-->
শিরোনাম

ঘুষ নিয়ে বিপাকে নাজিরপুরের দুই শিক্ষা কর্মকর্তা

নাজিরপুর (পিরোজপুর) প্রতি‌নি‌ধি
ঘুষ নিয়ে বিপাকে নাজিরপুরের দুই শিক্ষা কর্মকর্তা

আমাদের দিবেন ১ লক্ষ টাকা আপনার চাকুরি যাবে না, ডিপিও অফিস থেকে শুরু করে সবাইকে’ই ম্যানেজ করতে হবে, বলছিলাম পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সহকারি শিক্ষা অফিসার মো: মামুনুর রহমান হাওলাদারের ভাইরাল হওয়া ঘুষ নেওয়ার একটি অডিও রেকর্ডের কথা।

অডিও রেকর্ডে শোনা যায়, সহকারি শিক্ষা অফিসার মামুনুর রহমান অপর প্রান্ত থেকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্য এক শিক্ষককে বলেন আমার সাথে কন্ট্রাক হয়েছিল ১ লক্ষ টাকা আমি সব কিছু সমন্বয় করে সমাধান করে দিব। কিন্তু আমাকে দিয়েছে মাত্র ষাট হাজার টাকার একটি চেক। অপর দিকে শিক্ষা অফিসার (ইউইও) ম্যাডামকে দিয়েছে ৩০ হাজার টাকা।

তিনি আরো বলেন, ডিপিইও স্যার বলেছেন, শিক্ষা অফিসার (ইউইও) স্যারকে, (শাহিনুজ্জামান) কে বাচাবেন কিভাবে তা আপনার বিষয়। আমি ও সড়াসরি ডিপিও স্যারের সাথে কথা বলছি, সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল স্যার কথা বলছে, জেলায় একটা অভিযোগও হয়েছে। জেলা সদরের শিক্ষা অফিসার (ইউইও) শহিদুজ্জামান ঝংকার এখানে তদন্ত করতে আসার কথা, আমরা বলেছি এই মুহূর্তে আপনারা পাঠিয়েন না আমরা ফিট ব্যাক দিচ্ছি,আমরা আমাদের টিচারকে কিভাবে বাঁচাব, বাইরের কথা নিয়ে আমরা ভাবি না,আমাদের ডিপার্টমেন্টে যেন কোন গ্যাপ না থাকে। মৌলি বলছে আমরা উপজেলায় অনেকগুলো কাজ নিয়া আসি না একটা কাজ নিয়ে আসছি সেটা সমাধান করবেন, এখানে মৌলি না আসলেও শাহিনুজ্জামানের ক্ষতি করতাম না, হইত কি শাহিনুজ্জামানের একটা সমন্বয়ের মাধ্যমে যেতে হত। সেটা কম হোক বা বেশি হোক।

তিনি বলেন, মৌলি টিও মৗাডামকে যে ভাবে ম্যানেজ করছে তা আমাকে বলে নাই। টিও ম্যাডাম আমাকে বলছে ও যে ভাবে স্কুলে যেতে পারে সেই ব্যবস্থা করেন, আর সমাধান করেন। আমি শাহিনুজ্জামানকে বললাম আপনার সার্ভিস বুকে অনুপন্থিতি দেখাব নাকি মেডিকেল ? তাহলে কিন্তু আপনি বেতনের কোন টাকা পাবেন না। আপনি যে দেড় মাস অনুপস্থিত ছিলেন এ টাকাটা  আপনার না, আমি যদি তার সার্ভিস বুকে অনপস্থিত না দেখিয়ে তাকে চাকরি করতে দেই তা কি আমার অপরাধ, ওর সাথে কথা ছিল ১ লক্ষ টাকার, আপনার যে ঝামেলা এটা জেলা অফিসে ও ম্যানেজ করতে হবে আপনার কিছুই হবে না, চাকরিও যাবে না। টিও স্যারের সাথে যে কন্ট্রাক হইছে তা আমার দেখার বিষয় না। আপনার সার্ভিস বুকে অনুপস্থিত দিলে পেনশনের সময় ঝামেলায় পড়বেন তাই এ সমন্বয় করছি, মূলত এ দেড় মাসের বেতন তো আর তার না, তাই এ টাকা আমি নিয়েছি।

অপর দিকে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ইউইও) মোসা: হেনায়ারা বেগমের অন্য আর একটি অডিও রেকর্ডে শোনা যায়,উপজেলা সদরের  ৬৫ নং সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুব্রত কে ফোন দিয়ে তিনি বলেন, আমি এ যুদ্ধে সফল হব ইনশাআল্লাহ্, আপনারা যতই ষড়যন্ত্র করেন না কেন। তিনি আরো বলেন পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন দেখতেছি আপনাকে! আমার সমস্যা আমার'ই সমাধান করা লাগতিছে, আমি ভাবছি আপনাকে গুরু বানাব।জানাগেছে, উপজেলার ৩৬ নং উত্তর লেবুজিলবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ শাহিনুজ্জামানের বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার অপরাধে এবং তাকে অন্য বিদ্যালয়ে ডেপুটেশনের জন্য  নব্বই হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এবং  ঘুষের টাকা ওই দুই প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফেরত দিয়েছেন বলেও জানা গেছে।ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি এ বছরের জুলাই-আগস্টে হলেও সম্প্রতি জানাজানি হলে নড়ে-চড়ে বসে শিক্ষা অফিস।  তড়িঘড়ি করে ঘুষের টাকা ফেরত দিলেও মিটছে না ঝনজাল,পড়ছেন আরো বিপাকে।

