালনকারী দুধের ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত। পাইকাররা যারা দুধ কিনতে আসে তারা দাম নির্ধারন ক‌রে দেয়। ফলে বিক্রেতারা অসহায়। বাধ্য হয়ে দুধ বিক্রি করেন কম দামে।

দুধ বি‌ক্রি কর‌তে আসা কৃষক সামসুল আলম (৪৫) ব‌লেন, সে ৮ কে‌জি দুধ নি‌য়ে এ‌সে‌ছে বি‌ক্রি কর‌তে। বাজা‌রে দু‌ধের দাম ৪৫ থে‌কে ৬০ টাকা। মাঝে মধ্যে কমেও যায়। প্রায় ৩ বছর ধ‌রে এভাবেই দল বেঁধে দুধ বিক্রি করতে আসেন গোপালপুর বাজারে। গ্রামের এত মানুষের সঙ্গে একসঙ্গে বাজারে আসতে মজাই অন্য রকম। তার সঙ্গে তার গ্রামের যে কয়জন এ বাজারে দুধ বিক্রি করার জন্য আসেন, তারা দুধ বিক্রি করে সে টাকা দিয়ে বাজার থেকেই প্রয়োজনীয় পণ্য কিনে নিয়ে যান।

স্থানীয় আলম হোসেন (৫০) জানায়, প্রতি‌দিন গোপালপুল বাজা‌রে দেড় থে‌কে দুইশ মন দুধ বি‌ক্রি হয়। দুধ বাজার‌টি মাত্র ১ ঘন্টার ম‌ধ্যে শেষ হয়ে যায়। সকা‌লে দল বেঁধে মানুষ আ‌সে দুধ বিক্রি কর‌তে।

দুধ কিন‌তে আসা পাইকার স্বপন ঘোষ জানায়, ক‌য়েক বছর ধ‌রে সে গোপালপুর বাজার থে‌কে দুধ কে‌নে। সে প্রতি‌দিন ২০ থে‌কে ২৫ মণ দুধ কে‌নে বাজারটি থে‌কে। বাজার‌টি‌তে দু‌ধের দাম কে‌জি প্রতি ৪৫ থে‌কে ৬০ টাকা। অন‌্য জায়গার থে‌কে দু‌ধের দাম কম নয় দা‌বি ক‌রে সে ব‌লেন, দু‌ধের কোয়া‌লি‌টি ভাল ব‌লে তারা এ বাজার থে‌কে দুধ কে‌নেন।

সাটুরিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. ইমরান হোসেন বলেন, গোপালপুর বাজারে প্রতি‌দিন প্রায় দেড় থেকে দুইশ মন দুই বি‌ক্রি হয়। দুধ বিক্রি করে এ অঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষগুলো অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। পাশাপাশি তারা এলাকায় দুধের চাহিদাও মেটাচ্ছেন এবং অন্য এলাকার তুলনায় সাশ্রয়ী মূল্যে দুধ পাচ্ছেন এখানকার মানুষ। প্রা‌ণি সম্পদ দপ্তর থে‌কে খুব শীঘ্রই এক‌টি প্রকল্প চালু হ‌চ্ছে তা‌তে ওই এলাকার গা‌ভি পালনকারী‌দের প্রশিক্ষণ সহ অন‌্যান‌্য সু‌যোগ সু‌বিধা দি‌তে পার‌বো।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version