-->
শিরোনাম

চলছে ইলিশের নিষেধাজ্ঞা তবুও ব্যস্ত সোনাগাজীর জেলেরা

শেখ আশিকুন্নবী সজীব,ফেনী
চলছে ইলিশের নিষেধাজ্ঞা তবুও ব্যস্ত সোনাগাজীর জেলেরা

ফেনীর সোনাগাজীর জেলেরা মা ইলিশ রক্ষায় সরকার নির্ধারিত সময়ে গভীর সমুদ্রে না গিয়েও বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। গত ১৩ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর ২২দিন বন্ধ থাকবে মা ইলিশ রক্ষায় নদী ও সাগরে মাছ ধরা। নিষেধাজ্ঞার শেষ সময়ে বেশীরভাগ জেলেরা নৌকা ও জাল মেরামত করছে। উপজেলার চরচান্দিয়া, চরদরবেশ, সোনাগাজী সদর, আমিরাবাদ, নবাবপুর সহ আশপাশের নিবন্ধিত জেলে অন্তত দুই সহস্রাধিক তবে উপকূলবর্তী এটির সংখ্যা সহস্রাধিক। তার মধ্যে কার্ডধারী রয়েছে মাত্র আড়াইশো জেলে। কার্ডধারীরা ২২ দিনের বন্ধে ২৫কেজি করে চাল সহায়তা পেলেও বিভিন্ন এনজিও থেকে নেয়া কিস্তি পরিশোধ ও পরিবারের ভরণপোষণের জন্য নিষিদ্ধ সময়েও জীবিকার তাগিদে কর্মের খোঁজে থাকে। আর যাদের কার্ড নেই তাঁরাতো অনেকটা অস্বাভাবিক কষ্টের মাধ্যমে মূহুর্ত পার করতে হচ্ছে। সবমিলিয়ে সরকারের নিয়ম অমান্য করে মাছ ধরতে না গিয়ে বেশীর ভাগ জেলেরা অন্যান্য কাজকর্ম করে যাচ্ছে।

উপজেলা মুহুরী নদী, ছোট ফেনী নদী, বড় ফেনী নদী, ডাকাতিয়া নদী ও কালিদাস পাহালিয়া নদীর তীরে নৌকার তকতা, বাইন, রং, তেল, কালি, পুরাতন গুলো পরিবর্তন, সংস্কার ও জাল মেরামতের কাজ করতে দেখা যায় জেলেদের। কেউ কেউ মৎস্য ঘের গুলোতে জাল টানা, মাটি কাটা, ধান মাড়াইয়ের কাজ করতে দেখা যায়।

গত শনিবার সকালে উপজেলার চরচান্দিয়া ও সদর ইউনিয়নের মধ্যবর্তী স্থান জেলে পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, কোরবান আলী সোহেল তাঁর মাছ ধরার নৌকার মেরামত করতে। পুরাতন কাঠ পরিবর্তন করে নতুন কাঠ দিয়ে জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন নৌকাকে মজবুত করা হচ্ছে। তাঁর রয়েছে ৪টি নৌকা। নিষেধাজ্ঞা সময়ের শুরু থেকে নিজে নিজে এসব নৌকার কাজ করে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন সোহেল।

নদীর ধারে নৌকায় আলকাতরা রং লাগাচ্ছে তপন চন্দ্র দাস। পাশাপাশি নৌকার তলানীতে ফাঁক হয়ে যাওয়া অংশ নিবৃত করতে হাতুড়ি দিয়ে গাম ও সুতার কাজ করছে।

জেলে পাড়ায় প্রবেশমুখে দেখা যায় ৬জন লোক জাল মেরামত করছে। তাদের বিভিন্ন ছেঁড়া জালের অংশ দেখিয়ে দিচ্ছে কামরুল ইসলাম। তাদের অন্তত ৬টি ইলিশের নৌকা রয়েছে। সেখানে কাজ করে অন্তত ২০জন জেলে। তাঁরা বেশীর ভাগ নোয়াখালীর বাসিন্দা। ইলিশের নিষেধাজ্ঞা সময়ে তাঁরা জাল মেরামত করছে ছুট্টু মহাজনের ছেলে কামরুল ইসলামের তত্বাবধানে।

জেলে পাড়ার দোকান গুলোতে বিশেষ করে টেলিভিশন থাকা দোকানে ভীড় লক্ষ করা যায়। পাশাপাশি খালি জায়গায় লুডু খেলতেও দেখা যায়। আবার সংঘবদ্ধ হয়ে তরুণ জেলেদের মোবাইলে বিভিন্ন অনলাইন খেলায় সময় কাটাতে দেখা যায়।

মহাজন আবছার বলেন, দীঘিতে মাছ ধরার কাজ, বদলা দেয়া, ধান কাটা, মাটি কাটা, লুডু খেলা, টেলিভিশন দেখে সময় কাটাচ্ছে অনেক জেলে। আমাদের সাগরে অর্ধশতাধিক ছোট-বড় নৌকা যায়। নিষেধাজ্ঞা সময় আমরা সরকারী নিয়ম মেনে পার করছি। তবে আগের মত মাছ এখন আর পাওয়া যায়না। তাই অন্যান্য সময়ের মত এখনও কষ্টের সময় পার করতে হচ্ছে।

কামরুল ইসলাম বলেন, আমাদের ৮-১০টা নৌকা আছে। সব গুলো মাছ ধরার কাজে ব্যবহার করা হয়। নিষেধাজ্ঞা সময়ে সব গুলোই মেরামত করতে হচ্ছে। সরকারিভাবে মাত্র ২৫কেজি করে চাল দেয়া হয় যা দিয়ে পরিবার চালানো সম্ভব নয় বিধায় জেলেরা অন্যান্য কাজ করে আয়-রোজগার করছে।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তাছলিমা আকতার শিউলী বলেন, আমাদের উপজেলার অধিকাংশ জেলেরা সরকারি নিয়ম মেনে চলে। তবে কিছু অসাধু লোক নিয়ম অমান্য করে জাল দিয়ে মাছ ধরতে যায়। তাই আমরা অভিযানের মাধ্যমে তাদের শাস্তি দিয়ে থাকি। এবারের অভিযানে এখনো পর্যন্ত তেমন সমস্যা হয়নি।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, নিষেধাজ্ঞা মানলে জেলেদের লাভ। তারপরও যেহেতু সংখ্যায় অনেক কম জেলে চাল সহায়তা পাচ্ছে। যারা পাওয়ার যোগ্য তাদের তালিকা পাঠনোর জন্য বলা হয়েছে। আগামীতে তাদের সহায়তা প্রদাণ করা হবে।

সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, উপজেলার জেলে পরিবারদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নিয়ে থাকি। তাদের বাড়তি সুবিধা দেয়া হয়। নিষেধাজ্ঞার সময় তাঁরা সরকারি নিয়ম মেনে চলে। তবে যাঁরা নিয়ম মানেনা তারা কিন্তু লাভবান হয়না। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version