-->

সিরাজগঞ্জ-বগুড়া রেলপথ, শুরু ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
সিরাজগঞ্জ-বগুড়া রেলপথ, শুরু ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া

সিরাজগঞ্জ-বগুড়া রেলপথ নির্মানের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই রেলপথ নির্মান কাজ শুরু হলে দিনাজপুর, রংপুর, লালমনিরহাট এবং বগুড়া থেকে ঢাকার দুরত্ব ১১২ কিলোমিটার কমে আসবে। এতে সময় সাশ্রয় হবে প্রায় দুই ঘন্টা। ইতিমধ্যে সিরাজগঞ্জ-বগুড়া রেলপথ নির্মান প্রকল্পে সিরাজগঞ্জ প্রান্তে ভূমি অধিগ্রহন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অন্তবর্তী সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে এই পথে যাতায়াত কারীরা।

সিরাজগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষের দাবী সিরাজগঞ্জ-বগুড়া রেলপথ নির্মান কাজ শেষ হলে সিরাজগঞ্জ-বগুড়া মানুষের সহজ যাতায়াত নিশ্চিত সহ দিনাজপুর, রংপুর, লালমনিরহাট ও বগুড়ার সাথে ঢাকার দুরত্ব অনেক কমে আসবে। এতে সাশ্রয় হবে সময়। অল্প খরচে মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পপণ্য সহ কৃষিপণ্য সারা দেশে পরিবহন করা যাবে। গতিশীল ও শক্তিশালী হবে এসব জেলার অর্থনীতি।

এবিষয়ে সিরাজগঞ্জ-বগুড়া রেলপথ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো: মনিরুল ইসলাম ফিরোজী ভোরের আকাশকে বলেন, নতুন রেলপথ হবে এজন্য প্রথমে জমির প্রয়োজন।রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের জমি অধিগ্রহনের কাজ চলমান। চারধারা শেষ হয়েছে। চার ধারার পর যৌথ তদন্ত হয় ডিসি অফিসে, সেটাও শেষ হয়েছে। ভুমি অধিগ্রহনের প্রাথমিক কাজ শেষে অনুমোদনের জন্য ভূমি মন্ত্রনালযে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হয়ে আসলে ৭ ধারার নোটিশ জারি করে জমির মালিকদের টাকা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে। পরে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে জমি বুঝিয়ে দেওয়া হবে। এই মুহুর্তে জমি অধিগ্রহনের কাজ ৬০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে।

প্রকল্প পরিচালক আরো বলেন, ২০২৬ সালে রেলপথ নির্মান কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ হবে না। কারন এটি ভারতীয় প্রকল্প। সরকার পরিবর্তনের কারনে কিছুটা সমস্য হচ্ছে। যার ফলে পিছিয়ে যাচ্ছে। তবে সরকার চেষ্টা করছে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে।

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের সিরাজগঞ্জ প্রান্তে জমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। জমি অধিগ্রহনের জন্য ইতিমধ্যে ৪ ধারার নোটিশ জারি করা হয়েছে। চুড়ান্ত অনুমোদনের জন্য তালিকা মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হয়ে আসলে ৭ ধারার নোটিশ জারি করে জমি অধিগ্রহন কার্যক্রম শুরু হবে। সিরাজগঞ্জ সদর, কামারখন্দ ও রায়গঞ্জ উপজেলার ৩৯টি মৌজার জমি অধিগ্রহন করা হবে।

সিরাজগঞ্জ-বগুড়া রেলপথ প্রকল্প সুত্রে জানাযায়, এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৯৪৪ একর জমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রথমে লুয়েল গেজ লাইন পরবর্তীতে ডাবল লাইনে ট্রেন চলাচল করবে। রেলপথের মোট ৯টি স্টেশন তৈরী করা হবে। ২০২৬ সালে এর নির্মান কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এই প্রকল্পের জন্য প্রাথমিক সম্ভব্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা।

তবে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ প্রকল্পকে ঘিরে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।

প্রকল্প সূত্রে আরো জানা যায়, প্রথমে ডুয়েল গেজ লাইন এবং পরবর্তীতে ডাবল লাইনে ট্রেন চলাচল করবে রেলপথে মোট ৯টি স্টেশন তৈরি করা হবে। এগুলো হচ্ছে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী, রায়পুরের পাশে একটি স্টেশন, নলকা কৃঞ্চদিয়া, চান্দাইকোনা, রায়গঞ্জ, বগুড়া জেলার ছোনকা, শেরপুর, আড়িয়া বাজার, রাণিরহাট। এর মধ্যে মনসুর আলী স্টেশনে জংশনসহ মোট তিনটি জংশন তৈরি হবে।সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের দাবী, বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণ কাজ শেষ হলে বগুড়া ও সিরাজগঞ্জের মানুষের সহজ যাতায়াত নিশ্চিতসহ রাজধানীর সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর দূরত্ব কমে আসবে। অল্প খরচে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপণ্যসহ কৃষিপণ্য সারা দেশে পরিবহন করা যাবে। গতিশীল ও শক্তিশালী হবে এসব জেলার গ্রামীণ অর্থনীতি।

বাংলাদেশ সরকার ও ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) এর যৌথ অর্থায়নে এই রেলপথ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। ২০২৬ সালে এর নির্মাণকাজ শেষ হবে। এই প্রকল্পের জন্য প্রাথমিক সম্ভব্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা।

আমরা সিরাজগঞ্জবাসীর ব্যানারে ট্রেন দিয়ে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু ভোরের আকাশকে বলেন, ২০০৫ সালে বিএনপি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকাকালে রেলপথ নির্মানে পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এডিবির অর্থায়নে তখন প্রাক সমীক্ষাও হয়েছিল। পরে অর্থের অভাবে প্রকল্পটি আর এগোয়নি। ২০১৭ সালে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে উদ্যেগ নেওয়া হয়। সিরাজগঞ্জবাসীর চাওয়া বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথটি যেন সিরাজগঞ্জ শহর হয়ে ঢাকার অভিমুখে যায়। রেলপথটি চালু হলে বগুড়া ও সিরাজগঞ্জের মানুষের সহজ যাতায়াত নিশ্চিতসহ রাজধানীর সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর দূরত্ব কমে আসবে। অল্প খরচে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপণ্যসহ কৃষিপণ্য সারা দেশে পরিবহন করা যাবে। গতিশীল ও শক্তিশালী হবে এসব জেলার গ্রামীণ অর্থনীতি।

সিরাজগঞ্জ স্বর্থরক্ষা সংগ্রাম কমিটির নেতা ও জেলা বাসদের সমন্বয়ক নব কুমার কর্মকার ভোরের আকাশকে বলেন, বিগত সরকারের আমলে আমরা এই রেল প্রকল্প নিয়ে দীর্ঘ আন্দোলন করি। সরকার সিরাজগঞ্জ শহরের মানুষের সাথে বেইমানী করেছে। সিরাজগঞ্জ শহর হয়ে বগুড়ায় রেল লাইন যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু সেই রেললাইন যাচ্ছে শহরের বাইরে কালিয়া হরিপুর হয়ে। আমরা সেই সময় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। এখন আমরা মনে করি যেহেতু স্বৈরাচারি সরকারের পতন হয়েছে তাই সিরাজগঞ্জ শহর স্পর্শ করে বগুড়ায় রেল লাইন দিতে হবে। এবং অতিদ্রুত এটির বাস্তবায়ন চাই।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version