গাজীপুর কালীগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরসাদী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড দক্ষিণবাগ গ্রামের বাসিন্দা মো. রেদোয়ান বাড়ারির (৩২) অভাব অনটনের সংসারে তিন বেলা স্ত্রী-সন্তানের মুখে খাবার দেয়া যেখানে দুঃসাধ্য ব্যাপার। সেখানে নতুন একটি ঘর দেয়া ছিল তার কাছে অম্ভব কল্পনার মতো। তবে রেদোয়ানের সেই অসম্ভব কল্পনা বাস্তব রূপ পেয়েছে। স্থানীয় দক্ষিণবাগ গ্রবাসী যুব উন্নয়ন সংঘের উদ্যোগে।
রেদোয়ান বাড়ারি জানান, স্থানীয়ভাবে তিনি রাজ জোগালির কাজ করেন। আয় যা হয় তা দিয়ে কোনো মতে চলে চার সদস্য বিশিষ্ট সংসার। এর মধ্যে ঘরে রয়েছে বৃদ্ধ মা ও দুই বছরের একটি কন্যা সন্তান। পরিবারের সবার সব চাহিদা মেটানো কোনোভাবেই সম্ভব হয়ে উঠেনি তার। মরহুম বাবা আলী নেওয়াজ বাড়ারির পুরনো একটি ঘর ছিল। উত্তারাধীকার সূত্রে সেই ঘরেই বৃদ্ধ মা, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকতেন। অনেক পুরনো ঘরটির অবস্থা ছিল খুবই করুণ। একটু বৃষ্টি হলেই পড়তো পানি। দীর্ঘ দিন স্ত্রী একটি নতুন ঘরের কথা বললেও সেটি তার কাছে ছিল স্বপ্নের মতো। কারণ তিনি রাজ জোগালির কাজ করে, যা পেতেন তা দিয়ে সংসার চালানোই ছিল তার জন্য কষ্টকর, সেখানে নতুন ঘর তো স্বপ্নের মতো।
রেদোয়ান আরো বলেন, আমি এখন নতুন ঘরে থাকি। আমার এবং আমার পরিবারে স্বপ্নের বাস্তবায়ন করেছেন দক্ষিণবাগ প্রবাসী যুব উন্নয়ন সংঘ। তারা আমাকে ৮৮ হাজার টাকা খরচ করে একটি টিনশেড মেঝে পাকা ঘর করে তৈরি করে দিয়েন। তাদের দেয়া নতুন করে আমার বৃদ্ধ মা, স্ত্রী ও কন্যা সন্তানের মুখে রাজ্যের হাসি ফুটেছে। আমি এবং আমার পরিবার তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।
শুধু নতুন ঘর পাওয়া রেদোয়ানই দক্ষিণবাগ প্রবাসী যুব উন্নয়ন সংঘের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেননি। আরো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন একই গ্রামের চিকিৎসাসেবা পাওয়া আব্দুল মালেক, হালিমা খাতুন, আসাদুল্লাহ, রমিজউদ্দিন, শামীম, মেয়ের বিয়ের জন্য সহযোগিতা পাওয়া রমেশ ও টিউবওয়েল পাওয় বাসন্তি রানী।
টিউবওয়েল পাওয় বাসন্তি রানী বলেন, আগের অনেক দূর থেকে অন্যের বাড়ি গিয়ে সুপেয় পানি আনতে হতো। তাছাড়া আশপাশে সবাই গভীর নলকূপ স্থাপনের কারণে বিদ্যুৎ বিল বেশি আসবে বলে সহজে পানি দিতেও চাই তো না। বহুদিন পানির কষ্ট করছি। এখন দক্ষিণবাগ প্রবাসী যুব উন্নয়ন সংঘের উদ্যোগে আমি একটি গভীর নলকূপ পেয়েছি। আমার অনেক আনন্দ লাগছে। জীবনেও ভাবি নাই নিজের গভীর নলকূপের পানি খাবো। তিনি সংগঠনের সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি দোয়া করেন।
দক্ষিণবাগ প্রবাসী যুব উন্নয়ন সংষের সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট লোকমান চৌধুরী জানান, দক্ষিণবাগ প্রবাসী যুব উন্নয়ন সংঘ দক্ষিণবাগ গ্রামের প্রবাসী এবং ওই গ্রামের তরুণ সদস্যদের দ্বারা পরিচালিত হয়। এটি একটি সম্পূর্ণ অলাভজনক ও অরাজনৈতিক সমাজ সেবামূলক স্বেচ্ছাসেবী সামাজিত সংগঠন। এই সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দক্ষিণবাগ গ্রামের গরীব মেধাবী ছাত্রছাত্রী, শারীরিকভাবে অসুস্থ অস্বচ্ছল, দরিদ্র কন্যা দায়গ্রস্থ পিতা ও সুপেয় পানির জন্য, গরিব ছিন্নমূল মানুষকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা প্রদান করে থাকে। সংগঠনের আরেক সদস্য প্রবাসী আলমগীর বাড়ারি জানান, এই পর্যন্ত সংগঠনটির মাধ্যমে অনেক দরিদ্র-অসহায় মানুষ উপকারভোগী হয়েছেন। সংগঠনটি দক্ষিণবাগ গ্রামের গরিব মেধাবী ছাত্রছাত্রী, শারীরিকভাবে অসুস্থ অস্বচ্ছল, দরিদ্র কন্যা দায়গ্রস্থ পিতা ও সুপেয় পানির জন্য, গরিব ছিন্নমূল মানুষকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা প্রদান করে থাকে।
আরেক সদস্য প্রবাসী শরীফ চৌধুরী জানান, চলতি বছরের ১ জুন থেকে প্রতিষ্ঠিত সংগঠনটি গেল সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২ লাখ ৭৪ হাজার টাকার আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে। দক্ষিণবাগ গ্রামের প্রবাসী ও স্থানীয় গ্রামবাসীল ঐক্য ও পারস্পরিক সুসম্পর্ক ও মতামতের ভিত্তিতে সকল কাজ বাস্তবায়িত হয়। সংগঠনটি দক্ষিণবাগ গ্রামের অস্বচ্ছল মানুষদের কল্যাণে আর্থিক সহযোগিতায় কাজ করে থাকে। এখানে ওই গ্রামের স্বেচ্ছাসেবীদের দ্বারা ভলান্টিয়ারি সার্ভিসের মাধ্যমে সব কাজ সম্পন্ন করা হয়।
উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মো. শাহাদৎ হোসেন বলেন, আমাদের সমাজে অনেক অস্বচ্ছল মানুষ রয়েছে। আর এসব মানুষগুলোর খবর সরকারের সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও সমাজসেবা অধিদপ্তর তো রাখেই। পাশাপাশি ব্যক্তি থেকে শুরু করে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোরও খোঁজখবর রাখতে হবে। কালীগঞ্জে স্থানীয়ভাবে নিবন্ধিত বেশ কয়েকটি খুব ভাল কাজ করছে। শুনে ভালো লাগলো আমার উপজেলার বাহাদুরসাদী ইউনিয়নে দক্ষিণবাগ প্রবাসী যুব উন্নয়ন সংঘ স্থানীয় অস্বচ্ছল মানুদের জন্য কাজ করছে।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য