নারীদের জরায়ুমুখ ক্যান্সার রোধে সিরাজগঞ্জের ১লাখ ৫০হাজার ৯২জন কিশোরীকে বিনামূল্যে এইচপিভি ভ্যাকসিন দেওয়া হবে জানিয়েছেন সিরাজগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. নূরুল আমিন। আগামীকাল (২৪ অক্টোবর) থেকে ১৮ দিন এই ভ্যাকসিনটি প্রদান করে হবে। এর জন্য জেলায় থাকবে ৫হাজার ২১৫ টি টিকাদান কেন্দ্র।
আজ বুধবার (২৩ অক্টোবর) বিকেলে সিরাজগঞ্জ সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান তিনি।
তিনি বলেন, হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) একটি যৌনবাহিত ভাইরাস। আজ পর্যন্ত শতাধিক ধরণের এইচপিভি ভাইরাসের শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১৩টি সেরোটাইপ ক্যান্সার সৃষ্টি করে থাকে। তারমধ্যে ১৬ এবং ১৮ সেরোটাইপ খুবই মারাত্মক, যা ৭০ শতাংশ জরায়ুমুখ ক্যান্সারের জন্য দায়ী। সাধারণত নারীরা যে সকল ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন বৈশ্বিকভাবে তার মধ্যে জরায়ুমুখ ক্যান্সার চতুর্থ সর্বোচ্চ। প্রতিবছর বিশ্বের ছয় লক্ষাধিক নারী জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। যার মধ্যে প্রায় তিন লক্ষ বিয়াল্লিশ হাজার জন মৃত্যুবরণ করে থাকেন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশী নারীদের ক্ষেত্রে জরায়ুমুখ ক্যান্সার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। বাংলাদেশে প্রতি এক লক্ষ নারীর ১১ জন জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। প্রতি বছর প্রায় ৪হাজার ৯৭১ জন মহিলা মৃত্যুবরণ করেন। তিনি বলেন, জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে ৩ ধরনের প্রিভেনশন পদ্ধতি রয়েছে- প্রাইমারী প্রিভেনশন, সেকেন্ডারি প্রিভেনশন ও টারশিয়ারি প্রিভেনশন। প্রাইমারী প্রিভেনশন হিসেবে ১০-১৪ বছর বয়সী কিশোরীদের নিরাপদ এবং কার্যকরী এইচপিভি ভ্যাকসিন দিতে হবে। যার ফলে এই ভ্যাকসিন দেওয়া।
সিভিল সার্জন বলেন, আগামীকাল ২৪ অক্টোবর হতে ধাপ ভিত্তিক ক্যাম্পেইন, মাইক্রোপ্লানিং ও ম্যাপিং এর সহায়তায় বেলজিয়ামের গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন কোম্পানীর তৈরি সারভারিক্স নামক বাই-ভালেন্ট ভ্যাকসিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫ম-৯ম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত ছাত্রীদের এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বহির্ভূত ১০-১৪ বছর বয়সী কিশোরীদের এক ডোজ এইচপিভি টিকা প্রদান করা হবে। উক্ত এইচপিভি ক্যাম্পেইনে টিকা গ্রহনের জন্য রেজিষ্ট্রেশন, টিকা কার্ড ডাউনলোড ও রিয়েল টাইম মনিটরিং এর জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিজস্ব অনলাইন পোর্টাল "VaxEPI" এর ব্যবহার করা হবে।
সিভিল সার্জন আরও বলেন, সিরাজগঞ্জ জেলায় এইচপিভি ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেইন ২০২৪ এর লক্ষ্যমাত্রা ১লাখ ৫০ হাজার ৯২ জন কিশোরী। এই লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সিরাজগঞ্জ জেলায় ১লাখ ৫৮হাজার ২০০ ডোজ ভ্যাকসিন প্রাপ্ত হয়েছে। জেলায় সর্বমোট টিকাদান কেন্দ্রের সংখ্যা ৫হাজার ২১৫ টি। যার মধ্যে স্থায়ী কেন্দ্রের সংখ্যা ১৩টি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্র ২হাজার ৮৯০ টি ও কমিউনিটি পর্যায়ে কেন্দ্র ২হাজার ৩১২ টি। এছাড়া দূর্গম ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ৫৭৮ টি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. মো. রিয়াজুল ইসলাম, এসআইএমও ডা. মাহমুদুল হাসান ফয়সাল, ইউনিসেফ এর প্রতিনিধি ডা. রফিকুল ইসলাম, সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ইমান আলী ও জেলা ইপিআই সুপারিন্টেন্ডেন্ট মো. আব্দুল মোতালেব খান।
এসময় সিরাজগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি হারুন অর রশীদ খান হাসানসহ জেলায় কর্মরত বিভিন্ন ইলেকট্রনিক, অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়ার গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
ভোরের আকাশ/ সু
মন্তব্য