-->
শিরোনাম

নবী‌কে নি‌য়ে ছাত্রলীগ নেতার স্ট্যাটাসে আতঙ্ক নিরাপত্তায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী

না‌জিরপুর ( পি‌রোজপুর) প্রতি‌নি‌ধি
নবী‌কে নি‌য়ে ছাত্রলীগ নেতার স্ট্যাটাসে আতঙ্ক নিরাপত্তায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী

ধর্মীয় অপপ্রচারের অভিযোগে পিরোজপুরের নাজিরপুরের দুই ছাত্রলীগ কর্মীকে আটক করেছেন পুলিশ। শুক্রবার (১১ অক্টোবর) রাতে পিরোজপুর জেলা পুলিশ এক প্রেস বিফ্রিং এর মাধ্যমে দুই জনকে আটকের তথ্য নিশ্চিত করেন।

আটকৃতরা হ‌লেন, উপ‌জেলার শহীদ ‌জিয়া ক‌লেজ শাখা ছাত্রলী‌গের সাবেক সহ-সভাপ‌তি রা‌কিবুল হাসান। একই উপ‌জেলার শ্রীরামকাঠী ইউনিয়‌নের চৌগাছা গ্রা‌মের সুনীল মৃধার‌ ছে‌লে ছাত্রলীগ কর্মী সৈকত মৃধা। তারা দুজ‌নেই জেলা আওয়‌ামী লী‌গের সভাপ‌তি সা‌বেক এম‌পি একেএমএ আউয়া‌লের অনুসারী।

পিরোজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ মুকিত হাসান খাঁন শুক্রবার রাত ১১ টায় না‌জিরপুর থানায় প্রেস‌ ব্রিফিং করেন। সেখা‌নে তি‌নি ব‌লেন, সৈকত মৃধা এর ফেইজবুক আইডি হতে parvaj p s এর আইডিতে কমেন্ট ক‌রেন। সেই কমেন্টের রিপ্লাইতে মহানবী‌কে ( সাঃ) নি‌য়ে সৈকত মৃধা বিরূপ মন্তব্য ক‌রেন।

রা‌কিবুল হাসান সেই কমেন্টের স্কিনসর্ট নি‌য়ে নি‌জের সামা‌জিক যোগা‌যোগ মাধ‌্যমে শুক্রবার জুমার নামা‌জের পর পোস্ট ক‌রেন। শুধু তাই নয়, নিজের আইডি হতে কমেন্টটি ৯৮ জনের সাথে ট্যাগ দিয়ে ভাইরালের মাধ্যমে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে। মুহু‌র্তের ম‌ধ্যেই পোস্ট‌টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ‌্যমে ছ‌ড়ি‌য়ে প‌রে।

শুক্রবার বি‌কেল ৪টার দি‌কেই জা‌মিয়া আরা‌বিয়া সাতকা‌ছে‌মিয়া কওমি মাদ্রাসার‌ শিক্ষার্থীরা বি‌ক্ষো‌ভে ফে‌টে প‌ড়েন। তারা দোষী‌দের শা‌স্তির দাবীতে তাৎক্ষনিক বি‌ক্ষোভ সমা‌বে‌শের প্রস্তু‌তি নেয়। মুহু‌র্তেই খবর পৌছে যায় প্রশাসনের কা‌ছে। তারা দেষী‌দের বিরু‌দ্ধে ব‌্যবস্থা গ্রহ‌নের আশ্বাস দি‌লে শিক্ষার্থী‌রা কর্মসূচী প্রত‌্যাহার ক‌রেন।

পু‌লিশ প্রশাস‌নের পাশাপা‌শি বিএন‌পি নেতা‌দের তৎপরতার কার‌নে রাকিবুল হাসান সন্ধ‌্যার দি‌কে পোস্টটি ডি‌লেট ক‌রেন। প‌রি‌স্থি‌তি স্বাভা‌বিক রাখ‌তে থানার ও‌সি মাহামুদ আল ফ‌রিদ, উপ‌জেলা বিএন‌পির যুগ্ম-আহবায়ক র‌ফিকুল ইসলাম ফরাজী, শ্রীরামকাঠী ইউনিয়ন বিএন‌পির সদস‌্য স‌চিব অনুপ কুমার সিকদার, শ্রীরামকাঠী ইউপি চেয়ারম‌্যান আলতাফ বেপারী চৌগাছা গ্রা‌মের সৈক‌তের বা‌ড়ি‌তে ছু‌টে যান।

