-->

প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের জমি দখলের অভিযোগ

নরসিংদী প্রতিনিধি
প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের জমি দখলের অভিযোগ
প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের জমি দখলের অভিযোগ

নরসিংদীর পলাশে ৫০নং পূর্ব ঘোড়াশাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দানকৃত জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে ওই বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মাধব মিত্রের বিরুদ্ধে। বিদ্যালয়ে দায়িত্বে থাকাকালীন তিনি দানকৃত জমিতে গড়ে তুলেছেন বসতভিটা ও সমিতির প্রতিষ্ঠান। এতে করে কমে যায় ওই বিদ্যালয়ের জমির পরিমাণ। জমি হারিয়ে বিদ্যালয়টি এখন অনিশ্চয়তায় ভুগছে।

সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে জানা যায়, ১৯৮৪ সালে ঘোড়াশাল দিগদা গ্রামে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত হয় ৫০নং পূর্ব ঘোড়াশাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করতে ওই গ্রামের কৃষ্ণচরণ মিত্র ও রাজেন্দ্র মিত্র নামে দুই ব্যক্তি ৩৩ শতাংশ জমি দান করেন। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন কৃষ্ণচরণ মিত্রের ছেলে মাধব মিত্র। দীর্ঘ সময় প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকাকালীন মাধব মিত্র বিদ্যালয়ের দানকৃত জমির অধিকাংশই দখলে নিয়ে নেয় নিজের কবজায়। জমিতে গড়ে তুলেন বসতভিটা ও অনুপম কো-অপারেটিভ ত্রেুডিট ইউনিয়ন নামে এক সমিতির স্থাপনা। অন্যদিকে বেদখলে থাকায় কমতে থাকে বিদ্যালয়ের জমি। সর্বশেষ ২০১১ সালে বিআরএস জরিপে বিদ্যালয়ের ৩৩ শতাংশ জমির পরিবর্তে রেকর্ড হয় ২০ শতাংশ জমি। তবে ওই জমির একটি অংশ দাবি উঠে রেলওয়ের। বিদ্যালয়ের প্রকৃত জমি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে দায়িত্বরত শিক্ষকরাও।

পূর্ব ঘোড়াশাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আমিনুল ইসলাম জানায়, এই বিদ্যালয়টি ১৯৮৪ সালে স্থাপিত হয়। স্থাপিত হওয়ার সময় এই বিদ্যালয়ের নামে ৩৩ শতাংশ জমি দান বাবদ দলিল হয়। ১৯৮৪ সাল হতে এই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে জমিদাতা শ্রী কৃষ্ণ চরণ মিত্রের পুত্র বাবু মাধব চন্দ্র মিত্র দায়িত্ব পালন করেন। দায়িত্ব পালন কালে বিদ্যালয়ের সমুদয় তথ্যাদি ও কাগজপত্র তার নিকটেই থাকে। ২০২০ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করিলে তখনকার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককের দায়িত্ব পালন করেন বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক মিয়া। তার কাছে বিদ্যালয়ের নামে ৩৩ শতাংশের একটি সাব-কাওলা জমির দলিল ও বিআরএস পর্চা ২৭.১২ শতকের বুঝিয়ে দিয়ে যান সাবেক প্রধান শিক্ষক। আব্দুর রাজ্জাক দায়িত্ব থাকাকালীন আমলে স্থানীয় ভাবে মাপা হলে ৩৩ শতাংশ জমি হতে ১৭ শতাংশের মতো জাম দখলে পাওয়া যায়। ২০২৩ সালে নতুন প্রধান শিক্ষক হিসেবে আমি যোগদান করে আবারও জমি সংক্রান্ত তথ্য প্রদান করতে গেলে বিষয়টি আমলে আনি। বাবু মাধব মিত্রকে বিষয়টি অবগত করলে তিনি এ বিষয়ে কিছুই করার নেই বলে জানান। বর্তমানে ২০২৪ সালে এপ্রিল মাসে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এক জরিপ নিয়ে বিদ্যালয়ে আসেন তখন জানতে পারি এই বিদ্যালয়ের ভবনটি রেলওয়ের জমিতে আংশিক স্থাপিত আছে এমতাবস্থায় সাবেক প্রধান শিক্ষার বাবু মাধব মিত্রের কাছে আবারও যোগাযোগ করলে তিনি নানা রকম টাল বাহানা ও অজুহাত শুরু করেন। বর্তমানে আমি গত ২৬/০৯/২০২৪ইং তারিখে বাবু মাধব মিত্রের নিকট পুনরায় গেলে তিনি রেগে যান এবং বলেন আমি জমি দিতে পারব না। পরে আমি বিযয়টি লিখিতভাবে পলাশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে অবহিত করি।

এদিকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধিসহ ৩৩ শতাংশ জমি বরাদ্ধ থাকায় ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি সরকারি করণে অর্ন্তভুক্ত করে সরকার। জমির পরিমাণ কমে যাওয়ায় ভবিষ্যতে বিদ্যালয়টি টিকে থাকা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরাও।

এদিকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সাবেক প্রধান শিক্ষক মাধব মিত্র বলেন, প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই বিদ্যালয়টির জমির নির্দিষ্ট কোনো সীমানা ছিল না এবং আমার বাবার দানকৃত জমি কোথায় আছে তাও আমি জানি না।

এ ব্যাপারে পলাশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার মাহফুজা খান ইউসুফজী বলেন, বিদ্যালয়ে দানকৃত জমি আত্মসাতের কোনো সুযোগ নেই । আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি অচিরেই বিদ্যালয়ের জমি উদ্ধারে প্রশাসনিক প্রদক্ষেপ নিচ্ছি। অন্যদিকে বিদ্যালয়টির দানকৃত জমি উদ্ধারে দ্রুত প্রদক্ষেপ নিবে সরকার, এমনটাই আশা শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীর।

 

ভোরের আকাশ/রন

মন্তব্য

Beta version