-->

এনায়েতপুরে ১৫ পুলিশ হত্যা মামলায় যুবলীগ নেতাসহ মোট গ্রেফতার ৫

মোঃ মাসুদ রানা, সিরাজগঞ্জ
এনায়েতপুরে ১৫ পুলিশ হত্যা মামলায় যুবলীগ নেতাসহ মোট গ্রেফতার ৫

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে গত ৪ আগস্ট সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, অস্ত্র ও গুলি লুট এবং ১৫ পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের করার পরে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এখন পযন্ত মোট ৫ জন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এনায়েতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রওশন ইয়াজদানী এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে গত ৪ আগষ্ট এনায়েতপুর থানায় ঢুকে হামলা ভাঙচুর ও ১৫ পুলিশ সদস্যকে হত্যার ঘটনায় গত ২৫ আগস্ট রাতে এনায়েতপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল মালেক বাদী হয়ে চারজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ছয় হাজার জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এরপর থেকে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে মোট পাঁচ জন আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতে মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। এবং বাকি আসামিদের গ্রেফতার করতে আমাদের গ্রেফতারি অভিযান চলমান আছে।

গ্রেফতারকৃত আসামীরা হলেন, এনায়েতপুর মন্ডলপাড়া গ্রামের মৃত সন্তেশ আলীর ছেলে যুবলীগ নেতা আইয়ুব আলী (৪৮)। বন্যা গ্রামের মোঃ সোহরাব আলীর ছেলে আঃ লীগ নেতা আশরাফুল আলম (৩৮)। আজুগড়া গ্রামের মৃত খুদু প্রামনিকের ছেলে মোঃ আব্দুল মান্নান (৫৫) ও আব্দুল মুন্নাফ (৫৫) ও খামারগ্রাম গ্রামের মৃত আব্দুস সামাদ এর ছেলে মোঃ আলামিন (৩৬)।

এই হত্যা মামলায় এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আহমদ মোস্তফা খান বাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, শাহজাদপুর উপজেলার খুকনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মুল্লুক চাঁন, বেলকুচি উপজেলার ভাঙ্গবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম ভূইয়ার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।

মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আহমদ মোস্তফা খান বাচ্চু বিভিন্ন সময়ে অবৈধ দাবি নিয়ে থানায় আসতেন। দাবি মেনে না নেওয়ায় এনায়েতপুর থানার পুলিশের ওপর তার ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তারকৃত এক আসামিকে তাঁর দাবি মতো ছেড়ে না দেওয়ায় এবং ওই আসামির বিরুদ্ধে মামলা নেওয়ায় তাঁর নেতৃত্বে ৪৫০-৫০০ জন অজ্ঞাত দুষ্কৃতকারী থানা ঘেরাও করে এবং ওই সময়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাকের অপসারণের দাবি করে। তা মেনে না নেওয়ায় তিনি এনায়েতপুর থানা-পুলিশের ক্ষতি করার সুযোগ খুঁজতে থাকেন।

এ অবস্থায় গত ৪ আগস্ট দুপুর ১২টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা এনায়েতপুর থানার সামনে সমবেত হন। এ সময় থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক হ্যান্ড মাইক দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার উদ্দেশে বলেন, এই থানা আপনাদের সাধারণ জনগণের। আপনারা থানার কোনো ক্ষয়ক্ষতি করবেন না। ওসির কথায় ছাত্র-জনতা চলে যায়। পরে ১ নম্বর আসামি এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আহমদ মোস্তফা খান বাচ্চুর নেতৃত্বে এজাহারনামীয় আসামিসহ ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার জন দুষ্কৃতকারী দলবদ্ধ হয়ে হাঁসুয়া, দা, লোহার রড, লাঠি, পেট্রলবোমা ও অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে থানায় হামলা চালায়। এ সময় পুলিশ আত্মরক্ষায় টিয়ারশেল নিক্ষেপ করলে তারা পুলিশের কোয়ার্টার ও ওসির বাসভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুন দেখে পুলিশ সদস্যরা আতঙ্কিত হয়ে পড়লে এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আহমদ মোস্তফা খান বাচ্চুর নেতৃত্বে আসামিরা থানা কম্পাউন্ডে এসআই তহছেনুজ্জামান, এএসআই ওবায়দুর রহমান, কনস্টেবল আরিফুল আজম, রবিউল আলম শাহ, হাফিজুল ইসলাম, শাহিন, রিয়াজুল ইসলামকে পিটিয়ে, কুপিয়ে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংস ভাবে হত্যা করে। এ সময় থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক, এসআই আনিছুর রহমান, এসআই রহিজ উদ্দিন খান, এসআই প্রনবেশ কুমার বিশ্বাস, কনস্টেবল আব্দুল সালেক, কনস্টেবল হানিফ আলী থানার পাশে বাবু মিয়ার বাড়িতে আশ্রয় নেন। আসামিরা তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে যায়। সেখানে গিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে তাদেরও। এ সময় নারী কনস্টেবল রেহেনা পারভীনকে মারধর করে টানা হেচড়া করে শ্লীলতাহানি করে। পরবর্তীতে বিকেলে সেনাবাহিনীর একটি দল থানা পৌঁছে নিহত পুলিশ সদস্যদের মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।

আসামিরা একটি ডাবল কেবিন ও একটি সিঙ্গেল কেবিন পিকআপ ভ্যান, পুলিশ সদস্যদের ১৫টি মোটরসাইকেল ও একটি ট্রাক, বিভিন্ন সময় আটক করা নতুর পুরাতন ১২টি মোটরসাইকেল ও থানার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নথি, আসবাপত্র, কম্পিউটার, ওয়াকিটকি পুড়িয়ে দেয়। এতে এনায়েতপুর থানায় চার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

মন্তব্য

Beta version