-->
শিরোনাম

পিরোজপুরের বিন্না গ্রাম এখন ‘ব্যাটের গ্রাম’

নাজিরপুর প্রতিনিধি
পিরোজপুরের বিন্না গ্রাম এখন ‘ব্যাটের গ্রাম’

ক্রিকেট ব্যাট তৈরির কারখানা এখন পিরোজপুরের জেলার নেছারাবাদ উপজেলার বিন্না গ্রাম ছাড়িয়ে কাটাখালি, বলদিয়া, চামি, গগন, ডুবি, পঞ্চবাটিসহ ১৫টি গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। সব মিলিয়ে গড়ে উঠেছে ৬০-৬৫টির বেশি কারখানা। এসব কারখানায় শুরুতে সব কাজ হাতে করা হলেও বর্তমানে অনেকেই তা মেশিনে করছেন। এতে কাজের গতি বেড়েছে। এসব কারখানায় মাসে ৮০ থেকে ১ লক্ষ ব্যাট তৈরি হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, ব্যাট তৈরিতে ব্যবহার করা হয় কদম, আমড়াসহ বিভিন্ন প্রকার দেশীয় কাঠ। শ্রমিকদের পাশাপাশি বাড়ির বউ-ছেলেমেয়েরাও টুকটাক কাজ করেন। তাদের কাজের মধ্যে রয়েছে ব্যাটে পুডিং লাগানো, ঘষামাজা করা, স্টিকার লাগানো, প্যাকেটজাত করা ইত্যাদি।

ব্যাট নির্মাণ কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা জানান, একশ’ ব্যাট বানিয়ে দিলে তারা এক থেকে দেড় হাজার টাকা হারে মজুরি পেয়ে থাকেন। তাদের পক্ষে সপ্তাহে চারশ’ ব্যাট তৈরি করা সম্ভব। ব্যাটে পুডিং, স্টিকার লাগানোসহ পালিশের কাজ করেন অন্যরা।

এই এলাকায় ৩০ বছর ধরে ক্রিকেট ব্যাট তৈরির কাজ করছেন জাহারুল ইসলাম। তিনি জানান, ব্যাট প্রতি খরচ ৮০ থেকে ৯০ টাকা। বিক্রি হয় ১২০ টাকা। তার অধীনে পাচঁজন এ কাজ করেন। তিনি বলেন, আগের চেয়ে এখন আমি বেশ ভালই আছি।

শহিদুল ইসলাম নামের এক শ্রমিক জানান, তিনি ব্যাটের হ্যান্টেল তৈরি করেন। হাজারে ৭শত টাকা দেওয়া হয় তাকে, দিনে ১ হাজার হ্যান্টেল তৈরি করতে পারেন। তবে বর্তমানে বিদ্যুৎ কম থাকে এবং ব্যবসা ভালো না হওয়ায় কাজও কম আসে।

তাদের তৈরি ব্যাট স্থানীয় বাজার ছাড়াও ঢাকা, ফরিদপুর, ভোলা, কোটালিপাড়া, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা নিয়ে যান। তিনি আরো জানান, একদিনে একজনে ৫টি ব্যাট তৈরি করতে পারেন যার বর্তমান বাজার মূল্য ৪০-৪২ টাকা। খরচ বেশি বিক্রি কম, মালের চাহিদা নাই।

আকতার নামের এক কারখানা মালিক বলেন, বর্তমানে আমাদের ব্যবসার অবস্থা খারাপ। নগদ টাকায় কাঠ কিনে ব্যাট তৈরি করে বাকিতে বিক্রি করি ঢাকা। টাকা অনেক দিন পর দেয়। অনেক কষ্ট দিন কাটতেছে। গাছ কোথা থেকে সংগ্রহ করেন জানতে চাইলে তিনি জানান, স্থানীয় ডুবি, মেধা, ইন্দেরহাট বাজার থেকে গাছ কিনি। একটি ছোট ব্যাটে ২-৩ টাকা লাভ হয় তবে বড় ব্যাটে বেশি লাভ হয়। সাদা ছোট একটি ব্যাট ১৮, মাজারি ২৮ বড় ৩৮ টাকা বিক্রি করি।

মো. হাসান শেখ নামের আর এক কারখানা মালিক জানান, বছরে ছয় মাস এ ব্যাট তৈরির সিজন থাকে। আশ্বিনৃ হতে বৈশাখ মাস পর্যন্ত। ব্যাট বেচাকেনা ভালো হলে এক সিজনে এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা রাখা আয় করা যায়।

মো. দুলাল শেখ নামের এক স'মিল শ্রমিক বলেন, প্রতিদিন তারা ২ হাজারের বেশি ব্যাট তৈরির কাঠ কাটতে পারে। তাতে তার দিনে ৪শত টাকার মত আয় হয়। বর্তমানে বিক্রি কম তাই কাজও কম, আয়ও কম।

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে সবচেয়ে বড় কারখানা মালিক রফিকুল ইসলাম তিনি জানান, এ ব্যাবসা টিকিয়ে রাখা কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। অনেক অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। ভারতীয় ব্যাট অবাদে দেশে নিয়ে আসায় তাদের ব্যাটের চাহিদা কমে গেছে। তারা সরকারের কাছ থেকে কিছু সহযোগিতা পেলে সামনের দিনে টিকে থাকতে পারবে।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version