সংস্কার শেষে বন্ধ থাকার ১৪ মাস পর খুলেও দেওয়া হলো ৯০ বছরের পুরনো সেই কালুরঘাট সেতু। দীর্ঘদিন পর সেতু খুলে দেওয়ায় খুশি দুপারের বাসিন্দারা। তবে গাড়ি চলাচলের প্রথমদিন থেকেই ছিল চরম অব্যবস্থাপনা। প্রায় প্রতিদিন দুর্ভোগে দিন পার করছেন সেতু ব্যবহারকারীরা। কারণ আগে যান চলাচলে সেতুর উভয়পাশে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতেন ইজারাদারে নিয়োজিত লোকজনেরা। কিন্তু চালুর দিন থেকে এখনও নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে নিয়ম-নীতি না মেনে কার আগে কে যাবে এমন অবস্থায় সেতুর দুদিক থেকে গাড়ি উঠে আসায় মাঝখানে তৈরি হচ্ছে যানজট।
গত ২৭ অক্টোবর (রোববার) সকালে কোনোরকম আনুষ্ঠানিক ছাড়াই খুলে দেওয়া হয় কালুরঘাট সেতুতে যান চলাচল উন্মুক্ত করেন রেলওয়ে ও সংস্কারকাজে নিয়োজিত ঠিকাদাররা।
এর আগে ১৪ মাস ধরে চলা সেতুর সংস্কার কাজ চলাকালীন ব্যবহার করতে হয় ফেরি। এসময় যাত্রীদের পোহাতে হয় ভোগান্তি আর দুর্ভোগ। ঘটে প্রাণহানির মত ঘটনা ও দুর্ঘটনা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এদিকে সেতুর এক পাশে হেঁটে চলাচলের জন্য ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। এটি দিয়ে পথচারীরা সেতু পার হতে পারবেন এবং টোল ছাড়াই আপাতত যানবাহন চলাচলের জন্য কালুরঘাট সেতু খুলে দেয়া হয়েছে। শিগগিরই টোল আদায়ে উন্মুক্ত দরপত্রের আহ্বান করা হবে। সংস্কার কাজ শেষে দীর্ঘ বছরের পুরনো এই সেতুটি এখন ঝুঁকিমুক্ত।
জানা যায়, সেতুর উপর এখন সর্বোচ্চ ৮ ফুট উচ্চতার সব ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারবেন। তবে চলতে পারবে না ট্রাক–বাসের মতো ভারী যান। সেতুর সংস্কার কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের ১ আগস্ট। ৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে আট মাসে সেতুটির সার্বিক সংস্কার কাজের দায়িত্ব পায় ম্যাঙ ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে সেতুটি মেরামতে ১৪ মাস পার হয়ে যায়। এক সময়ের ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটি এখন কক্সবাজারগামী ট্রেন চলাচলের পাশাপাশি যানবাহন করতে পারবে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ৬৩৮ দশমিক ৫ মিটার দৈর্ঘ্যের কালুরঘাট সেতুটি ১৯৬২ সালে সব ধরনের যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। ১৯৩১ সালে ব্রিটিশ আমলে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে নির্মিত কালুরঘাট সেতুটি বহু আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যায়। বুয়েটের পরামর্শে সেতুটি সংস্কার করা হয়। কালুরঘাট সেতু দিয়ে বর্তমানে কক্সবাজার পর্যন্ত দৈনিক তিন জোড়া ট্রেন ও দোহাজারী পাওয়ার প্ল্যান্টের জ্বালানীবাহী ট্রেন চলাচল করে।
বোয়ালখালীর বাসিন্দা পলাশ মল্লিক বলেন, সেতুর উভয় দিকের গাড়ি নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা না করে হঠাৎ করে খুলে দেওয়ায় মাঝ সেতুতে এসে সব গাড়ি আটকে যাচ্ছে। ফলে সেতু ব্যবহারকারী সবার দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এর মাঝে খুশি লাগছে দীর্ঘদিন পর সেতুটি যান চলাচলে জন্য খুলে দেওয়া হলো। এতে যাতায়াত কষ্ট লাগব হবে। আগের নিয়মে গাড়ি চলাচল চালু করা গেলে আশা করি শৃঙ্খলা ফিরে আসবে এবং দুর্ভোগও কমবে।
এসব বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সেতু প্রকৌশলী জিসান দত্ত বলেন, সেতুটি যান চলাচলের জন্য উপযোগী হওয়ায় খুলে দেওয়া হয়েছে। প্রায় ৯০ বছরের পুরনো কালুরঘাট সেতুটি বুয়েট বিশেষজ্ঞের পরামর্শে সংস্কার করে যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত করা হয়। সেতু সংস্কারে সময় লেগেছে প্রায় ১৪ মাস। যানবাহন চলাচলে আপাতত টোল থাকছে না। সেতু দিয়ে সর্বোচ্চ ৮ ফুট উচ্চতার সব ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারবে। তবে ট্রাক–বাসের মতো ভারী যানবাহন চলাচল করতে পারবে না। শিগগিরই টোল আদায়ে উন্মুক্ত দরপত্রের আহ্বান করা হবে।
উল্লেখ্য, সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নিমিত হবে রেল কাম সড়ক সেতু। যেটি এই অন্তবর্তীকালীন সরকারের আমলেই একনেকে গত মাসে অনুমোদন হয়েছে।
ভোরের আকাশ/ সু
মন্তব্য