-->

ভারত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে, সতর্ক থাকতে হবে

জুয়েল ইসলাম শান্ত, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
ভারত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়ে
যাচ্ছে, সতর্ক থাকতে হবে

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ফ্যাসিবাদের প্রধান হোতা শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করছেন এবং ভারত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে; এটা বলতে আমার কোন দ্বিধা নেই। এ বিষয়ে সকলকে সতর্ক থাকা উচিৎ বলে আমি মনে করি। নাহলে জাতি হিসেবে আমরা অনেক বড় বিপদের সম্মুখিন হবো।

বুধবার সকালে (১৩ নভেম্বর) ঠাকুরগাঁও শহরের কালিবাড়ি এলাকার নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। এরআগে ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপি কার্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মির্জা ফখরুল বলেন, এখন যে প্রবণতা শুরু হয়েছে বাংলাদেশের এইযে অর্জন, এই অর্জনকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য সুনির্দিষ্টভাবে কিছু ব্যক্তি বা কিছু লোক তারা চেষ্টা করছে এটাকে নাচক করে দেওয়ার জন্য। এখানে আল্টিমেটলি হেবি টু অর দ্যা ডিজাটার এগেইন, আমি এই ব্যাপারে সকলকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানাবো। আমরা আরেকটা বিপর্যয় গ্রহণ করতে পারিনা এই মহুর্তে।

রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, আরেকটা রাজণৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে আমি মনে করি যে মতামত দেওয়া সমিচিত নয়। কারণ এই মতামত দেবে জনগণ কে রাজনীতি করবে আর কে রাজনীতি করবে না এবং নির্বাচনে যারা জনগণের কাছে খারাপ হয়ে যাবে তারা বাতিল হয়ে যাবে অথবা পার্লামেন্টে সিদ্ধান্ত নেবে।

আমি গণতান্ত্রিক একজন ব্যক্তি, আমি বিশ^াস করি যে কোন রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার বিষয়টা কোন রাজনৈতিক দলের নয়, এটা জনগণের দায়িত্ব।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থা ভালো মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আওয়ামী লীগের আমলের চেয়ে অনেক ভালো। কারণ প্রথমত হচ্ছেÑ এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কারও নিয়ন্ত্রণে নেই; দ্বিতীয়ত হচ্ছেÑ একটা ভয়াবহ ধ্বংসের মধ্য থেকে তাদের তুলে এনে, যেখানে পুলিশবাহনীনি ফেইল করেছিল, সেখান থেকে তাদের নিয়ে এসে একটা সিস্টেমের মধ্যে, দেশপ্রেমের মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে। এটা বিরাট সফলতা। আমি মনে করিÑ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আরও সফল হবে।

রংপুর বিভাগী অন্তর্বতীকালীন সরকারের কোন উপদেষ্টা নেই এই প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, এই বিষয়ে আমি মন্তব্য করতে চাইনা; কারণ এই বিষয়টা তো আমাদের না, এটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার এখতিয়ার। উনি উনার মেধা,বুদ্ধি, বিচক্ষণতা দিয়ে বিবেচনা করবেন; যদি কোন সমস্যা থাকে সেটার সমাধান করবেন। আর যদি দেখেন কোথাও কোন অসামান্যযঞ্জ্য হচ্ছে সেটাও তিনি দুর করবেন, আমি এটা প্রধান উপদেষ্টার উপর ন্যাস্ত করতে চাই।

আর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে উপদেষ্টা নিয়োগ করার কোন প্রচলন নাই; এটা প্রধান উপদেষ্টার নিজস্ব এখতিয়ার। তাদের সুবিধার জন্য যাকে যাকে নেওয়ার দরকার তাকে নেবে।

সবাইকে সহিষ্ণু থাকার আহ্বান জানিয়ে মিজা ফখরুল বলেন, জাতীয় হিসেবে আমাদের অসহিষ্ণু হলে চলবে না, সহিষ্ণু হতে হবে। এত বড় ১৭ বছরের একটা জঞ্জাল একটা গার্বেজ তৈরি করা হয়েছে এটাকে সরাতে ১৭ দিনে সম্ভব না, ১৭ মাসেও সম্ভব না, এটাই সত্য। এজন্য যারা আছেন অন্তর্বতী সরকারে তাদেরকে সময় দিতে হবে। তাদের প্রধান যে দায়িত্ব সেটা আমরা বার বার করে বলেছিÑ সবগুলো সংস্কারে হাত দেওয়ার খুব বেশি প্রয়োজন নেই বলে মনে করি। নির্বাচিত যে পার্লামেন্ট আসবে পার্লামেন্ট সেই সংস্কারের কাজগুলো করবে।

এই অন্তর্বতী সরকারের মূল দায়িত্ব হবেÑ নির্বাচনের জন্য একটি লেভেলপেইন্ট ফিল্ড তৈরি করা; সকলে যেন ভোট দিতে পারে এবং সকলে যাতে অংশগ্রহণ করতে পারে তারজন্য কাজ করা। আর ভোটের যে রিগিইন ব্যবস্থা যেগুলো আওয়ামী লীগ করে রেখেছে সেটাকে নির্মুল করে নিরপেক্ষ লোকজনকে নির্বাচনের জায়গাগুলোতে বসানো; বিচার বিভাগকে নিরপেক্ষ করা, প্রশাসনকে নিরপেক্ষ করা; নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার জন্য এগুলোই প্রধান কাজ।

সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা রিজেক্ট করেছি, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচন সম্ভব না।

জাতীয় ঐক্যবদ্ধ করার জন্য বিএনপির বার্তা কি এই প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, এই জাতিকে রক্ষা করতে হলে সবচেয়ে বেশি যেটা প্রয়োজন সেটা হলো ঐক্য; ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগ সরকার তারা যে কাজটা খুব সফল ভাবে করেছে সেটা হলো- জাতিকে বিভক্ত করে ফেলেছে। এই বিভক্তিটা দুর করে আমরা একটা ঐক্যবদ্ধ জাতি চাই। মতামত ভিন্ন থাকতে পারে একটা গণতান্ত্রিক সমাজে, ব্যবস্থায় একেক জন একেক রাজনৈতিক মত থাকবে; কিন্তু ঐক্যটা থাকবে কতগুলো মৌলিক বিষয়ে, একটা হলো- বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বার্বভৌমত্বের বিষয়ে, আরেকটা হচ্ছে গণতন্ত্রের বিষয়ে, দেশের মানুষের অধিকারের বিষয়ে, এগুলো হচ্ছে মৌলিক বিষয় এখানে ঐক্য থাকতে হবে।

ফখরুল বলেন, এই ঐক্যের বিষয়ে আমরা চেষ্টা করে, সফলও হয়েছি। চূড়ান্ত পর্যায়ে আমরা ৬৩টি রাজনৈতিক দল যুগপথ আন্দোলন করেছি; ডান-বাম মধ্য সবগুলোকে একত্রে নিয়ে; সেদিক থেকে আমরা বলব অনেকটা কাজ হয়েছে। চূড়ান্ত অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বিজয় অর্জন হয়েছে।

এসময় ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীন, অর্থ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম শরিফসহ জেলা ও উপজেলা বিএনপি এবং সহযোগি সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version