নৃ-জনগোষ্ঠী গারোদের অন্যতম প্রধান উৎসব ‘‘ওয়ানগালা’’। নতুন ফসল ঘরে তোলাকে কেন্দ্র করে নবান্ন উৎসব হিসেবে এ ওয়ানগালা উৎসব পালন করা হয়। এ বছর শনিবার ও আজ রবিবার শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার মরিয়মনগর সাধু জর্জের ধর্মপল্লীতে অনুষ্ঠিত হয় ওয়ানগালা উৎসব। এতে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে অসংখ্য খৃষ্টভক্ত এবং গারাগানজিং, কতুচ, রুগা, মমিন, বাবিল, দোয়াল, মাতচি, মিগাম, চিবক, আচদক ও আরেং নামে ১২টি গোত্রের গারো সম্প্রদায়ের শত শত লোক ওয়ানগালা উৎসবে যুক্ত হন। গারো সম্প্রদায়ের কয়েকশত মানুষ দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করে বিশেষ প্রার্থনায় অংশ নেন।
মরিয়মনগর সাধু জর্জের ধর্মপল্লীর আওতায় জেলার শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতবাড়ী উপজেলা এবং পাশ্ববর্তী জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার গারো সমাজের ৪৭টি গ্রাম রয়েছে। ওইসব গ্রামের প্রায় ২২ হাজার খৃষ্টান ধর্মাবলম্বী গারো সম্প্রদায়ের লোকজনের বসবাস।
আজ রবিবার মরিয়মনগর সাধূ জর্জের ধর্মপল্লীতে ওয়ানগালা উৎসবের ধর্মীয় ও সামাজিক আনুষ্ঠানিকতা হয়েছে। এর আগের দিন শনিবার ময়িমনগর ধর্মপল্লী উচ্চ বিদ্যালয় চত্বরে দিনব্যাপী উৎসব ঘিরে ধর্মপল্লীর পাশে গারোদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক ও শিশুদের নানা রকমের খেলনা নিয়ে এক জমজমাট মেলা বসে। মেলায় গারোদের ঐতিহ্যবাহী রান্না ও খাবারের প্রদর্শনী এবং গারোদের ঐতিহ্যবাহী রান্না ও খাবারের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। এতে গারোদের নিজস্ব ভাষায় গান ও নৃত্য পরিবেশনা হয়। দিনব্যাপী অনুষ্ঠান শেষে র্যাফেল ড্র ও বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
ঝিনাইগাতী ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের (টিডব্লিওএ) সাধারণ সম্পাদক অসীম ম্রং জানান, গারো জনগোষ্ঠীর আধ্যাত্মিক ও মূল্যবোধকে আরও সমৃদ্ধ এবং ঐতিহ্যবাহী গারো কৃষ্টি ও সংস্কৃতি চর্চায় নতুন প্রজন্মকে উৎসাহিত করা হয় এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। যাতে বর্তমান প্রজন্ম এখান থেকে বুঝতে ও শিখতে পারে। ওয়ানগালা উৎসবটি গারো সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবও বটে।
মরিয়মনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক অঞ্জন আরেং বলেন, “ওয়ানগালা উৎসব আয়োজনের মূল লক্ষ্য হলো লুপ্তপ্রায় গারো জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির চর্চায় উৎসাহিত করা এবং ঐতিহ্যবাহী এই সংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্ম ও বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর নিকট তুলে ধরা। যাতে আমাদের নতুন প্রজন্ম এই সংস্কৃতি চর্চা ও সংরক্ষণ করতে পারে।”
ভোরের আকাশ/ সু
মন্তব্য