ত‌বে সৈকত তার গ্রা‌মের বা‌ড়ি‌তে ছি‌লেন না। পু‌জো শুরুর আগেই তি‌নি বা‌ড়ি থে‌কে নারায়গ‌ঞ্জে নিজ কর্মস্থ‌লে চ‌লে যান। সৈক‌তের বাবা সুনীল মৃধা‌কে বিষয়টি প্রশাসন অব‌হিত ক‌রেন। তখনই পরিবারের মাধ্যমে সৈকত মৃধা বিষয়‌টি টের পান। তখনই সৈকত মৃধা ক‌মেন্ট ডি‌লেট করেন। পাশাপা‌শি তি‌নি ক‌মেন্ট করার জন‌্য পোস্ট ক‌রে ক্ষমা চে‌য়ে বলেন, তার আইডি‌তে কেউ প্রবেশ ক‌রে বিরুপ মন্তব‌্য করে‌ছেন। এই অসাবধানতার জন‌্য ক্ষমা চান। অপরদিকে রাত সোয়া ৯টায় একদল কিশোর সৈকত মৃধার গ্রামের বাড়ি চৌগাছায় যায়। তারা সৈকতের ঘরে ডুকে তাকে খুজঁতে থাকেন। তখন ঘরে সৈকতের বাবা সুনীল মৃধা ও মা শিল্পী হালদার ঘরে ছিলেন। হঠাৎ করে অপরিচিত কিশোররা গ্রামে প্রবেশ করায় খবর পেয়ে ছুটে আসেন ইউপি সদস্য আবু-তালেব শেখ, গ্রাম পুলিশের সদস্য মনিরুল ইসলাম। তারা কিশোরদের নিবৃতের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। তাদের বাধাঁ উপেক্ষা করেই কিশোররা সৈকতের ঘরের দোতলায় গিয়েও খুজতে থাকে। তখন এলাকা জুড়ে আতংকের সৃষ্টি হয়।

সৈকতের বাবা সুনীল কৃষ্ণ মৃধা জানান, আমি কিছু দেখি নাই শুনেছি আমার ছেলে ফেসবুকে কি যেনো ছাড়ছে। এরপর আমার ছেলে যেখানে চাকরি করে সেখানে থানায় আত্মসমর্পণ করেছে। গতকাল রাতে সিকদার মল্লিক থেকে অন্তত ২০জন কিশোর এসে আমার ঘর-বাড়ি তল্লাসি করে। তারা সৈকতকে খুজতে থাকেন।

নাজিরপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মো. রফিকুল ইসলাম এবং শ্রীরামকাঠী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলতাপ বেপারী বলেন, চৌগাছা গ্রামে অস্তিতিশীল পরিবেশের সৃষ্টির খবর পেয়ে শুক্রবার বিকালে সেখানে গিয়ে পুলিশের সহায়তায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয়েছিলো। কিন্তু রাতে কিছু যুবক সেখানে গিয়ে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেখান থেকে ১২ জনকে থানায় নিয়ে আসেন।

শ‌নিবার (১২ ই অ‌ক্টোবর ) দুপু‌রের দি‌কে মুস‌লেকা নি‌য়ে তা‌দের ছে‌ড়ে দেন ব‌লে নি‌শ্চিত ক‌রেন না‌জিরপুর থানার অ‌ফিসার ইনচার্জ (ও‌সি) মোঃ মাহামুদ আল ফ‌রিদ ভূঁইয়া।

ওই কিশোরদের একজন মোজাহিদুল ইসলাম। তিনি নিজেকে খুলনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র দাবি করে বলেন, সিকদার মল্লিক বাজার দুর্গা মন্দিরে তিনি সেচ্ছাসেবকের দ্বায়ীতে ছিলেন। সৈকতের বাড়ি দেখতে তারা অন্তত ২০ জন রাতে চৌগাছা গ্রামে গিয়েছেলেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদেরকে থানায় নিয়ে এসেছেন। থানা হেফাজতে থাকা রাকিবুল হাসান সাংবাদিকদের জানান, সৈকত মৃধা তার ফেসবুক আইডি থেকে নবীজি (সাঃ) কে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে। আমি সেই মন্তব্যের স্কিনসট দিয়ে আমার ফেসবুক আইডি থেকে প্রতিবাদ জানানোর জন্য পোস্ট দিয়েছিলাম। গুজব ছড়ানো হবে সেটা বুঝি নাই। এক সময় ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার কথাও স্বীকার করেন তিনি।

উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক শেখ মো. আল-আমীন জানান, দুজনেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তারা দুজনে সাবেক এমপি একেএমএ আউয়ালের অনুসারী। রাকিবুল এক সময়ে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলো জানতে চাইলে তিনি জানান, আ'লীগ ক্ষমতায় থাকা কালীন সময়ে বিএনপি, জামায়াতের লোকজন আ'লীগের রাজনীতি করত এখন দেখি তারা আবার বিএনপি, জামায়াতে হয়ে গেছে। রাকিব কলেজ ছাত্রদল সদস্য ছিলেন বলে শুনেছি।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version