মরমি সাধক দেওয়ান হাছনরাজা'র জমিদারী সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হওয়ার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন হাছনরাজার উত্তরাধিকারী সুমি চৌধুরী। রবিবার (১০ নভেম্বর) বেলা ১১টায় সুনামগঞ্জ শহরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে হাছনরাজার প্রৌপত্রী সুমি চৌধুরী জানান, তাঁর পিতা দেওয়ান আসরাক রাজা চৌধুরী ও মাতা মাজেদা। তিনি সুনামগঞ্জ পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের তেঘরিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি পিতা-মাতার একমাত্র সন্তান এবং হাছনরাজা'র ৫ম বংশধর। তাঁর দাদা সুলতানুর রাজা চৌধুরী (কেছরা মিয়া)। প্রপিতামহ দেওয়ান হাছনরাজা'র প্রথম ও জ্যেষ্ঠ পুত্র খান বাহাদুর দেওয়ান গণিউর রাজা চৌধুরী তাঁর পিতামহ।
তিনি জানান, দেওয়ান হাছনরাজা'র মৃত্যুর পর রেখে যান ৪ পুত্র। তাঁর পিতামহ খান বাহাদুর দেওয়ান গণিউর রাজার চৌধুরী, দেওয়ান হাসিনুর রাজা চৌধুরী, দেওয়ান একলিমুর রাজা চৌধুরী (রামপাশার জমিদার), দেওয়ান আফতাবুর রাজা চৌধুরী। দেওয়ান হাছনরাজা তখন প্রথম ও জ্যেষ্ঠ পুত্র হিসাবে তাঁর পিতামহ খান বাহাদুর দেওয়ান গণিউর রাজা চৌধুরী জমিদারী পরিচালনার দায়িত্ব পান। ১৯৩২ সালে তাঁর পিতামহের মৃত্যু হয়। মৃত্যুর দুই বছর আগে ১৯৩০ সালে তিনি দেওয়ান আফতাবুর রাজা চৌধুরী জমিদারী পরিচালনার দায়িত্ব পান। এ সময় তাঁর পিতামহ খান বাহাদুর দেওয়ান গণিউর রাজা চৌধুরীর ঔরসজাত দুই সন্তান রেখে যান। একজন হলেন দেওয়ান সুলেমান রাজা চৌধুরী গেদা মিয়া ও তাঁর আপন দাদা দেওয়ান সুলতানুর রাজা চৌধুরী কেছরা মিয়া।
সুমি চৌধুরী আরো বলেন, তাঁর দাদা দেওয়ান সুলতানুর রাজা চৌধুরী কেছরা মিয়ার ঔরসজাত সন্তান হলেন ৫ জন। দেওয়ান জাফরান রাজা চৌধুরী, দেওয়ান আঙ্গুর রাজা চৌধুরী, দেওয়ান নুর রাজা চৌধুরী ও দেওয়ান আসফাক রাজা চৌধুরী। এর মধ্যে ৪জন অবিবাহিত অবস্থায় মারা যান। জীবিত থাকেন শুধু তাঁর পিতা দেওয়ান আসরাক রাজা চৌধুরী এবং তাঁর ৩ বোন মোছা. মিনু চৌধুরী, মোছা. কিনু চৌধুরী ও মোছা. ফিনু চৌধুরী।
তিনি বলেন, তাঁর পিতামহ দেওয়ান আফতাবুর রাজা চৌধুরীকে জমিদারী দায়িত্ব দেওয়ার ২ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৩০ সালে দুইটি ওয়াকফ করে যান, যার দলিল নং-৩৬৫৪, তারিখ-২৫.০৯.১৯৩০ ইং।
সুমি চৌধুরী বলেন, তাঁর পিতামহ খান বাহাদুর দেওয়ান গণিউর রাজা চৌধুরী ছিলেন, সুনামগঞ্জের একজন ম্যাজিস্ট্রেট। তিনি মারা যাওয়ার পর তাঁর নামে কোনো সম্পত্তি খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং ১৯৫২ সালের স্যাটেলমেন্ট জরীপেও তাঁর নামে কোনো সম্পদ উল্লেখ করা হয়নি। তবে সম্পত্তির সাম, ছিটা ও একক ম্যাপ তাদের কাছে সংরক্ষিত আছে।
তিনি বলেন, তাদের কাছে সুনামগঞ্জ পৌরসভার ওয়ারিশান সনদপত্র, ভোটার আইডি কার্ড, ওয়াকফ দলিল, অন্যান্য দলিলপত্র সংরক্ষিত আছে। এ ছাড়াও তিনি উত্তরসূরী হিসাবে সুনামগঞ্জের আদালতের নোটারী পাবলিক সম্পাদন করেছেন। হাছনরাজা'র বংশানুক্রমে তিনি একজন উত্তরসূরী হয়েও শত বছর ধরে উত্তরাধিকারী সূত্রের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন। তিনি সম্পত্তির ন্যায্য অধিকার ফিরে পেতে চান।
উল্লেখ্য, দেওয়ান আফতাবুর রাজা চৌধুরী তাঁর আওলাদের জন্য একটি ওয়াকফ সম্পাদন করে যান। যার ইসি নং-১১৬৫২। ১৯৪১ সালে ওয়াকফকৃত সম্পত্তির মূল্য ২৫,০০০/-টাকা। ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ইং সরকারী হিসাবে জায়গার পরিমাণ ৪৭৯১.৩৫ একর। পরিবারের অন্যান্য ভাইদের প্ররোচনা তাদের মধ্যে পারিবারিক বাটোয়ারা করিয়া নিজ নিজ নামে ওয়াকফয়ের সহায় সম্পত্তি নিজ নিজ নামে চলমান আরএস জরীপে রেকর্ড করান এবং ২/৩ শতাধিক লোকের কাছে বিক্রি করিয়াছেন। সম্পত্তি উদ্ধারসহ রক্ষার জন্য বর্তমান এসএ, আরএস ও ডিপি খতিয়ান ২/৩ শত জাবেদা পর্চা সংগ্রহ করিয়াছেন তাদের একজন। বর্তমানে সরকারী হিসাবে ১ শত বা ১৫০ শত একর সম্পত্তি চলমান রয়েছে। যা নিয়ে ওই সময়কালে সরকারের বেশ কয়েকটি মামলা আছে। দেওয়ান আফতাবুর রাজা চৌধুরীর ১৬ আনা অংশ ওয়াকফকৃত।
সংবাদ সম্মেলনে তাঁর বাবা দেওয়ান আসরাক রাজা চৌধুরীর একমাত্র উত্তরাধিকারী হিসাবে সুমি চৌধুরী ও তাঁর স্বামী লিটন ইসলাম ভূইঁয়া তাদের প্রাপ্য সম্পত্তি ফিরে পেতে সরকারের কাছে জোর দাবি জানান। এসময় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
ভোরের আকাশ/ সু
মন্তব্য