চট্টগ্রাম নগরের জেএমসেন হলে পূজামণ্ডপে ‘ইসলামী সংগীত’ গাওয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে। শুক্রবার চট্টগ্রাম মহানগরী পূজা উদযাপন পরিষদের অর্থ সম্পাদক সুকান্ত মহাজন বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলাটি করেন। মামলায় মণ্ডপের মঞ্চে গান গাওয়া চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির ৬ সদস্য ছাড়াও আসামি করা হয়েছে তাদের আমন্ত্রণ জানানো পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্তকে। তবে ঘটনার পর থেকে তিনি উধাও। পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা ও পুলিশ তাকে খুঁজে পাচ্ছে না।
এদিকে তাকে বহিষ্কারের পাশাপাশি অব্যাহতি দেয়া হয়েছে পূজা উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি লায়ন আশীষ ভট্টাচার্য ও সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেনকে। একই সঙ্গে এখন থেকে মণ্ডপে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বন্ধ রেখে নিয়মিত পুঁথিপাঠ ও কীর্তন চালানোর ঘোষণা দিয়েছে পূজা উদযাপন পরিষদ।
চট্টগ্রাম মহানগরী পূজা উদযাপন পরিষদের অর্থ সম্পাদক সুকান্ত মহাজনের দায়ের করা এজাহারটি নথিভুক্ত হয়েছে। মামলায় আসামি করা হয়েছে পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্ত, চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির সদস্য শহীদুল করিম, মো. নুরুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ ইকবাল, রনি, গোলাম মোস্তফা ও মো. মামুনকে। এদের মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে আটক হওয়া শহীদুল করিমকে হালিশহর ও মো. নুরুল ইসলামকে চান্দগাঁও এলাকা থেকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও গোলমাল সৃষ্টির অভিযোগ আনা হয়েছে।
কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, ‘পূজামণ্ডপের ঘটনায় মামলাটি নথিভুক্ত হয়েছে। মামলায় আটক দুজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বাকিদের ধরতে অভিযান চলছে।’
যা ঘটেছিল পূজামণ্ডপেবৃহস্পতিবার জেএমসেন হলের পূজামণ্ডপের পাশে মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছিল। এর একপর্যায়ে পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্ত ঘোষণা দেন চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির সদস্যরা গান পরিবেশন করবেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির ছয় সদস্য গান পরিবেশন করতে মঞ্চে উঠেন। সংগঠনটি শাহ আবদুল করিমের লেখা বিখ্যাত গান ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’ এবং চৌধুরী আবদুল হালিমের লেখা ‘শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম, বিশ্ব মানুষের কল্যাণে স্রষ্টার এই বিধান’-শীর্ষক গান দুটি পরিবেশন করেন। কিছুক্ষণের মধ্যে তাদের পরিবেশিত গান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
পুলিশ বলছে, মণ্ডপে ঘটে যাওয়া অনাকাক্সিক্ষত এ ঘটনার পেছনে অসৎ কোনো উদ্দেশ্য আছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একই সঙ্গে গ্রেপ্তার দুজনসহ জড়িতদের রাজনৈতিক-সংশ্লিষ্টতা খুঁজে দেখছে। শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ সপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব জানান উপ-কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) রইছ উদ্দিন।
উধাও দাওয়াত দেয়া পূজা পরিষদের নেতাচট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির ৬ সদস্যকে গান গাওয়ার ঘোষক পূজা উদযাপন পরিষদের নেতা সজল দত্তের খোঁজ মিলছে না। ঘটনার পর থেকে পুলিশ ও পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা তাকে খুঁজছেন। তবে শেষ পর্যন্ত তার হদিস পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আসামি করা হয়েছে তাকেও।
চট্টগ্রাম মহানগর পূজা কমিটির অর্থ সম্পাদক সুকান্ত মহাজন টুটুল বলেন, ‘আমরা শুনেছি, সজল দত্তের কাছে তারা গিয়ে গান গাওয়ার অনুরোধ করলে তিনি তাদের সুযোগ করে দেন। মূলত পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্তের আহ্বানেই তারা গান করেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উপ-কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) রইছ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা তাকেও জিজ্ঞাসাবাদের চেষ্টা করছি। তবে তাকে এখনো পাওয়া যায়নি।’
কমিটির সভাপতি আশীষ ভট্টাচার্য্য ও সাধারণ সম্পাদক হিলোল সেন স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মহানগর পূজা পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত সংষ্কৃতিক মঞ্চে চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি নামক একটি সংগঠনকে গান করার সুযোগ প্রদান করেন সজল দত্ত। তাই সংগঠনের জরুরি সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সজলকে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, চট্টগ্রাম মহানগরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হলো।’
এদিকে একই ঘটনার জেরে পূজা উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি লায়ন আশীষ ভট্টাচার্য ও সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেনকে তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন পরিষদ। পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর ও সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মার যৌথ বিবৃতিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। এ বিবৃতিতেও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় ব্যর্থতার অভিযোগে মহানগর কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজল দত্তকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কোনো পূজামণ্ডপে যেন এ ধরনের কোনো ঘটনা না ঘটে।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য