-->

হরিপুর-চিলমারী তিস্তা সেতুর দ্বার উন্মোচন হচ্ছে জুনে

গাইবান্ধা প্রতিনিধি
হরিপুর-চিলমারী তিস্তা সেতুর দ্বার উন্মোচন হচ্ছে জুনে

উত্তরের দুই জেলা গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম। পাশাপাশি এই দুই জেলা হলেও সেতু না থাকায় অতি দ্রুত যাওয়া যেত না জেলা দুটিতে। কিন্তু আর বিভাগীয় শহর বা পানি পথ দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হবে না এই দুই জেলার বাসিন্দাদের। তাই দীর্ঘদিনের স্বপ্ন তিস্তা সেতু এখন বাস্তবরূপ নিয়েছে। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে হরিপুর থেকে কুড়িগ্রামের চিলমারী পর্যন্ত সেতুটির অবকাঠামোর কাজ এখন শেষ। কুড়িগ্রাম অংশের সংযোগ সড়ক, সেতুর লাইটিং, কাপেটিংসহ শেষ পর্যায়ের কাজ যতই শেষ হচ্ছে, ততই আশায় বুক বাঁধছে দুই জেলার লাখো মানুষের।

গাইবান্ধা এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ অংশের হরিপুর থেকে কুড়িগ্রামের চিলমারী পর্যন্ত তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত হচ্ছে সেতু। এলজিইডির মাধ্যমে বাস্তবায়িত দেশের প্রথম দীর্ঘতম সেতু হতে যাচ্ছে তিস্তা সেতু। সেতুটির দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৪৯০ মিটার। সেতুটিতে বসানো হয়েছে ৩১টি স্প্যান। দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে দুই পাড়ের মানুষের স্বপ্নের সেতুর বাকি অংশের কাজ।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এ সেতু চালু হলে যেমন তারা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবেন, তেমনি নদী ভাঙন থেকেও রক্ষা করবে তিস্তা পারের মানুষদের। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শেষ হলে কুড়িগ্রাম সদর, উলিপুর, নাগেশ্বরী, ভুরাঙ্গামারী, চিলমারী থেকে সড়কপথে ঢাকার দূরত্ব কমে আসবে প্রায় ১৩৫ কিলোমিটার। দূরত্ব কমবে বিভাগীয় শহর রংপুরেরও। পাল্টে যাবে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনমানের ধারা, ঘটবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন।

হরিপুর তিস্তা পাড়ের বাসিন্দা ছাইদার মিয়া বলেন, কুড়িগ্রাম যেতে বা ওপার থেকে এপারে আসতে নৌকায় ২ ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে। আবার সিরিয়ালের জন্য বসে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কিন্তু সেতু চালু হলে ১০ মিনিটে ওপার থেকে এপারে আসা যাওয়া করা যাবে। এতে টাকা ও সময় কমবে কয়েকগুণ।

উজান বেচাগাড়ী এলাকার সোহেল মিয়া বলেন, হঠাৎ করে একজন অসুস্থ্য রোগীকে জরুরীভাবে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারিনা। কাঁধে করে বাড়ী থেকে নদীর ঘাট পর্যন্ত আনতে হয়, অনেক সময় নৌকা পেতে দেরী হয়, নৌকায় কারে ওপার পৌছার আগেই রোগী মারা যায়, এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে। চিকিৎসার জন্য এ সেতুটি অনেক কাজে আসবে বেঁচে যাবে অনেক মানুষের প্রাণ।

স্থানীয় কাসেম মুন্সি বলেন, আমরা দুপাড়ের মানুষেরা এখন অপেক্ষা আছি, কবে নাগাদ খুলে দেয়া হবে এই সেতু। সেতুর কাজ শেষ হওয়ায় দুপাড়ে হাট-বাজারগুলো ইতিমধ্যে পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। আমি নিজেও চিন্তা করছি যে এখানে একটা মুদি দোকান দিবো। তিস্তা পাড়ে প্রতিদিনেই দর্শনার্থীরা ভিড় জমাতে শুরু করছেন। আশা করছি ব্যবসা ভালো হবে এখানে।

এ বিষয়ে গাইবান্ধা এলজিইডি'র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ছাবিউল ইসলাম ভোরের আকাশকে বলেন, সেতুর উভয় প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার এলাকা স্থায়ীভাবে নদী শাসন করা হচ্ছে। সেতুটির উভয় পাশে ৮৬ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুটি চালু হলে দু’পাড়ের মানুষের যোগাযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে সৃষ্টি হবে ব্যাপক কর্মস্থান। আশা করা যাচ্ছে ২০২৫ সালের জুনে সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারি সেতুটির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হলেও নানা জটিলতা কাটিয়ে ২০২১ সালে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সেতুটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৩০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version