গেল ৫ আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে দক্ষিণ চট্টগ্রামের চার উপজেলায় গবাদি পশু লুট ও চুরির ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। পটিয়া, আনোয়ারা, বোয়ালখালী ও কর্ণফুলী- এই চার উপজেলায় শতাধিক খামারির অন্তত পৌনে দুইশ গরু-ছাগল লুট ও চুরির ঘটনা ঘটেছে। এসব পশুর আনুমানিক মূল্য পৌনে তিন কোটি টাকার বেশি। তবে এরমধ্যে অন্তত ১৬০টি পশু খোয়া গেছে পটিয়া ও আনোয়ারা উপজেলায়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৮০ থেকে ৯০ জন খামারি। তাদের প্রায় সবাই প্রান্তিক খামারি। এরমধ্যে আবার গভীর রাতে গরু লুট ঠেকানোর চেষ্টার সময় সন্ত্রাসীদের গুলিতে খামারি আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। একের পর এক বাণিজ্যিক খামার এবং প্রান্তিক খামারিদের পশু লুটের ঘটনায় অনেকে নিঃস্ব হয়ে গেলেও অনেকটাই নীরব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। থানা পর্যায়ে পুলিশের সহযোগিতা না পেয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে নিয়ে পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হয়েছেন খামারিরা।
খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৫ আগস্টের পর সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। চার মাস হতে চললেও এখনও মাঠ পর্যায়ে পুরোপুরি সক্রিয় হয়নি পুলিশ। সেই সুযোগে সক্রিয় হয়ে উঠেছে লুটেরা ও চোরচক্রের সদস্যরা। গভীর রাতে হানা দিয়ে চুরি ও খামারিদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে লুট করে নিয়ে যাচ্ছে পশু। গেল সাড়ে তিন মাসে পটিয়া থেকে প্রায় ১০০টি গরু, আনোয়ারা থেকে ৬০টি, বোয়ালখালী ও কর্ণফুলী থেকে ৮ টি করে গরু চুরি ও লুট হয়েছে। এরমধ্যে কেবল অক্টোবরেই আনোয়ারায় ২৫ টি এবং নভেম্বরে পটিয়ায় অন্তত ৪০ টি গরু লুট হয়েছে। এসব পশুর মধ্যে গেল ১২ নভেম্বর সর্বোচ্চ পটিয়ার হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নে চৌধুরী ডেইরি ফার্ম থেকে প্রায় ৪৫ লাখ টাকার ফ্রিজিয়ান জাতের ১৯টি গরু লুট হয়।
একের পর এক গরু লুটের বিষয়ে পটিয়া ডেইরি ফার্মার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবছার উদ্দিন মো. রাসেল বলেন, একের পর এক এসব ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে। চুরি বা লুটের সময় পুলিশকে পাওয়া যায় না। মামলা বা ডায়েরি করেও প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। বলতে গেলে পুলিশ কোনো ধরনের সহযোগিতাই করছে না। তাই আমরা এসপি সাহেবের কাছে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছি, এখন দেখা যাক কী হয়। গরু লুট করে নিয়ে যাওয়ায় অনেক খামারিই এখন নিঃস্ব হয়ে গেছে।
গবাদি পশু লুটের এসব ঘটনার বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আলমগীর বলেন, আমরা খামারিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। কীভাবে এটা বন্ধ করা যায় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছি। ভুক্তভোগী খামারিরা দাবি করছেন স্থানীয় পুলিশ তাদের কোনো ধরনের সহযোগিতা করছে না। তাই গরু লুটের বিষয়ে খামারিদের নিয়ে এসপি সাহেবের সঙ্গে দেখা করে সমাধান চেয়েছি। তিনি পাঁচ দিনের মধ্যে সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।
এই প্রসঙ্গে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গণসংযোগ) রাসেল বলেন, পুলিশ বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে কাজ করছে। থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশও কাজ করছে।
পুলিশের কাজের পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ১৯ টি গরু চুরির ঘটনায় নাম্বার প্লেটহীন গরুবোঝাই ট্রাকটি কিন্তু শাহ আমানত সেতু দিয়েই পার হয়েছে। সেখানে দায়িত্বরত টোলসংগ্রহকারী চাইলে পুলিশকে জানাতে পারতেন। আবার গরুর খামারগুলোতে নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো যেতে পারে, সিসিটিভির আওতায় নিয়ে আসা যেতে পারে। স্থানীয়ভাবে সংগঠিত হয়ে চুরি বা লুটের এসব ঘটনা প্রতিরোধ করা যেতে পারে। একটি থানায় যে ক’জন পুলিশ থাকেন, তারা চাইলেই পুরো এলাকা পাহারা দিতে পারবেন না। সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন হলে এসব ঘটনা বন্ধ করা সম্ভব।
ভোরের আকাশ/মি
মন্তব্য