চাকরি জাতীয়করণের এক দফা দাবিতে সারা দেশে কর্মবিরতি পালন করছেন বাংলাদেশ এক্সট্রা-মোহরার (নকলনবিশ)। তারই ধারাবাহিকতায় গত ( ২২ অক্টোবর) থেকে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ সাব- রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে কর্মরত নকলনবিশেরাও কর্মবিরতি পালন করেছেন। এতে কমে গেছে দলিল রেজিস্ট্রি, নামজারি খারিজ। পাশাপাশি ব্যাহত হচ্ছে আদালতের মামলা-মোকদ্দমাসহ বিভিন্ন দাপ্তরিক কার্যক্রম। এ অবস্থায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন এ উপজেলার সাধারণ মানুষ।
(০৭ নভেম্বর) বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, মাথায় হাত দিয়ে সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়ের সামনে বসে কিছু একটা ভাবছিলেন- ষাটোর্ধ্ব মো. মতিউর রহমান। চোখে-মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ দেখে কারণ জানতে চাইলে মতিউর বলেন- ' আজগোয়া দশটা দিন ধইরা ঘুরতাছি জমির একটা নহল (নকল) তুলতাম। নহলডা তুইল্ল্যা জমি খারিজ করবাম, পরে হেইডা বেইচ্চ্যা ছেড়াডারে বিদেশ পাঠাইয়াম। জমির বায়না লইয়া অর্ধেক টেহা দিয়ালছি। বাহি টেহা দলিল অইলে পরে দিব। কিন্তু হেরার ( নকলনবিশদের) কাম বদ্ধ (বন্ধ) তাহনে পুরা বেকায়দাত পইড়া গেলাম। সময় মতো টেহা না দিতারলে যেইডি দিছি এইডিও মাইর যাইবো। এই চিন্তায় রাইতে ঘুম আইয়েনা।' মতিউরের বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মগটুলা ইউনিয়নের তাজপুর গ্রামে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ভুক্তভোগী বলেন- ' আমার বাসার কাজ চলতাছে। ব্যাংকের কাছে জমি বন্ধক রেখে মর্গেজ দলিল করেছি। এখন সার্টিফাই কপির (নকল) জন্য লোনটাও আটকে আছে। লোনের টাকার জন্য আজ ৪ দিন ধরে কাজ বন্ধ। এদের (নকলনবিশ) কর্মবিরতির জন্য চরম বিপদে আছি।'
আরেক ভুক্তভোগী উপজেলা রাজিবপুর ইউনিয়নের মমরেজপুর গ্রামের তাহের উদ্দিন (৫৫) জানান, দলিলের সার্টিফাই কপির জন্য করতে পারছেন না নামজারি খারিজের আবেদন। খারিজ হলে জমিটা তিনি বিক্রিকরেচিকিৎসা করাবেন। শুধু এই ক'জনেই নন, টানা ১৫ দিন যাবৎ ঈশ্বরগঞ্জ সাব- রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে কর্মরত নকলনবিশদের কর্মবিরতির ফলে চরম বিপাকে পড়েছেন বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ। তাঁরা এই সমস্যা দ্রুত সমাধানের জন্যসরকারের কাছে জোর দাবি জানান।
এ প্রসঙ্গে কথা হলে নকলনবিশ দিলশাত জাহান স্বর্ণা বলেন- ' জমি বেচা-কেনা সংক্রান্ত কাজে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি আমরাও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে আসছি। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবৎ দাবি জানানো সত্ত্বেও আমাদের চাকরি জাতীয়করণ করা হয়নি। এতে আমাদের পরিবার-পরিজনরা ভীষণ কষ্টে মানবেতর জীবন যাপন করছি।'
ঈশ্বরগঞ্জ সাবরেজিস্ট্রি কার্যালয়ের নকলনবিশ অ্যাসোশিয়সনের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হক পারভেজ বলেন-' রেজিস্ট্রি অফিসের রাজস্ব আয় থেকে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের বেতন-ভাতা হয়ে থাকে। আর নকলনবিশেরাহলো- রেজিস্ট্রি অফিসের মূল চালিকাশক্তি। অথচ দিনরাত গাধার মতো পরিশ্রম করেও নকলনবিশদের সংসার চলেনা।'
তিনি আরো বলেন- '১৯৫৮ সালে হাইকোর্ট, জজকোর্ট ও সরকারের অন্যান্য বিভাগে নকলনবিশদের চাকরি সরকারিকরণ হলেও রেজিস্ট্রি বিভাগে কর্মরত নকলনবিশদের চাকরি আজ পর্যন্তও সরকারিকরণ করা হয়নি। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। জাতীয়করণ না হলে তাঁদের এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলেন জানান পারভেজ।
ভোরের আকাশ/মি
মন্তব্য