-->

ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া ‘খায়ের’ ভালো নেই

চরফ্যাশন (ভোলা) প্রতিনিধি
ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া ‘খায়ের’ ভালো নেই
স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চায় খায়ের

বৈষ্যমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় চট্টগ্রামে পেটে গুলি লেগে আহত হন আবুল খায়ের (২৫) নামের এক যুবক। সে সময় তার গ্রামজুড়ে তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে ফিরেন খায়ের। দুই মাস চিকিৎসা শেষে গত শনিবার ভোলার চরফ্যাশনে দক্ষিণ আইচা থানার চর মনিকা ইউনিয়নের গ্রামের বাড়িতে ফেরেন এই যুবক।

ভাগ্যক্রমে বেঁচে ফিরলেও ভালো নেই আবুল খায়ের। চিকিৎসক জানিয়েছেন খায়েরের উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। তার পুরোপুরি সুস্থ হতে অনেক সময় লাগবে। চিকিৎসকের এমন কথা শুনেই ভেঙে পড়ে তার পরিবার। উন্নত চিকিৎসা করার মতো সামর্থ্য নেই খায়েরের পরিবারের।

আহত খায়ের উপজেলার চর মানিকা ইউনিয়ন ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা কেরামত আলীর তৃতীয় ছেলে। তারা সাত ভাইবোন।

মঙ্গলবার খায়েরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সে খাটের উপর কাতরাচ্ছিলেন। পাশে হতাশা আর উদ্বিগ্ন হয়ে বসে আছেন তার মা-বাবা। ছেলে খায়ের সুস্থ হয়ে চাকরিতে ফিরতে পারবে কিনা, এ নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন তারা। মা হালিমা বেগমের চোখ থেকে অশ্রু ঝরছিল।

গুলিবিদ্ধ আবুল খায়ের বলেন, ‘চট্টগ্রাম ওয়াসা-সংলগ্ন জিএসসি মোড় স্বপ্ন সুপারশপ নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সুপার ভাইজার হিসেবে কাজ করি। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ করার খবর পেয়ে আনন্দে ছাত্র-জনতার সঙ্গে মিশে চট্টগ্রামে উল্লাস করছিলাম। বিকালে ছাত্র-জনতার সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার এক পর্যায়ে টিয়ারশেল ছোড়ে পুলিশ। ওই সময় চারটি গুলিবিদ্ধ হই আমি। একটি গুলি বাঁ হাতের ওপর দিয়ে প্রবেশ করে পেট দিয়ে বের হয়। পরে চারটি গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়লে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেলে ভর্তি করে। সেখানে রোগীর অতিরিক্ত চাপ থাকায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেও ভালো চিকিৎসা পাইনি। পরে ২২ আগস্ট ভোলা-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দীন আলম ভাইয়ের সহযোগিতায় অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে ঢাকা সিএমএম হাসপাতালে নেয়া হয় আমাকে। সেখানে প্রায় ৪৪ দিন চিকিৎসার পর চিকিৎসার পরামর্শে বাড়িতে চলে আসছি।

খায়ের আরও বলেন, ‘এক বছর আগে আমি স্বপ্ন সুপারশপে চাকরি নিই। চাকরি করা অবস্থায় এ ঘটনা ঘটে। কবে তিনি সুস্থ হয়ে চাকরিতে ফিরতে পারব, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। পেটের ও হাতের মাংস পচে গেছে। আরও উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। উন্নত চিকিৎসা করার মতো সামর্থ্য নেই পরিবারের। আমি আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাই। এ জন্য সরকারের সহযোগিতা চাই।

খায়েরের বাবা কেরামত আলী জানান বড় স্বপ্ন ছিল, ছেলেটা পড়ালেখা শেষে চাকরি করবে। কিন্তু সংসারের হাল ধরতে চট্টগ্রামে চাকরি করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তাদের সাজানো স্বপ্ন এখন শেষ হয়ে গেল। কবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে খায়ের তা জানেন না। তার ভবিষ্যতের চিন্তায় দিশেহারা গোটা পরিবার। বর্তমানে আবুল খায়েরের উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশবাসীসহ সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন তার পরিবার।

 

ভোরের আকাশ/রন

মন্তব্য

Beta version