-->

জৈন্তাপুরে ইউএনও’র গণশুনানি, কমছে জনদুর্ভোগ

জৈন্তাপুর( সিলেট) প্রতিনিধি::
জৈন্তাপুরে ইউএনও’র গণশুনানি, কমছে জনদুর্ভোগ

সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণীপেশার নাগরিকদের বিভিন্ন সমস্যা ও করণীয় বিষয়ে নিয়মিত গণশুনানি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বুধবার ( ২০শে নভেম্বর) বেলা ১১ টায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে গণশুনানির কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) উম্মে সালিক রুমাইয়া'র গণশুনানির মাধ্যমে মিটছে জনদুর্ভোগ ও ভোগান্তি। সমাধান হচ্ছে পুরনো সমস্যা, জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে প্রশাসনের এমন কার্যক্রম। এতে প্রশাসনের প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এতে উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ তাদের বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত কিংবা সামাজিক বিভিন্ন সমস্যাদি নিয়ে লিখিত বা সরাসরি মৌখিক ভাবে উপস্থাপন করার সুযোগ পাচ্ছেন।

গণশুনানির আয়োজন ও বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে ভুক্তভোগীদের কথা শুনেন জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। প্রতিদিন গুরুত্বপূর্ণ কাজের ফাঁকে নিজ দপ্তরে বসে গণশুনানির কার্যক্রম পরিচালিত করেন তিনি।

গণশুনানিতে অংশ নেয়া বিভিন্ন শ্রেনীপেশার মানুষের সমস্যাদি যার মধ্যে অন্যতম ভূমি সংক্রান্ত, বিশুদ্ধ পানি ও পয়নিষ্কাশন, জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম নিবন্ধন সংশোধন সংক্রান্ত, হতদরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের সহায়তা সংক্রান্ত, কৃষি, প্রানী সম্পদ বিষয়ক, সরকারি আবাসনে থাকা মানুষের সমস্যাদি, কমিউনিটি চিকিৎসা সংক্রান্ত, পরিবেশ ও নদী ভাঙন বিষয়ে, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের দাবী সংক্রান্ত ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে গণশুনানিতে তথ্যাদি তুলে ধরা হয়।

এ সময় নিজপাট ইউনিয়নের নাগরিক সত্তোর্ধ এক বৃদ্ধা তার নিজের ভূমি সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে শুনানিতে সমস্যা উপস্থাপন করেন। একইদিনে জৈন্তাপুর ইউনিয়নের মোকামবাড়ী এলাকার কয়েকজন ব্যাক্তি স্থানীয় পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে একটি আবেদন নিয়ে আসেন। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শুনানীতে উপস্থিত থাকা সহকারী কমিশনার (ভুমি) মিজ ফারজানা আক্তার লাবনীকে অভিযোগ দুইটি তদন্ত সাপেক্ষে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশনা প্রদান করেন।

এছাড়া উপজেলার একটি মাধ্যমিক স্কুলের ৮/১০ জন পরীক্ষার্থী তাদের স্কুলের সুপেয় পানি ও শৌচাগার সমস্যা নিয়ে মৌখিক ভাবে নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ তুলে ধরলে তিনি খুব শীঘ্রই স্কুল পরিদর্শন করার কথা জানান। সেই সাথে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহনের নির্দেশনা প্রদান করেন।

চলিত বছরের (২১ মার্চ) উম্মে সালিক রুমাইয়া উপজেলায় নির্বাহী অফিসার পদে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে তার প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা ও কর্মস্পৃহা সীমান্তবর্তী উপজেলার জনপদকে বিকশিত করার জন্য সহায়ক হিসেবে কাজ করে চলেছেন। ইতোমধ্যে তার উদ্যোগে জৈন্তাপুর উপজেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা বান্ধব পরিবেশের উন্নয়ন, স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়ন, বৃক্ষ রোপন অভিযান বেগবান করা, সরকার গৃহীত কার্যক্রমে শৃংখলা নিশ্চিত করা, সরকারি অর্থের অপচয় রোধ, ক্রীড়াঙ্গনে গতিশীলতা আনয়ন, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড জোরদার করা, সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নে যৌক্তিক অগ্রাধিকার বিবেচনা, সরকারি দপ্তর সমূহের মধ্যে অধিকতর সমন্বয়সাধন, প্রতি বুধবার গণশুনানি সহ সর্বসাধারণের জন্য সরকারি সেবা প্রাপ্তির জন্য যপথ সুগম হয়েছে।

জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) উম্মে সালিক রুমাইয়া বলেন সেবা গ্রহীতাদের সদিচ্ছার কারণে সহজেই সমস্যাগুলো সমাধান হয়। সমাজের সম্প্রীতি বজায় রাখতে এবং যেকোনো সমস্যা নিরসনে ও দুর্ভোগ লাঘবে উপজেলা প্রশাসন সর্বদা সজাগ রয়েছে এবং কাজ করে যাচ্ছে।

কেবিনেটের নির্দেশনা মোতাবেক প্রতি বুধবার গণশুনানির আয়োজন করতে নির্দেশনা রয়েছে। তবে জৈন্তাপুরে প্রতিদিন সংক্ষিপ্ত পরিসরে হলেও গণশুনানি অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, জনগনের দোরগড়ায় সরকারি সেবা পৌঁছে দেওয়া ও নাগরিক সেবা প্রদানের মান ও গতি বৃদ্ধির লক্ষ্যে মুলত এই গণশুনানি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শুধু সেবা প্রত্যাশিরাই নয় বরং সরকারি সকল সেবা সম্পর্কে ধারণা নিতে ও এর সুফল পেতে সাধারণ মানুষ এই গণশুনানিতে প্রতি বুধবার অংশ নিতে পারবেন।

যেহেতু গণশুনানির মাধ্যমে বিভিন্ন সমস্যাদি স্বল্প সময়ের মধ্যে সমাধানে কাজ করছে প্রশাসন তাই এর সুফল সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে ধারণা পৌঁছে দিতে উপজেলার সর্বস্তরের জনগণ ও গণমাধ্যম কর্মীদের কাজ করার আহবান জানান জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালিক রুমাইয়া।

জানা যায়, সপ্তাহের মধ্যে কোন একদিন সেবাপ্রত্যাশী স্থানীয় নাগরিকদের সমস্যা, অভিযোগ ও আপত্তি শুনতে গণশুনানি কার্যক্রম পরিচালনা করতে ইউএনওদের মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা রয়েছে। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে সালিক রুমাইয়া কাজ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। সপ্তাহের প্রতি বুধবার তিনি তার নিজ অফিস কক্ষে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এই গণশুনানি পরিচালনা করে থাকেন। উপজেলার শত শত মানুষের সমস্যা, অভিযোগ ও আপত্তি গণশুনানিতে শুনে তা দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধানের চেষ্টা করেন। তার এই গণশুনানি দিনদিন স্থানীয় নাগরিকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

গণশুনানি পরিচালনার সময় বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তাদের সহায়তায় দ্রুত সেবাপ্রত্যাশী মানুষদের বেশির ভাগের সমস্যার সমাধান তাৎক্ষণিক করে থাকেন। কিছু সমস্যার সমাধান ডকুমেন্ট নির্ভর হওয়ায় সেগুলো সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তাদের দ্রুত সমাধানের নির্দেশনা প্রদান করে থাকেন।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version