চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নতুন মেয়র ও বিএনপি নেতা ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, নগর পিতা হিসেবে নয়, ৭০ লাখ মানুষের নগরসেবক হিসেবে থাকতে চাই। সকল বর্ণ, ধর্ম, জাতির নাগরিক যারা এ চট্টগ্রাম শহরে বাস করছে তাদের পাশে থেকে আমি কাজ করে যেতে চাই। আসুন সবাই মিলে একযোগে একটি সুন্দর শহর আমরা গড়ে তুলি। আমি আপনাদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে নগরীর পুরাতন রেল স্টেশনে বিএনপি আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য ডা. শাহাদাত বলেন, ৪৩টি ওয়ার্ডের বিএনপির নেতাকর্মীরা গত ১৮ বছরে কেউ ঘরে থাকতে পারেননি। আপনাদের পরিবারের খোঁজ নেওয়ার মানুষ ছিল না। আপনাদের বাচ্চাদের দুধ কেনার টাকা ছিল না। আপনাদের পরিবারের বাজার করার টাকা ছিল না। অর্ধাহগারে অনাহারে আপনারা দিন কাটিয়েছেন। আপনাদের পাশে কেউ ছিল না। আপনাদের অসহায়ত্ব আমি দেখেছি। আমি চিরঋণী, আপনাদের এই ঋণ আমি শোধ করতে পারব না।
তিনি বলেন, সারাদেশে ৬০০ এর অধিক গুম হয়েছে, বিচার বহির্ভূত হত্যা হয়েছে। মানুষ অসংখ্য মামলা নির্যাতনের স্বীকার হয়েছে৷ চট্টগ্রামসহ সারা বাংলাদেশে ১ লাখ মামলায় ৬০ লাখ আসামি হয়েছে, তারপরও আপনারা কেউ বিএনপির আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি। এটাই বিএনপির বড় পাওয়া। সাংবাদিকরা সমস্ত আইসিটি মামলার বিরুদ্ধে গিয়েও, আপনাদের কথা বলার স্বাধীনতা না থাকার পরেও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হওয়া হামলা মামলার তথ্য তুলে ধরেছেন। এজন্য আপনাদের ধন্যবাদ জানাই।
তিনি আরো বলেন, আমি আপনাদের সন্তান। এ শহর আমার একার নয়। এ শহর ৭০ লাখ মানুষের। ক্লিন, গ্রিন ও হেলদি সিটি গড়ে তুলব এ শহরকে। আমাকে একটু সময় দিন। আমার দেওয়া কথা আমি অক্ষরে অক্ষরে পালন করব।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাউদ্দিন আহমদসহ কয়েকজনের কথা তুলে ধরে তাদের ধন্যবাদ জানান ডা. শাহাদাত।
এর আগে সকাল ১১টা থেকে বিএনপিসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন চট্টগ্রাম পুরাতন রেলওয়ে স্টেশনের সামনে। বেলা ১২টা ১০ মিনিটে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সোনার বাংলা ট্রেনযোগে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে পৌঁছান নতুন মেয়র ডা. শাহাদাত। এ সময় উপস্থিত হাজার হাজার নেতাকর্মীরা ফুলেল শুভেচ্ছা ও স্লোগানে বরণ করে নেন এই নগরপিতাকে।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে মেয়র হজরত শাহ আমানত (র.) ও বদর আউলিয়া (র.) মাজার জিয়ারত, মতবিনিময়, সংবাদ সম্মেলন এবং টাইগারপাসে চসিক কার্যালয়ে মিলাদ মাহফিল ও দোয়া-মোনাজাতে অংশ নেন।
প্রসঙ্গত, রোববার (৩ নভেম্বর) সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে ডা. শাহাদাত হোসেনকে মেয়রের শপথবাক্য পাঠ করান স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ। শপথগ্রহণ শেষে তিনি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা জানান।
২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন নৌকার প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন ধানের শীষ প্রতীকে পান ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট।
ভোটে কারচুপির অভিযোগ তুলে ফল বাতিল চেয়ে একই মাসে নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন বিএনপি নেতা ডা. শাহাদাত। সরকার পরিবর্তনের পর চলতি বছরের ১ অক্টোবর সেই মামলার রায়ে শাহাদাতকে নির্বাচিত ঘোষণা করেন চট্টগ্রামের নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের বিচারক যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ খাইরুল আমীন।
আদালতের রায় অনুযায়ী ইসি সচিবালয় ৮ অক্টোবর শাহাদাত হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট সংশোধনের বিজ্ঞপ্তি জারি করে।
ভোরের আকাশ/ সু
মন্তব্য