-->

বিলুপ্তির পথে গ্রাম-বাংলার মাছ ধরার দৃশ্য!

মেহেদী হাসান শামীম, শেরপুর
বিলুপ্তির পথে গ্রাম-বাংলার মাছ ধরার দৃশ্য!

হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলার মাছ ধরার দৃশ্য। এক সময় বর্ষায় গ্রাম বাংলার নিচু জমি খাল-বিলের পানি নেমে যেতো। আর তখন গ্রামের মানুষ সেখানে পানি সেচে মাছ ধরতেন। সেই সময়ের মাছ ধরার দৃশ্য এখন সচরাচর চোখে পড়ে না। আগেকার সময়ে খাল-বিল, পুকুর-ডোবা আর খেত শুকিয়ে গেলে গ্রামের মানুষ দল বেঁধে থালা-বাটি নিয়ে মাছ ধরার জন্য নেমে পড়তেন। এ সময় গ্রামের মানুষ আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠতেন।তারা গ্রামের ডোবা, নালা, খাল-বিলের শূন্য পানিতে কাঁদার ভেতর থেকে হাত ঢুকিয়ে তুলে আনতেন নানান প্রজাতির দেশীয় মাছ। এসব জাইগায় দেখা যেতো পুঁটি, খলশে, দাড়কিনা, ট্যাংরা, শোল, টাকি, কৈ, মাগুর, শিং সহ দেশীয় প্রজাতির মাছ। 

স্থানীয়দের সাথে কথা বললে তারা ভোরের আকাশকে জানান, এক সময় বর্ষায় গ্রামের নদ-নদীর পানি, খাল-বিল ও নিচু জমির পানি নেমে যেতো তখন গ্রামের মানুষ ঝাঁক বেধে মাছ ধরতে নেমে পড়তেন। এছাড়া প্রখর রোদে ডুবে থাকা ডোবা, নালা, খাল বিলের পানি শুকিয়ে গেলে এসব স্থানে আটকা পড়ে নানা প্রজাতির দেশীয় মাছ। আর সে সময় কাঁদা পানিতে নেমে হাত দিয়ে মাছ ধরতেন গ্রাম-বাংলার মানুষ। তীব্র রোদে হাঁটু পর্যন্ত কাঁদা পানিতে মাছ ধরা গ্রাম বাংলার দৃশ্য দেখা যেতো। তবে মাছ ধরার এমন দৃশ্য এখন আর চোখে পড়ে না। হারিয়ে বসেছে এমন দৃশ্য।

সময়ের বিবর্তনে জেলার নদী, খাল, বিল ও ছোট ছোট খাঁদ অনেকটাই ছোট হয়ে গেছে। তারপরও বর্ষার সময়ে পানিতে টইটম্বুর হয়ে ওঠে এসব নদী খাল বিল ও ডোবা নালা। এমনকি বর্ষায় ডুবে যায় ধানক্ষেত আর নিচু জমি। তখন পানির সঙ্গে সেই জমিতে দেশীয় জাতের নানা মাছের আগমন ঘটে। কিন্তু আগের মতো মাছ ধরার দৃশ্য এখন আর দেখা মেলে না। 

ঝিনাইগাতী উপজেলা দুধনই তালতলা গ্রামের রহিম উদ্দিন বলেন, প্রতি বছর বর্ষাকাল শেষ হলে পানি কমে যায়। এ অঞ্চলের নিচু জমিগুলোতে তখন মাছ ধরার দৃশ্য দেখা যায়। সেই মাছ ধরার আনন্দে মেতে ওঠে নারী-পুরুষ, ছেলে-বুড়ো অনেকেই। কাঁদা পানিতে নেমে কে কত বেশি মাছ ধরতে পারে, তা নিয়ে চলে ব্যাপক প্রতিযোগিতা। তবে আগে নানা জাতের দেশীয় মাছ প্রচুর ধরা গেলেও, এখন আর সেইদিন নেই। নেই মাছের সেই প্রাচুর্য। প্রতিনিয়ত মাছের অভয়ারণ্য কমে যাওয়ায় আগের মতো জমে ওঠে না মাছ ধরার উৎসব বা আনন্দ। যার ফলে দেশীয় মাছ ধরার দৃশ্যগুলো  ক্রমেই যেন হারিয়ে যাচ্ছে।’

মাছ ধরতে আসা ফাল্গুনী আক্তার বলেন, আগের মতো ‘খাল বিল থেকে মাছ নিয়ে বাড়ি ফেরার দিন শেষ। সেই সাথে পাঁচ মিশালি মাছের রান্নার ঘ্রাণও এখন আর আগের মতো পাওয়া যায় না। এখন নিচু জমিগুলোতে বাঁধ দিয়ে নানা প্রজাতির মাছ চাষ করা হচ্ছে। মাছের নিরাপদ আশ্রয়গুলো ছোট ও বন্ধ হয়ে গেছে। যার ফলে আগের মতো নদী, বিলে খালে দেশীয় মাছ পাওয়া যায় না। তার জায়গা দখল করে নিয়েছে চাষ করা বিভিন্ন জাতের মাছ।’ 

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version