এদিকে ৩৬ নং উত্তর লেবুজিলবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক’ লুৎফুল কবিরকে টাকা দিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তা হেনায়ারা খানম ভুক্তভোগী শিক্ষক শাহিনুজ্জামানের চাচাত বোন মৌলির বাসায় ওই টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু মৌলি টাকা না রাখায় পরে শিক্ষা কর্মকর্তা নিজেই ৫ অক্টোবর মৌলির বাসায় গিয়ে ঘুষের টাকা ফেরত দিয়ে আসেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী শাহিনুজ্জামানের চাচাতো বোন আরমান আরা মৌলি। তিনি উপজেলার ৬৫ নং মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক।

বিশ্বস্থ সূত্রে জানা যায়, ৩৬ নং উত্তর লেবুজিলবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ শাহিনুজ্জামান দীর্ঘদিন বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার অপরাধে তার সার্ভিস বুকে নোট রাখা এবং বরখাস্তের ভয় দেখিয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোসাঃ হেনায়ারা খানম নগদ ত্রিশ হাজার টাকা এবং উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মামুনুর রহমান ব্যাংক চেকের মাধ্যমে ষাট হাজার টাকা ঘুষ নেন।

ঘুষের বৈধতার জন্য তারা শিক্ষক শাহিনুজ্জামানের কাছ থেকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর একটি আবেদন লিখিয়ে রাখেন । সেখানে শাহিনুজ্জামান লেখেন আমি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোসাঃ হেনায়ারা খানমকে কোন নগদ অর্থ প্রদান করি নাই এবং সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জনাব মামুনুর রহমান হাওলাদার কে কোন চেক প্রদান করি নাই। আবেদনে আরও লেখানো হয় আমার মূল বিদ্যালয়ে নারী ঘটিত কেলেংকারীতে সমস্যায় পড়ায় আমার উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে অন্য বিদ্যালয়ে যাওয়ার আবেদন করিলে কর্তৃপক্ষ মানবিক কারনে আমাকে ২৯ নং বেলুয়া মুঘারঝোর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডেপুটেশন করেন।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে শাহিনুজ্জামানের চাচাতো বোন জানান, গত ৫ অক্টোবর সকাল দশটায় টিও ম্যাডাম আমার বাসায় এসে কান্নাকাটি করে সেই টাকা ফেরত দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, শাহিনের বিষয়টি নিয়ে কোন ঝামেলা করতে চাইনি বলে আমি নিজে বারবার এটিও মামুন স্যারকে তখন বলছিলাম আপনি শাহিনুজ্জামানকে স্কুলে যেতে দেন কিন্তু সে কোনভাবেই তাকে স্কুলে যেতে দেয় নাই।

তিনি বলেন, মামুন স্যারের মূল উদ্দেশ্য হলো টাকা লাগবে। এরপর একদিন টিও ম্যাডাম আমার বাসায় আসছিলো তখন আমি নিজে ম্যাডাম’কে বলছি শাহিনুজ্জামান গরিব মানুষ ওর কাছ থেকে আপনারা অল্প কিছু টাকা নেন। এত টাকা নিয়েন না। ওর দুইটা বাচ্চা নিয়ে কিভাবে চলবে? তখন টিও ম্যাডাম আমাকে বলে আমি এটিও মামুনকে বুঝাইছি মামুন বলছে ত্রিশ হাজার টাকা হলে সে এটা সমাধান করে দেবে। তখন টিও ম্যাডাম আমাকে বলে আপনার বাসায় কি টাকা আছে? টাকা থাকলে আমাকে ৩০ হাজার টাকা দেন।আমি (শিক্ষা অফিসার) মামুন সাহেবকে দিয়ে বিষয়টি সমাধান করে ফেলবো। শাহিনুজ্জামান আমার আত্মীয় তাই আমি শাহিনুজ্জামানকে বাচানোর জন্য আমার মায়ের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা এনে টিও ম্যাডামকে দিয়ে বলি এটা নিয়ে আপনারা শাহিনুজ্জামানের বিষয়টি সমাধান করে ফেলেন।পরবর্তীতে মাস শেষ হলে আমি শাহিনুজ্জামানের কাছে সেই ত্রিশ হাজার টাকা আনতে গেলে সে জানায় এটিও মামুন স্যার তার কাছ থেকে আরও ৬০ হাজার টাকার চেক লিখে নিছে। তখন আমি রাগ হয়ে টিও ম্যাডামকে ফোন দিয়ে বলছি ম্যাডাম আপনি যেকোনো একটা টাকা শাহিনুজ্জামানকে ফেরত দেন তানাহলে আমি কিন্তু বিষয়টি সবাইকে জানিয়ে দেব। তখন এই বিষয়টি জানাজানি হয়।

ভুক্তভোগী শাহিনুজ্জামান বলেন, আমার কাছ থেকে মামুন স্যার ৬০ হাজার টাকা নিয়েছিল চেকের মাধ্যমে তা আবার ফেরত দিয়াও দিছে।

এ বিষয়ে সহকারি শিক্ষা অফিসার মামুনুর রহমানের নিকট এবাধিকবার ফোন দিলে তাকে পওয়া যায় নাই। প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোসা: হেনায়ারা খানম বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন ও রেকর্ড আমার না, ওটা এডিট করা আমি কোন কিছুর সাথে সস্পৃক্ত নাই, আমি কিছু জানি না, এটা বানোয়াট, ভিত্তিহীন মিথ্যা।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কুমারেশ গাছি বলেন, আমি এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি অনুসন্ধান চলমান, আমরা আইনি ভাবে আগাচ্ছি, ডকুমেন্টারি প্রমানাদি না পেলে তাকে শাস্তি দেওয়া যায় না, আমরা অনুসন্ধান করে যা পাব সেই অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version